বাংলারজমিন
উত্তরাঞ্চলে ডুবছে সড়ক, বাড়িঘর আশ্রয় মিলছে না বাঁধেও
বাংলারজমিন ডেস্ক
১৯ জুলাই ২০১৯, শুক্রবার, ৯:২৮ পূর্বাহ্ন
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যাপরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। বন্যার পানিতে প্রতিদিনই ডুবছে সড়ক, মহাসড়ক, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বানভাসি মানুষের আশ্রয় মিলছে না বাঁধেও। গবাদিপশু নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বন্যাদুর্গতরা। ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে:
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, আসছে পানি, ঘুরছে পানি, বাড়ছে পানি, ভাসছে চিলমারী। দুঃখ আর কষ্টের পাল্লা হচ্ছে ভারি। মিলছে না অনেকের আশ্রয়। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুড়িগ্রামের চিলমারীর বানভাসিদের এখন আশ্রয় মিলছে না বাঁধেও। ক্ষমতা বা টাকা ছাড়া সেখানে ঘর তুলতে বাধা দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেকেই খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে বুরুজের পাড়া ও রাজারঘাট সড়ক বিছিন্ন হয়ে পড়েছে মানুষের চলাচল। জানা গেছে, বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত ও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের পার্শ্ববর্তী মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় ডুবে যাওয়া মানুষজনও আশ্রয় নিতে ছুটে যাচ্ছেন বাঁধে। আশায় আছেন ত্রাণের। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার্তরা উপায় না পেয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। বাড়ির আসবাবপত্র প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বাঁধেও জায়গা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে দুর্গতরা। উপজেলার কঁাঁচকোল বুরুজের পাড়া সড়ক ও রাজারঘাট ব্রিজের দু’পাশ ধসে যাওয়ায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াত বন্ধসহ উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা শহরের প্রতিটি সড়ক গেছে পানিতে তলিয়ে। ফলে সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে মানুষজনের। ব্রহ্মপুত্রের পানি কিছুটা কমলেও তা এখন বিপদসীমার ১২৮ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত)। চলতি বন্যায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে। দিন দিন বাড়ছে বানভাসি মানুষের সংখ্যা। নদীগর্ভে ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তু হারা হয়ে পড়ছে ব্রহ্মপুত্রের তীরবাসী। বাঁধে এসেও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন এসব মানুষ স্থানীয় প্রভাবশালীদের। অনেক পরিবারকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে। অনেকেই নিজের বাড়ির কোমর পানিতেই অবস্থান করছেন। এসব এলাকার বানভাসি মানুষ থাকার জায়গা না পাওয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বিশুদ্ধপানি এবং তীব্র জ্বালানি সংকটে দিন পার করছে।
সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার সাঘাটায় পানির প্রবল বেগে একের পর এক ব্রিজ-কালভার্ট ও সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। গতকাল ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে ৬ ঘণ্টার পানির মারাত্মক চাপে ৫টি ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে ভেসে গেছে। বোনারপাড়া-মহিমাগঞ্জ সড়কের বাটি রেল সড়ক সেতুসহ ৭টি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে ইউনিয়নগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১৫০ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বন্যা পরিস্থিতি। সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলওয়ে রুটের বাদিয়াখালিতে রেল লাইনের নিচে প্রায় ৭শ’ মিটার ভেঙে ভেসে গেছে। ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বুধবার ভোরে ভরতখালী পোড়াবাড়ি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই নতুন করে পদুমশহর, মুক্তিনগর, বোনারপাড়া ও কচুয়া ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বোনারপাড়া ও পদুমশহর ইউনিয়নের সব গ্রাম পানিতে তলিয়ে যেতে দেখা গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার। পদুমশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুজ্জামান স্বপন জানান, নৌকা নিয়ে পানিবন্দি বিপদগ্রস্ত পরিবারগুলোকে উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। গতকাল ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে ৬ ঘণ্টার মধ্যে বোনারপাড়া-ত্রিমোহনী সড়কের পল্টুরমোড় ব্রিজ, ভুতমারা সড়কের রেলগেট ব্রিজ, বাটি ব্রিজ, মহিমাগঞ্জ সড়কের রেল সড়ক সেতু, ওয়ারেছ চেয়ারম্যানের বাড়ির ব্রিজ ভেঙে ভেসে গেছে। মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে বোনারপাড়া-সান্তাহার রেল রুটের বাটি রেলওয়ের রেল ব্রিজ ও দেওয়ানতলা সড়ক সেতু।
