এক্সক্লুসিভ

সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের বিচার শুরু

স্টাফ রিপোর্টার

১৮ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:৫৮ পূর্বাহ্ন

মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির যৌন হয়রানি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার মামলায় সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছেন সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্য দিয়ে আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। গতকাল সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আসামির অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে চার্জ গঠনের আদেশ দেন। আদালত ৩১শে জুলাই সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন। এদিন চার্জ গঠন উপলক্ষ্যে সকালে ওসি মোয়াজ্জেমকে কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে হাজতখানায় রাখা হয়। দুপুর ২টার দিকে তাকে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। দুপুর ২টার দিকে চার্জ শুনানি শুরু হয়। আসামিপক্ষে ফারুক আহম্মেদ, আবু সাঈদ সাগর অব্যাহতির আবেদন করে শুনানি করেন। শুনানিতে তারা বলেন, মামলাটি দায়ের করেছেন ব্যারিস্টার সুমন। কিন্তু তিনি নুসরাতের পরিবারের কেউ না।

তিনি মামলা দায়ের করতে পারেন না। মামলা দায়েরের আগে আদালতের অনুমতি নিতে হয়। তিনি তা করেননি। নুসরাতের পরিবার যদি মামলা করতে না পারে তাহলে কাউকে ক্ষমতা দিয়ে মামলা করাতে পারেন। কিন্তু এমনটি ঘটেনি। তারা বলেন, যে ভিডিওটি করা হয়েছে সেই ভিডিওটি আসামির মোবাইল থেকে করা হলেও তিনি তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেননি। তিনি জোর করে ভিডিও করেননি। তিনি যখন টয়লেটে যান তখন একজন সাংবাদিক তার মোবাইল থেকে ভিডিওটি নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। তথ্য চুরির অভিযোগ এনে তিনি একটা জিডিও করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে মামলায় চার্জ গঠন করার কোনো আলামত নেই। এমতাবস্থায়, আমরা তার অব্যাহতির প্রার্থনা করছি। একই সঙ্গে তিনি ওসি মোয়াজ্জেমের জামিনের আবেদন করেন। জামিন শুনানিতে তিনি বলেন, মামলার  পর তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তিনি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির কথা শুনে উচ্চ আদালতে যাচ্ছিলেন জামিন নিতে। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৭ই জুন থেকে তিনি কারাগারে আছেন। আমরা তার জামিনের প্রার্থনা করছি।

রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম (শামীম) চার্জ গঠন করার আবেদন করেন। তিনি বলেন, এ মামলায় একটা প্রমাণই তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করার জন্য যথেষ্ট, তা হলো তিনি ভিডিওটি করেছেন কিনা। আসামিপক্ষও বলছে না তিনি ভিডিও করেনি। ওসি ভিডিও করার সময় নুসরাতকে স্পষ্টভাবে বলেছেন, তুমি যা বলেছো তা রেকর্ড হচ্ছে। একজন সাংবাদিক তার মোবাইল থেকে ভিডিও নিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন আসামিপক্ষের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, মোবাইল একটা সিকিউরিট জিনিস আর সেটার সংরক্ষণের দায়িত্ব তার। তা আনসিকিউরিট রেখে চলে গেলেন। ব্যারিস্টার সুমনের মামলা করার বিষয়ে তিনি বলেন, মানবতার কারণেই তিনি মামলা করেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষমতা সকল পরিবারের থাকে না। মামলা করার আগে তিনি আবেদন করেছেন। তার যদি মামলা করার অধিকার না থাকতো তাহলে আদালত তখনই মামলাটি খারিজ করে দিতে পারতেন। কাজেই এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। কারো মান-সম্মান নিয়ে খেলা করা গর্হিত কাজ। ওসি মোয়াজ্জেমের এমন কাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। যেখানে ধর্ষিতার নাম প্রকাশ করা যায় না সেখানে তিনি তার নাম, কোথায় কোথায় হাত দিয়েছে তাও প্রচার করা হয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের প্রার্থনা করছি।

ওসি মোয়াজ্জেমের জামিনের বিরোধিতা করেন এ পাবলিক প্রসিকিউটর। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত বলেন, আপনার (ওসি মোয়াজ্জেম) বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় চার্জ গঠন করা হয়েছে। আপনি দোষী না নির্দোষ। জবাবে ওসি মোয়াজ্জেম বলেন, আমি নির্দোষ এবং তিনি ন্যায়বিচার চান। এরপর আদালত চার্জ গঠনের আদেশ দিয়ে আগামী ৩১শে জুলাই সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন গত ১৫ই এপ্রিল আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় গত ২৭শে মে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর ১৬ই জুন মোয়াজ্জেম হোসেনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে একই ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন একই বিচারক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status