শেষের পাতা

সিআইডির ব্রিফিংয়ে তথ্য- ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাজুল ইসলাম

স্টাফ রিপোর্টার

১৫ জুলাই ২০১৯, সোমবার, ৯:৩০ পূর্বাহ্ন

সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম তাজুল ইসলাম। মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে তিনি গ্রাহকের কাছ থেকে এ টাকা সংগ্রহ করেছেন। সমবায় সমিতিকে তিনি ব্যাংক হিসাবে প্রচার ও গ্রাহককে উচ্চ লভ্যাংশের আশা দেখিয়েছেন। অথচ এসব কাজে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো অনুমতিই ছিল না । হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকার কোন লভ্যাংশ দূরের কথা গ্রাহকের আসল টাকাও পরিশোধ করেননি। এসব টাকা তিনি আত্মসাৎ করে নিজের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেছেন। নিজের এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। এছাড়া আরও শতকোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করেছেন। এক গ্রাহকের করা বংশাল থানার একটি মামলায় পুলিশের অর্গানাইজড ক্রাইম সিআইডির হাতে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল এ নিয়ে সিআইডি সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন সংস্থাটির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম।

সিআইডি জানিয়েছে, তাজুল ইসলাম গ্রাহকের কাছ থেকে আত্মসাৎকৃত টাকা থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তার কানাডা প্রবাসী দুই ছেলে ফারহাদুল ইসলাম ছাব্বির ও রিয়াজুল ইসলাম রিজভির কাছে পাঠিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি। টাকা পাচারের অভিযোগে শুক্রবার ডিএমপির রমনা থানায় মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলা নং-১২১। এই মামলায় তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রীসহ তিন সন্তানকে আসামি করা হয়েছে। সিআইডিসূত্র বলছে, ১৯৮৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড। একই সময় থেকে তাজুল ইসলাম ২০০২ সাল পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করেন। তিনি ব্যাংকটির ইনভেস্টমেন্ট শাখার প্রধান ছিলেন। ২০০৫ সাল থেকে তিনি আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটিতে যুক্ত হয়ে সাধারণ গ্রাহকদের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আদায় শুরু করেন। সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজিজ কো-অপারেটিভের ২৬ টি শাখা পরিচালনার অনুমোদন থাকলেও তারা সারাদেশে অন্তত ১৬০টি শাখা পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে ৮০টি শাখার ১১ হাজার ৪২৫ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। তাজুল ইসলাম এই ৮০টি শাখার ব্যবস্থাপক ও ২য় শ্রেনীর কর্মকর্তারা গ্রাহকদের অধিকহারে মুনাফার লোভ দেখিয়ে নগদ আমানত সংগ্রহ করেন। জমা টাকার মেয়াদ পূর্তিতে গ্রাহকরা আসল টাকা ও লভ্যাংশ ফেরত চাইতে গেলে কালক্ষেপণ ও নানাভাবে টালবাহানা করে আসছিলেন। তাজুল ইসলাম এবং শাখা ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন চৌধুরী সংঘবদ্ধভাবে ১২টি বিভিন্ন তফসিলভুক্ত ব্যাংকে ৭৭টি হিসাবের মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন।

সিআইডি বলছে, ব্যাংকের হিসাব বিবরণী এবং স্টেটমেন্ট পর্যালোচনায় দেখা যায়, তাজুল ইসলাম ও জাকির হোসেনসহ অন্যান্য আসামি গ্রাহকদের জমার ৩০০ কোটি টাকা নগদ ও অনলাইনে ট্রান্সফার করে পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবে স্থানান্তর করেন। এই টাকা তাজুল ইসলামের নিজের নামে, স্ত্রী আফরোজা পারভীন এবং ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম তানভীরের পরিচালিত সাউদি বাংলা প্রপার্টিজ লিমিটেড, তানভীর এন্টারপ্রাইজ, তানভীর অটো ব্রিক লিমিটেডের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। তাজুলের বড় ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম তানভীরসহ প্রতিষ্ঠানের অন্যদের নামে চেক ইস্যু, ব্যবস্থাপনা কমিটির বর্তমান ও সাবেক সদস্য এবং কর্মকর্তার যোগসাজশে নগদ উত্তোলনের পর তা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স এন্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করেছে যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি বিরোধী। তারা মিথ্যা প্রলোভনে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করে আমানত সংগ্রহের পর জমার অর্থ আত্মসাৎ করে জমি, ফ্ল্যাট, নামে বেনামে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান চালু করেছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার আঁটি মৌজায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে আজিজ কো-অপারেটিভ মুক্তিসরণি শপিংমল/টাওয়ারের নামে ৬০ শতাংশ জমিতে বহুতল ভবন স্থাপন এবং টাকা স্থানান্তর, রুপান্তর ও হস্তান্তর করে মানি লন্ডারিংরের অপরাধ করেছেন। তিনি বলেন, তাজুল ইসলাম কানাডার গ্রিন কার্ডধারী এবং তার ছেলে ফারহাদুল ইসলাম ছাব্বির ও রিয়াজুল ইসলাম রিজভী ২০১১ সাল থেকে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনি তার ওই দুই ছেলের কাছে অর্থপাচার করেছেন। কানাডায় তিনি বাড়ি করেছেন বলেও আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে রমনা, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও থানার আরও মামলা হয়েছে। আমরা সবগুলো মামলার খোঁজ খবর নিচ্ছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status