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) থেকে জানান, ৪৪ হাজার ৭শ’ মানুষ পানিবন্দি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১ হাজার ১৮৩ পরিবার। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। গতকাল বন্যাকবলিত এলাকা ঘুড়ে দেখো গেছে, শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের সোনাইকাজী, উত্তর-দক্ষিণ রামপ্রসাদ, জোতিন্দ্র নারায়ন, রোশন শিমুলবাড়ী, চর-প্যাচাই, বড়ভিটা ইউনিয়নের চর-বড়লই, চর-বড়ভিটা, পূর্বধনিরাম, কুড়ির চর, পূর্বধনিরাম কাপুর চর, চর- মেকলি, ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি, খোচাবাড়ী, ফুলবাড়ী ইউনিয়নের চন্দ্রখানা হেলিপ্যাড মাঠ সংলগ্ন, নামা-বালাতারী, বুদারবান্নী, নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর- গোড়কমণ্ডল, খারুয়ার চর, আবাসন প্রকল্পসহ প্রায় ৪৪ হাজার ৭শ’ মানুষ পানিবন্দি। উপজেলা প্রশাসন এ পর্যন্ত ২৮ টন চাল বিতরণ করেছে। আরো ৩০ টন চালের চাহিদা জেলায় পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন উপজেলা প্রশাসন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরবরাহকৃত শুকনা খাবার চাল ও জরুরি ত্রাণ বিতরণ করা হয়। উপজেলা সদরে সড়ক যোগাযোগসহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. মাছুমা আরেফিন জানান, ২৮ টন চাল বিতরণ করেছি, আরো ৩০ টন চালের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, সরিষাবাড়ীতে বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। রেলসহ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তিন দিনের ব্যবধানে সরিষাবাড়ী পৌর এলাকাসহ সবকটি ইউনিয়নের প্রায় দেড় শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এলাকার লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ সব এলাকার ৫৫টি প্রথমিক বিদ্যালয় ও ২২টি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরজমিন জানা গেছে, গত দুই দিন বৃষ্টি না হলেও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা-ঝিনাইও সূবর্ণখালী নদীসহ খাল-বিলের পানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়ে মুহূর্তের মধ্যে নতুন করে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পৌর এলাকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি প্রবেশ করায় স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে। স্থানান্তর করা হয়েছে জরুরি বিভাগ। হাসপাতালের কর্মরত ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্ভোগে পড়েছে। প্রায় ৪ হাজার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন সরিষাবাড়ী খাদ্য গুদাম পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। রেল স্টেশন, আলহাজ, এআরএ, পপুলার, কেএইচবি জুট মিল পৌর এলাকার সর্বত্রই বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। সরিষাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সরিষাবাড়ীর সঙ্গে জেলাসহ সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রেল লাইনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার গতকাল চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ৩৭নং আপ মেইল ট্রেনটি সকাল ৯-১৫ মিনিটি ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য রেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার আব্দুর রাজ্জাক নিশ্চিত করেন।
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরমধুয়া গ্রামের ২০টি পরিবারের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর মেঘনা নদীর গ্রাসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সহায় সম্বল হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারগুলো। হুমকির মুখে আরো শতাধিক বাড়িঘর। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল চরমধুয়া ইউনিয়ন। চারদিকে মেঘনা নদীবেষ্টিত ইউনিয়নটি এখন অস্তিত্ব সংকটে। অব্যাহত নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে দুই শতাধিক পরিবার ও তাদের বাড়িঘরসহ ফসলি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ২০টি পরিবারের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে আরো শতাধিক বাড়িঘর।
মঙ্গলবার বিকালেও যেখানে ছিল পাকা বাড়ি ও বাচ্চাদের খেলার উঠোন, বুধবার সকালে সেখানেই অথৈই পানিতে ভাসছে বড় বড় নৌকা। সহায় সম্বল হারিয়ে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে গাছতলায়। জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
চরমধুয়া হাইস্কুলের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও সমাজসেবক আহসান শিকদার জানান, নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করতে সরকারের সহযোগিতা চাইলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সালাম শিকদার।
