অনলাইন

পুত্রবধূ মিন্নিকে গ্রেপ্তারের দাবি রিফাতের বাবার

বরগুনা প্রতিনিধি

১৪ জুলাই ২০১৯, রবিবার, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন

বরগুনায় প্রকাশ্যে শাহনেওয়াজ রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় এবার তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে দায়ি করেছেন রিফাতের বাবা ও মামলার বাদী আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে পুত্রবধূর বিরুদ্ধে এই অভিয়োগ তোলেন তিনি। অপরদিকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলছেন, রিফাতের বাবার মাথা ঠিক নেই।

এর আগে এ মামলার আসামী নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান। তার বেশ কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে ইতিমধ্যে।

সংবাদ সম্মেলনে দুলাল শরীফ বলেন, মিন্নি ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে প্রথম বিয়ের তথ্য লুকানো, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিন্নির সম্পৃক্ততাসহ ১০টি গুরুতর অভিযোগ তুলে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

গত ৬ই জুলাই রিফাত হত্যার নতুন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে কলেজের প্রধান ফটক থেকে মিন্নিকে নিয়ে রিফাতকে বের হতে দেখা যায়। পরে মিন্নি ফের কলেজের দিকে যান। এ সময় রিফাত তার স্ত্রী মিন্নিকে ভেতরে যেতে বাধা দেন। এরপরই সন্ত্রাসীরা কলেজ গেট থেকে রিফাতকে ধরে সামনের দিকে নিয়ে যায়। মিন্নি তখন পেছন পেছন হাঁটছিলেন। কয়েক সেকেন্ড পরেই নয়ন বন্ড ও অন্যরা যখন রিফাত শরীফকে কিল, ঘুষি, লাথি দিতে শুরু করে, তখনই মিন্নি তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান। আর যখন সন্ত্রাসীরা রিফাত শরীফকে কোপাতে শুরু করে তখন মিন্নি হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।


সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আসামিরা মিন্নির ওপরে চড়াও হয়নি এবং মিন্নি কোনোভাবেই আক্রান্ত হয়নি। রিফাতের বাবার প্রশ্ন, মিন্নি কেন আক্রান্ত হয়নি? মিন্নি বিবাহিত ছিল এবং আগের বিয়ের তথ্য গোপন করেছে এমন অভিযোগও করেন তিনি। এছাড়াও তার ছেলেকে হত্যার আগের দিন মিন্নি নয়ন বন্ডের বাসায় গেছে এমনটা জেনেছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নিজের উপলব্ধি থেকেই সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়েছি।

রিফাত হত্যার প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে অভিযুক্ত করলে মামলায় এর প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায় রিফাতকে কোপানোর সময় মিন্নি খুনিদের জাপটে ধরেছে। কিন্তু খুনিরা কেউ মিন্নির ওপর চড়াও হয়নি। এমনকি মিন্নিকে একটা টোকাও দেয়নি। যখন রিফাত আহত এবং রক্তাক্ত অবস্থায় একা একা রিকশাযোগে হাসপাতাল যাচ্ছিল, তখন মিন্নি তার ব্যাগ ও স্যান্ডেল গোছানোর কাজে বেশি ব্যস্ত ছিল। খুনিদের একজন রাস্তা থেকে ব্যাগ তুলে মিন্নির হাতে দিয়েছে। মিন্নি ওই ব্যাগ নিয়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটছিল। এছাড়া আমার ছেলে রিফাত শরীফকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার সময়ও যায়নি মিন্নি। আসলে সবই ছিল মিন্নির অভিনয়।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নিহত রিফাত শরীফের চাচা আবদুল আজিজ শরীফ ও ছালাম শরীফ। এছাড়া স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

রিফাতের বাবার মাথা খারাপ: মিন্নির বাবা

রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফের এসব অভিযোগ সম্পর্কে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, দুলাল শরীফের মাথা ঠিক নেই। তিনি হার্টের রোগী। এ কারণে ভুলভাল বকছেন। তার কথার কোনো ভিত্তি নেই। তার কথায় কান দেয়ারও কিছু নেই।

মিন্নিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, রিফাত হত্যা মামলাটি স্পর্শকাতর। মামলাটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করছি। এ হত্যাকাণ্ডে যে জড়িত থাকবে পুলিশ তাকে আইনের আওতায় আনতে বদ্ধ পরিকর।

উল্লেখ্য, গত ২৬শে জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জনসম্মুখে স্ত্রীর সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। গুরুতর আহত রিফাতকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীসহ ১২জনের বিরুদ্ধে ২৭শে জুন হত্যা মামলা দায়ের করেন রিফাত শরীফের বাবা মো. আ. হালিম দুলাল শরীফ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status