প্রথম পাতা

সাক্ষী থেকে আসামি

৫ দিনের রিমান্ডে মিন্নি

মো. মিজানুর রহমান, বরগুনা থেকে

১৮ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

রিফাত হত্যা মামলার বাদী ও নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফের অভিযোগ আমলে নিয়ে মিন্নিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে ও অন্যান্য সোর্স থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তাই রাত ৯টার সময় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মিন্নিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১ নম্বর সাক্ষী ও প্রত্যক্ষদর্শী মিন্নি। তার বক্তব্য রেকর্ড ও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মিন্নিকে বরগুনা পুলিশ লাইনে আনা হয়। রাত ৯টায় তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে তার কথাবার্তায় সন্দেহ হয় পুলিশের। রিফাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মাদকের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত কারণ ও আক্রোশের জন্য এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নি সরাসরি সম্পৃক্ত। এ জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার রাত ৮টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফ। তিনি রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এ সময় তিনি বলেন, মিন্নি আগে নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেছিল। ওই বিয়ে গোপন করে রিফাত শরীফকে বিয়ে করে। বিষয়টি আমাদের জানায়নি মিন্নি এবং তার পরিবার। কাজেই রিফাত শরীফ হত্যার পেছনে মিন্নির মদত রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনলে সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।

মিন্নির ৫ দিনের রিমান্ড: রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার দুপুরে বরগুনা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. হুমায়ুন কবির। পরে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মিন্নি প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি: হত্যাকাণ্ডের পরদিন দুপুরে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫-৬ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা করেন নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। স্বাভাবিক কারণেই এ মামলার প্রধান সাক্ষী হন নিহত রিফাতের স্ত্রী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।

গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনার পুলিশ লাইনে নিয়ে আসে পুলিশ। এরপর দীর্ঘ ১৩ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ ও পুলিশের কৌশলী এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আটকে যান মিন্নি। বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ। এরপরই মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর তখনই প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হয়ে যান মিন্নি।

কারও যোগসাজশে আমার মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে-মিন্নির বাবা: ওদিকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন তার মেয়েকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আমার মেয়ের ওপর মানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলক। ধারণা করা হচ্ছে, কারও সঙ্গে যোগসাজশে আমার মেয়েকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ দেখেছে আমার মেয়ে স্বামীকে বাঁচানোর জন্য জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে। আমার মেয়েকে পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করেছে।

মিন্নিকে গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে তার চাচা আবু সালেহ জানিয়েছেন, মিন্নির বাবার বাড়িতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১০ সদস্যের পুলিশ টিম এখনো অবস্থান করছে। সকাল পৌনে দশটার সময় মিন্নিকে আনার জন্য নারী পুলিশের একটি দল মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের বাড়িতে যায়। তারা পরিবারকে জানিয়েছিল, রিফাত হত্যা মামলার আসামিদের শনাক্ত ও মামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য তাকে পুলিশ লাইনে যেতে হবে।

এর আগে মামলার প্রধান সাক্ষী ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার সকালে নিজ বাসা থেকে বরগুনার পুলিশ লাইন্সে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জানান, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আট ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল রিফাত শরীফ ও নয়ন বন্ড: প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ইতিমধ্যেই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। এই রিফাত ও নয়ন বন্ড এক সময় ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন।

নয়ন বন্ডের মা শাহিদা বেগম বলেন, রিফাত শরীফ আমার ছেলে নয়নের বন্ধু ছিল। বন্ধুত্বের সুবাদে আমাদের বাসায় রিফাতের আসা-যাওয়া ছিল। আমি রিফাতকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছি। আমি মিন্নির সঙ্গে নয়নকে বার বার সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলেছি। কিন্তু নয়ন শোনেনি। নয়নের মনে যা চাইতো ও তাই করতো। নয়ন যদি আমার কথা শুনতো তাহলে এমন নির্মম ঘটনা ঘটতো না। একটি মেয়ের প্ররোচনায় পড়ে মায়ের কথা উপেক্ষা করার কারণে আজ দুই বন্ধু অকালে প্রাণ হারিয়ে এখন কবরবাসী।

এ ছাড়া নয়ন ও রিফাত শরীফের এক সময়ের বন্ধুত্বের কথা স্বীকার করে রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, অনেক আগে নয়ন ও রিফাতের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল। তবে নয়ন মাদক ব্যবসা ও সেবনে জড়িয়ে পড়ার পর নয়ন ও রিফাতকে আমি একসঙ্গে দেখিনি। নয়নের মাদক ব্যবসা ও মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে বন্ধুত্বের মধ্যে দূরত্ব বাড়লেও তাদের মধ্যে শত্রুতা হয়েছে- এমনটাও আমি কখনো শুনিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status