প্রথম পাতা

রাজধানীতে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি

বন্যাপরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৮:৫৮ পূর্বাহ্ন

রাজধানীতে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা। গতকাল পশ্চিম তেজতুরি বাজার থেকে ছবিটি তুলেছেন আমাদের আলোকচিত্রি নাসির উদ্দিন

বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ জন্য সার্বিক প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। আষাঢ়ের শেষে এ বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে রাজধানীজুড়ে। দেশের নদনদীর পানি দ্রুত বাড়ছে।  সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম   স্থাপন করা হয়েছে।  গতকাল  দুপুর ১২টা  থেকে  বেলা  ৩ টা পর্যন্ত  তিন ঘণ্টায় রাজধানীতে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১ মিলিমিটার। এতে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারন মানুষ। বৃষ্টির কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।  আবহাওয়া অধিদপ্তর এবং বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী দুদিন ভারী বৃষ্টি চলবে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাঙামাটিতে ১৬৫, হাতিয়ায় ১৩৫, সীতাকুন্ডে ১২৯, টাঙ্গাইলে ১২২, কুতুবদিয়ায় ১১১, সন্‌দ্বীপে ১০১ এবং চট্টগ্রামে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়া সহকারী আব্দুল আলীম মানবজমিনকে বলেন, বৃষ্টির পরিমান বাড়তে পারে । কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।  গতকাল শুক্রবার  সকালের পর থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি হতে থাকে  দেশজুড়ে। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় পঞ্চগড়ের  তেঁতুলিয়ায় ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দুপুর ১২টার পর বৃষ্টি হানা দিতে  থাকে  দেশের মধ্যাঞ্চলে। সকাল নয়টায় পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা  থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।  সেই সঙ্গে দেশের  কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি  থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

অন্যদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভারি বৃষ্টির কারণে দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।  দেশের উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতের আসাম ও  মেঘালয় রাজ্যে আগামী ২৪  থেকে ৪৮ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।  কোথাও কোথাও অতি ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে আগামী ৭২ ঘণ্টায়  দেশের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ৪৮ ঘণ্টায় যমুনা নদীর জামালপুর জেলায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ ছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ফেনী, সাঙ্গু, মাতামুহুরি, হালদাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।  নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
এদিকে ১০  জেলায় বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে । ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা ঢলে  দেশের ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। এছাড়া বন্যা আক্রান্ত হতে পারে এমন  জেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।  সচিবালয়ে আন্ত:মন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভা  শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ    প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বন্যা আক্রান্ত  জেলাগুলোতে পাঠানো হয়েছে দুই কোটি ৯৩ লাখ টাকা, সাড়ে ১৭ হাজার টন চাল এবং ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার। এসব  জেলায় দু’এক দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে ৫০০ তাবু, তৈরি করা হয়েছে মেডিকেল টিম। এনামুর রহমান বলেন, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ,  নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার এবং নীলফামারীতে বন্যা পরিস্থির অবনতি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন ভারি বর্ষণ হতে পারে, এজন্য বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। ্তুতিনি বলেন, ভারতের ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় যমুনা নদীতে পানি বাড়বে এবং বিহারে গঙ্গার পানি বাড়ায় পদ্মার অববাহিকায় বন্যা দেখা দিতে পারে। মন্ত্রীর তথ্যমতে, ৬২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে, তারমধ্যে ২৬টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলোতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, ৫৫১টি সেন্টারকে ঝুঁকিমুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে। ত্রাণ সচিব শাহ কামাল বলেন, প্রতিটি  জেলায় দুই হাজার প্যাকেট করে মোট ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। একটি প্যাকেটে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট,  তেল, আটা, মসুরের ডাল, শিশু খাবারসহ একটি পরিবারের সাত দিনের খাবার রয়েছে। এখন পর্যন্ত দুই  কোটি ৯৩ লাখ নগদ টাকা এবং দুই দফায় সাড়ে ১৭ হাজার টন চাল বিভিন্ন  জেলায় পাঠানো হয়েছে।  কোনো  জেলা প্রশাসক চাহিদা পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে চাল দেয়া হবে।

প্রতিমন্ত্রী জানান, আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে জায়গার অভাব হলে ব্যবহারের জন্য দুর্গত এলাকাগুলোতে ৫০০টি করে তাঁবু পাঠাতে বলা হয়েছে।  প্রত্যেক তাবুতে ২০ জন করে থাকতে পারবে।
 এদিকে, সারাদেশের বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের পঞ্চম তলার ৪২৫ নম্বর রুমে এ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের  ফোন নম্বর ০২৯৫৭০০২৮। সারাদেশে বন্যা-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে এই কন্ট্রোল রুমে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানি উন্নয় বোর্ডের ‘বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র’ এর  টোল ফ্রি ১০৯০ নম্বরে ফোন করার পর ৫ প্রেস করে বন্যার পূর্বাভাস সংক্রান্ত তথ্য জানা যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status