কালিহাতী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, কালিহাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে তৃতীয় শ্রেণির তানজিলা ও প্রথম শ্রেণির লিমা নামে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টার দিকে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের চর দুর্গাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শিশু তানজিলা ও লিমা চর দুর্গাপুর গ্রামের আবু সাইদের মেয়ে। উপজেলা দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রামাণিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বাড়ির পাশে বন্যার পানিতে দুই বোন খেলার সময় স্রোতে ভেসে যায়। অনেক খোঁজার পর দুপুর ২টার দিকে বাড়ির পাশে দুই বোনের লাশ পাওয়া যায়।
নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর মান্দায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে আত্রাই নদীর ডান তীরে উপজেলার কশব ইউনিয়নের চকবালু নামকস্থানে বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে খেতের ফসল। বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ঘরের আসবাবপত্র ও মালামাল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে দুর্গত এলাকার মানুষ। বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে আত্রাই ও পূর্বমান্দার সবধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যাপ্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গো-খাদ্যেও সংকট দেখা দিয়েছে। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার বিকালে মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মশফিকুর রহমান বন্যা প্লাবিত ২শ পরিবারের মধ্যে প্রতি পরিবারে ১০ কেজি চাল, চিরা ২ কেজি, ডাল ১ কেজি, তেল ২ কেজি, লবণ ১ কেজি এবং ১ প্যাকেট নুডলস বিতরণ করেছেন। গত কয়েক দিনের একটানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আত্রাই নদীর পানি জোতবাজার পয়েন্টে ৬ সে.মিটার ও বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩ সে.মিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আত্রাই ও ফকির্নী নদীর উভয় তীরে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। চরম ঝুঁকির মধ্যে আছে আত্রাই নদীর রানীনগর উপজেলার নান্দাইবাড়ি বেড়িবাঁধ। ইতিমধ্যে পানির তোড়ে মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ভরট্ট শিবনগর, দাসপাড়া, চকরামপুর, শহরবাড়ি, কর্ণভাগ, পারসিমলা, নহলা কালুপাড়া, আবিদ্যপাড়া, যশোপাড়া, পশ্চিম দুর্গাপুর, শিবপুর, খোর্দ্দ বান্দাইখাড়া ও চককামদেব, নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের পারনুরুল্লাবাদ, চকহরি নারায়ণ ও বাকসাবাড়ি কশব ইউনিয়নের বনকুড়া ও দক্ষিণ চকবালু এবং কালিকাপুর ইউনিয়নের বেড়েরটেকসহ প্রায় ২০টি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মশফিকুর রহমান জানান, দুর্গত মানুষের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। তালিকা পেলে আরো ৫ হাজার পরিবারে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, আসছে পানি, ঘুরছে পানি, বাড়ছে পানি, ভাসছে চিলমারী। দুঃখ আর কষ্টের পাল্লা হচ্ছে ভারি। মিলছে না অনেকের আশ্রয়। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুড়িগ্রামের চিলমারীর বানভাসিদের এখন আশ্রয় মিলছে না বাঁধেও। ক্ষমতা বা টাকা ছাড়া সেখানে ঘর তুলতে বাধা দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় অনেকেই খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন। পানির তোড়ে ভেঙে গেছে বুরুজের পাড়া ও রাজারঘাট সড়ক বিছিন্ন হয়ে পড়েছে মানুষের চলাচল। জানা গেছে, বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত ও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাঁধের পার্শ্ববর্তী মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় ডুবে যাওয়া মানুষজনও আশ্রয় নিতে ছুটে যাচ্ছেন বাঁধে। আশায় আছেন ত্রাণের। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার্তরা উপায় না পেয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। বাড়ির আসবাবপত্র প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বাঁধেও জায়গা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে দুর্গতরা। উপজেলার কঁাঁচকোল বুরুজের পাড়া সড়ক ও রাজারঘাট ব্রিজের দু’পাশ ধসে যাওয়ায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াত বন্ধসহ উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা শহরের প্রতিটি সড়ক গেছে পানিতে তলিয়ে। ফলে সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে মানুষজনের। ব্রহ্মপুত্রের পানি কিছুটা কমলেও তা এখন বিপদসীমার ১২৮ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত)। চলতি বন্যায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে। দিন দিন বাড়ছে বানভাসি মানুষের সংখ্যা। নদীগর্ভে ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তু হারা হয়ে পড়ছে ব্রহ্মপুত্রের তীরবাসী। বাঁধে এসেও বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন এসব মানুষ স্থানীয় প্রভাবশালীদের। অনেক পরিবারকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে। অনেকেই নিজের বাড়ির কোমর পানিতেই অবস্থান করছেন। এসব এলাকার বানভাসি মানুষ থাকার জায়গা না পাওয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বিশুদ্ধপানি এবং তীব্র জ্বালানি সংকটে দিন পার করছে।
সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধার সাঘাটায় পানির প্রবল বেগে একের পর এক ব্রিজ-কালভার্ট ও সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। গতকাল ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে ৬ ঘণ্টার পানির মারাত্মক চাপে ৫টি ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে ভেসে গেছে। বোনারপাড়া-মহিমাগঞ্জ সড়কের বাটি রেল সড়ক সেতুসহ ৭টি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে ইউনিয়নগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ১৫০ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বন্যা পরিস্থিতি। সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলওয়ে রুটের বাদিয়াখালিতে রেল লাইনের নিচে প্রায় ৭শ’ মিটার ভেঙে ভেসে গেছে। ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বুধবার ভোরে ভরতখালী পোড়াবাড়ি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই নতুন করে পদুমশহর, মুক্তিনগর, বোনারপাড়া ও কচুয়া ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বোনারপাড়া ও পদুমশহর ইউনিয়নের সব গ্রাম পানিতে তলিয়ে যেতে দেখা গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার। পদুমশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুজ্জামান স্বপন জানান, নৌকা নিয়ে পানিবন্দি বিপদগ্রস্ত পরিবারগুলোকে উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। গতকাল ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে ৬ ঘণ্টার মধ্যে বোনারপাড়া-ত্রিমোহনী সড়কের পল্টুরমোড় ব্রিজ, ভুতমারা সড়কের রেলগেট ব্রিজ, বাটি ব্রিজ, মহিমাগঞ্জ সড়কের রেল সড়ক সেতু, ওয়ারেছ চেয়ারম্যানের বাড়ির ব্রিজ ভেঙে ভেসে গেছে। মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে বোনারপাড়া-সান্তাহার রেল রুটের বাটি রেলওয়ের রেল ব্রিজ ও দেওয়ানতলা সড়ক সেতু।
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) থেকে জানান, ৪৪ হাজার ৭শ’ মানুষ পানিবন্দি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১ হাজার ১৮৩ পরিবার। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। গতকাল বন্যাকবলিত এলাকা ঘুড়ে দেখো গেছে, শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের সোনাইকাজী, উত্তর-দক্ষিণ রামপ্রসাদ, জোতিন্দ্র নারায়ন, রোশন শিমুলবাড়ী, চর-প্যাচাই, বড়ভিটা ইউনিয়নের চর-বড়লই, চর-বড়ভিটা, পূর্বধনিরাম, কুড়ির চর, পূর্বধনিরাম কাপুর চর, চর- মেকলি, ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি, খোচাবাড়ী, ফুলবাড়ী ইউনিয়নের চন্দ্রখানা হেলিপ্যাড মাঠ সংলগ্ন, নামা-বালাতারী, বুদারবান্নী, নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর- গোড়কমণ্ডল, খারুয়ার চর, আবাসন প্রকল্পসহ প্রায় ৪৪ হাজার ৭শ’ মানুষ পানিবন্দি। উপজেলা প্রশাসন এ পর্যন্ত ২৮ টন চাল বিতরণ করেছে। আরো ৩০ টন চালের চাহিদা জেলায় পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন উপজেলা প্রশাসন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরবরাহকৃত শুকনা খাবার চাল ও জরুরি ত্রাণ বিতরণ করা হয়। উপজেলা সদরে সড়ক যোগাযোগসহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. মাছুমা আরেফিন জানান, ২৮ টন চাল বিতরণ করেছি, আরো ৩০ টন চালের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি জানান, সরিষাবাড়ীতে বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। রেলসহ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তিন দিনের ব্যবধানে সরিষাবাড়ী পৌর এলাকাসহ সবকটি ইউনিয়নের প্রায় দেড় শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এলাকার লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ সব এলাকার ৫৫টি প্রথমিক বিদ্যালয় ও ২২টি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসার পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরজমিন জানা গেছে, গত দুই দিন বৃষ্টি না হলেও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা-ঝিনাইও সূবর্ণখালী নদীসহ খাল-বিলের পানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়ে মুহূর্তের মধ্যে নতুন করে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পৌর এলাকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পানি প্রবেশ করায় স্বাস্থ্য সেবা ব্যাহত হচ্ছে। স্থানান্তর করা হয়েছে জরুরি বিভাগ। হাসপাতালের কর্মরত ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্ভোগে পড়েছে। প্রায় ৪ হাজার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন সরিষাবাড়ী খাদ্য গুদাম পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। রেল স্টেশন, আলহাজ, এআরএ, পপুলার, কেএইচবি জুট মিল পৌর এলাকার সর্বত্রই বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। সরিষাবাড়ী বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সরিষাবাড়ীর সঙ্গে জেলাসহ সড়ক যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রেল লাইনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার গতকাল চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ৩৭নং আপ মেইল ট্রেনটি সকাল ৯-১৫ মিনিটি ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য রেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার আব্দুর রাজ্জাক নিশ্চিত করেন।
