খেলা

ইংল্যান্ডে বাংলার জয়গান

ইশতিয়াক পারভেজ, লন্ডন থেকে

১৮ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:৩৭ পূর্বাহ্ন

‘কি যে হলো, চলো সামনে দেখি’! বলেই পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন দু’জন। ‘কিতা মত বাই, আমি তো মাতবার পারিনা নাই।’ বলতে বলতে হাঁটছিলেন একজন। লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপল থেকে শেষ প্রান্ত লুইশাম পর্যন্ত রাস্তা বা শপিংমলে বাংলা শুনে আপনি অবশ্যই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাবেন। এমনকি ওয়েলসের কার্ডিফ থেকে শুরু করে বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার, সাউদাম্পটন একেবারেই গ্রাম বলে পরিচিত টনটনে বাসে, ট্রেনে, মার্কেটে হঠাৎ বাংলা কথা শুনে মন হয়তো খুশিতে ভরে যাবে। আপনি এখানে নতুন হলে কাজ করবে ভীষণ আবেগও। কারণ কোনো কোনো বাংলাদেশি এগিয়ে এসে প্রশ্ন করবেন- ‘বাংলাদেশ থেকে আসছেন?’ এরপর জুড়ে দেবে গল্প। ইংরেজদের শহরে সেই বাংলা যেন হবে আপনার জন্য প্রশান্তির ছোঁয়া। তবে যারা এখানে থাকেন তাদের জন্য এমনটা নতুন কিছুই নয়। অবশ্য সময়ের পরিবর্তনে আপনার জন্য ইংল্যান্ডে অপেক্ষা করছে আরো বড় চমক। অনেক রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে, খাবার দোকান, বাজার, মসজিদ, স্কুলের নামও দেখবেন বাংলাতে লেখা। বিশেষ প্রায় প্রতিটি শহরেই এখন বাড়ছে বাংলার কদর। কাউন্সিল থেকে অনুমতি নিয়ে খেলা হচ্ছে বাংলায় দোকান বা প্রতিষ্ঠানের নাম। যা আগে ছিল পরিমাণে খুবই কম। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে যদি দেখেন- ‘লাল বাজার’, ‘মাছ বাজার’ ‘আমা গাঁও’ নামে বাংলা সাইনবোর্ড বেখেয়ালি হলেও নিজের দেশেই আছেন মনে করতে পারেন। এক কথায় ইংল্যান্ডজুড়েই চলছে এখন বাংলা ‘বিপ্লব’। আর এই বড় পরিতর্নের প্রধান কারণ কি জানেন! ‘ক্রিকেট’। কিভাবে সেটি জানবেন ইংল্যান্ডে প্রবাসীর কথাতেই।
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে রেস্তোরাঁগুলোর নামে। যারা দীর্ঘদিন থেকে ইংল্যান্ডে থাকেন তারা বেশ ভালো করেই জানেন বেশিরভাগ বাংলাদেশিদের খাবার দোকানের নামের পাশে লেখা থাকে ‘ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট’। এখনো যে নেই তা নয়। কিন্তু হঠাৎ করেই বাংলাদেশিদের মধ্যে এসেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। তারা আর ভারতীয় রেস্টুরেন্ট নামে নিজের পরিচয় দিতে চান না। বিশেষ করে নতুন যারা খাবার দোকান দিচ্ছেন তারা। চেষ্টা করে বাংলাদেশের নামটা যুক্ত করতে। লন্ডন শহরে এমন বাংলা নামে ও বাংলাদেশি খাবার দোকানের নাম এখন নতুন কিছু নয়। কেন ইন্ডিয়ার রেস্টুরেন্ট তা নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি বলেন, ‘একটা সময় ছিল এখানে বাংলাদেশ বললে ৮০ ভাগ চিনতো না। এখনো এমন অনেকেই আছে যারা বাংলাদেশের নাম শুনলেও আমাদের খাবার, আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা নেই। তাই এখানে যারা শুরু থেকে খাবার দোকান দিয়েছেন তারা বাধ্য হয়েই ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট লেখেন। কারণ ভারত সম্পর্কে বিদেশিরা অনেকটাই জানেন। তবে এখন সেই মানসিকতার পরিবর্তন এসেছে। যারা নতুন রেস্টুরেন্ট করেছেন তারা চেষ্টা করে বাংলা নাম রাখতে।’ সত্যি এখন ইংলিশদের শহরে এসেছে বাংলার জোয়ার। যেমন ছোট্ট শহর সাউদাম্পটনের কথাই বলি। এই শহরটা সত্যিকার অর্থে চাইনিজ, জাপানি ও পাকিস্তানিদের দখলে। তবে, বাংলাদেশিও কম নয়। এখানে বড় করে একটি রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ডে লেখা ‘বাংলাদেশি ও ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট।’ আবার বার্মিহাংমে আছে মিরপুর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পঞ্চখানা।
হঠাৎ করে কেন এই বাংলা বিপ্লব? এ নিয়ে বামিংহামের প্রবাসী বাংলাদেশি সাইফুল রেজা চৌধুরী পথিক বলেন, ‘ধীরে ধীরে এখন গোটা বিশ্বে বাংলাদেশকে এখন সবাই চিনতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ক্রিকেটের জন্যই এটি বেশি হয়েছে। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ান্স ট্রফিতে দারুণ খেলে বাংলাদেশ দল। আমরা সেবার এখানে যারা ছিলাম চেষ্টা করেছি যেন বাংলাদেশকে মাঠে একা থাকতে না হয়। টাইগারাও তাদের দারুণ খেলা দিয়ে নিজের দেশকে চিনিয়ে গেছে। তখন থেকে এখানে থাকা প্রায় প্রতিটি বাংলাদেশির মনে বড় পরিবর্তন আসে। অনেকদিন থেকেই চেষ্টা চলছে বাংলাতে সাইনবোর্ড লেখার বা রেস্টুরেন্টগুলো বাংলাদেশি পরিচয় দেয়ার। এখন সেটি দারুণভাবে সম্ভব হচ্ছে।’ জেনে অবাক হবেন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের প্রায় দেড় বছর আগে থেকেই এখানে প্রবাসীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। প্রথমে অনলাইনে যতটা সম্ভব টিকিট কিনে নিশ্চিত করেছেন মাঠে থাকা। এরপর টাইগাররা আসার পর থেকেই দেখেন ৯টি স্টেডিয়ামের প্রায় প্রতিটিতে লাল-সবুজের দখল। বাংলায় ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মাঠে হাজির হয়েছে হাজার হাজার ক্রিকেট ভক্ত। দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে দারুণ সুযোগ ছিল তাদের সামনে। সেটি তারা হাতছাড়া করেন নি, নিজের গাটের পয়সা খরচ করতে কার্পণ্য করেন নি একটি বারও। বাংলাদেশ এই বিশ্বকাপে হতাশ করে দেশে ফিরলেও তাদের ইংল্যান্ড প্রবাসীদের আলোচনা শেষ হয়নি। এখনো চলছে ভালো-মন্দ নিয়ে আলোচনা। বিশেষ করে বাংলাদেশিরা এক হলেও ট্রেনে, বাসে, রেস্তোরাঁতে চলে ক্রিকেট আলোচনা। বাংলার এই বিপ্লব অবশ্য এখানে একদিনে হয়নি। এখানে বলতে পারেন প্রচণ্ড দেশ প্রেমের ‘বিস্ফোরণ।’ যার বারুদের যোগান দিয়েছেন ‘টাইগার ক্রিকেট।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status