শেষের পাতা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগার

সভাতেই সীমাবদ্ধ পরিদর্শকরা

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

১৫ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

কারা মহাপরিদর্শকের একজন করে প্রতিনিধি রয়েছে প্রত্যেক কারাগারে। মহাপরিদর্শকের নিরাপত্তা সেলের সদস্য হিসেবে পরিচিত তিনি। তাকে সিআইডিও বলা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারেও আছে এমন একজন। তার কাজ কারাগারের অনিয়ম-দুর্নীতি তথা সার্বিক পরিস্থিতি উপরে জানানো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে কর্মরত নিরাপত্তা সেলের সদস্য রফিকুল ইসলামের (১-২৯৬৮) কর্মতৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই কারাগারের সুপার নূরন্নবী ভূইয়া এবং জেলার এজি মাহমুদ দু’জনেই জানিয়েছেন বেনামি অভিযোগের সূত্রে মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি আসে। তাহলে নিরাপত্তা সেলের সদস্য রফিকুল ইসলাম কি দায়িত্ব পালন করলো সেটিই প্রশ্ন। রফিকুল ইসলাম ২০১৮ সালে এই কারাগারে এসেছেন। কারাগারের অনিয়ম-দুর্নীতি, কারাগার সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা হচ্ছে কিনা এগুলো দেখাই তার দায়িত্ব জানিয়ে রফিকুল বলেন- আমার কর্তব্য আমি পালন করে যাচ্ছি। তদন্ত কমিটি যখন এসেছিল তখন আমি তাদের সঙ্গেই ছিলাম।

এদিকে জেলা পর্যায়ের কারা পরিদর্শক বোর্ডের চোখও এড়িয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারের মারাত্মক অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি। অবশ্য বরাবরই এই বোর্ডের সদস্যদের চোখে কোনো কিছু ধরা পড়ে না। নির্ধারিত ত্রৈমাসিক মিটিং বা পরিদর্শন শেষে তারা শুধু সন্তোষ প্রকাশ করেন। এর সদস্যরা বলেছেন, তারা যখন যান তখন সবকিছু ঠিকঠাক দেখতে পান। তাদের সঙ্গে কারা কর্মকর্তারা থাকায় কেউ কোনো অভিযোগ করে না। কারা পরিদর্শক বোর্ডের সভাপতি পদাধিকার বলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জেলা প্রশাসক। এ ছাড়া সরকারি সদস্য ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ের কয়েকজন সদস্য রয়েছেন এই বোর্ডে। কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিদর্শকদের ওই সভাকে কেন্দ্র করে আগেই সব ঠিকঠাক করে রাখা হয়। ওইদিন বন্দিদের প্রাপ্য খাবার দেয়া হয়। কোনো কিছুতে পরিদর্শকরা যাতে ত্রুটি না পান সে ব্যবস্থা করা হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। সর্বশেষ গত ৩০শে জুন সরকারি ও বেসরকারি কারা পরিদর্শকদের ত্রৈমাসিক সভা হয় এই কারাগারে। জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান এতে সভাপতিত্ব করেন। পরিদর্শক অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর অমৃত লাল সাহা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর কারা পরিদর্শকরা বলছেন, এগুলো কোনো কিছুই জানেন না তারা। বেসরকারি কারা পরিদর্শক দীপক চৌধুরী বাপ্পী বলেন- আমাদের মিটিং হওয়ার পর অনিয়মের অভিযোগগুলো শুনেছি। পরবর্তী মিটিংয়ে এসব বিষয়ে কথা বলবো। আরেক বেসরকারি কারা পরিদর্শক নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহিদুল ইসলাম বলেন-যখন ইন্সপেকশন হবে জানে তখন তো সবই পরিপাটি করে রাখা হয়। বেসরকারি কারা পরিদর্শক অ্যাডভোকেট তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত বলেন- মিটিং ডাকলে আমরা সেখানে যাই। তখন আমরা যে পরিবেশ দেখি তা খুবই সুন্দর। পরিদর্শনকালে হাজতি-কয়েদিদের সঙ্গেও আমরা কথা বলি। কিন্তু তখন তারা আমাদের কিছু বলে না। অবশ্য সে সময় কারা কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে থাকেন। ভয়েও হয়তো তারা মুখ খুলতে না পারেন। এই আনুষ্ঠানিক সভা বা পরিদর্শনে কোনো কিছুই বোঝার উপায় নেই। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের তদন্ত রিপোর্টে যে বিষয় উঠে এসেছে তা মারাত্মক। এই ধরনের অপকর্মে যারা জড়িত তাদের কঠিন শাস্তি হওয়া দরকার। পরিদর্শক বোর্ডের সভাপতি জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন-দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। আমরা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি। যখনই অভিযোগ পাই ব্যবস্থা নেয়া হয়।

আমাদের মিটিং হয়েছে ওই সভার ৩ মাস পর। এখন অবস্থার তো পরিবর্তন হতেই পারে। উল্লেখ্য, এবছরের এপ্রিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত কমিটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারের নানা-অনিয়ম দুর্নীতির ৫১ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। যাতে এই কারাগারে বন্দি বেচাকেনা, সাক্ষাৎ বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য, খাবার বাণিজ্য, চিকিৎসা বাণিজ্য, পিসি বাণিজ্য, পদায়ন বাণিজ্য, কারা অভ্যন্তরে নিষিদ্ধ মালামাল প্রবেশ এবং জামিন বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মের এক ভয়াবহ চিত্র উঠে আসে। ৫০৪ জনের স্থলে এই কারাগারে রয়েছে বর্তমানে ১৪০০ কয়েদি-হাজতি। তাদের পুঁজি করেই চলে কারা কর্মকর্তা আর কারারক্ষীদের নানা বাণিজ্য। বেনামি এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটিতে তার সঙ্গে ছিলেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপ-সচিব মো. মনিরুজ্জামান। এই কমিটি গত ৬ই এপ্রিল ৫১ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়ম-দুর্নীতিতে কারা কর্মকর্তা এবং কারারক্ষীদের সরাসরি সম্পৃক্ততার উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status