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরমধুয়া গ্রামের ২০টি পরিবারের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর মেঘনা নদীর গ্রাসে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সহায় সম্বল হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারগুলো। হুমকির মুখে আরো শতাধিক বাড়িঘর। নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল চরমধুয়া ইউনিয়ন। চারদিকে মেঘনা নদীবেষ্টিত ইউনিয়নটি এখন অস্তিত্ব সংকটে। অব্যাহত নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে দুই শতাধিক পরিবার ও তাদের বাড়িঘরসহ ফসলি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ২০টি পরিবারের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে আরো শতাধিক বাড়িঘর।
মঙ্গলবার বিকালেও যেখানে ছিল পাকা বাড়ি ও বাচ্চাদের খেলার উঠোন, বুধবার সকালে সেখানেই অথৈই পানিতে ভাসছে বড় বড় নৌকা। সহায় সম্বল হারিয়ে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে গাছতলায়। জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার।
চরমধুয়া হাইস্কুলের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও সমাজসেবক আহসান শিকদার জানান, নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করতে সরকারের সহযোগিতা চাইলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সালাম শিকদার।
কালিহাতী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, কালিহাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে তৃতীয় শ্রেণির তানজিলা ও প্রথম শ্রেণির লিমা নামে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুর ২টার দিকে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের চর দুর্গাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শিশু তানজিলা ও লিমা চর দুর্গাপুর গ্রামের আবু সাইদের মেয়ে। উপজেলা দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রামাণিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, বাড়ির পাশে বন্যার পানিতে দুই বোন খেলার সময় স্রোতে ভেসে যায়। অনেক খোঁজার পর দুপুর ২টার দিকে বাড়ির পাশে দুই বোনের লাশ পাওয়া যায়।
নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর মান্দায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে আত্রাই নদীর ডান তীরে উপজেলার কশব ইউনিয়নের চকবালু নামকস্থানে বাঁধটি ভেঙে যায়। এতে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে খেতের ফসল। বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ঘরের আসবাবপত্র ও মালামাল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে দুর্গত এলাকার মানুষ। বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে আত্রাই ও পূর্বমান্দার সবধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যাপ্লাবিত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গো-খাদ্যেও সংকট দেখা দিয়েছে। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার বিকালে মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মশফিকুর রহমান বন্যা প্লাবিত ২শ পরিবারের মধ্যে প্রতি পরিবারে ১০ কেজি চাল, চিরা ২ কেজি, ডাল ১ কেজি, তেল ২ কেজি, লবণ ১ কেজি এবং ১ প্যাকেট নুডলস বিতরণ করেছেন। গত কয়েক দিনের একটানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আত্রাই নদীর পানি জোতবাজার পয়েন্টে ৬ সে.মিটার ও বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩ সে.মিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আত্রাই ও ফকির্নী নদীর উভয় তীরে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। চরম ঝুঁকির মধ্যে আছে আত্রাই নদীর রানীনগর উপজেলার নান্দাইবাড়ি বেড়িবাঁধ। ইতিমধ্যে পানির তোড়ে মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ভরট্ট শিবনগর, দাসপাড়া, চকরামপুর, শহরবাড়ি, কর্ণভাগ, পারসিমলা, নহলা কালুপাড়া, আবিদ্যপাড়া, যশোপাড়া, পশ্চিম দুর্গাপুর, শিবপুর, খোর্দ্দ বান্দাইখাড়া ও চককামদেব, নুরুল্লাবাদ ইউনিয়নের পারনুরুল্লাবাদ, চকহরি নারায়ণ ও বাকসাবাড়ি কশব ইউনিয়নের বনকুড়া ও দক্ষিণ চকবালু এবং কালিকাপুর ইউনিয়নের বেড়েরটেকসহ প্রায় ২০টি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মশফিকুর রহমান জানান, দুর্গত মানুষের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। তালিকা পেলে আরো ৫ হাজার পরিবারে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে।