শেষের পাতা

‘গুপ্তধনের’ সেই বাড়িটি এখন তালাবদ্ধ

আল-আমিন

১৩ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৮:৫২ পূর্বাহ্ন

আবালবৃদ্ধাবনিতা সবাই চেনেন বাড়িটি। তবে, একেকজন একেক নামে চেনেন। কেউ চেনেন গুপ্তধনের বাড়ি। কেউ চেনেন স্বর্ণ বাড়ি নামে। কেউ ডায়মন্ড অথবা রত্ন বাড়ি নামে। বাড়িটির সন্ধানে যে কেউ গেলে, শোনা মাত্রই এলাকার লোকজন উষ্মা প্রকাশ করেন, কেউ মুচকি হাসেন অথবা কেন বাড়িটি খোঁজা হচ্ছে তা জানতে চান। কারণ, ওই বাড়ি গুপ্তধনের সন্ধানে ম্যাজিষ্ট্রেট ও বুয়েট বিশেষজ্ঞ দলের উপস্থিতিতে ২০ জন শ্রমিক শ্যাবল ও কোদাল দিয়ে প্রায় ৫ ফিট খনন করেছিলেন। কিন্তু, কিছুই মেলেনি! সেই বাড়িতে একজন দারোয়ান ছাড়া আজ আর কেউ থাকে না। বাড়ির ভাড়াটিয়ারা অন্যত্র চলে গেছেন। একজন দারোয়ান বাড়িটি পাহারা দেন। তবে, এক সপ্তাহ পর পর কেয়ারটেকার এসে বাড়ির খোঁজখবর নিয়ে যান।

২০১৮ সালের ১২ই জুলাই মিরপুর থানাধীন সি ব্লকের ১৬ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িতে পুলিশ পাহারায় একদল শ্রমিক খনন কাজ শুরু করেন। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, বাড়ির আগের মালিকের এক আত্মীয় আবু তৈয়ব মিরপুর থানায় একটি জিডি (সাধারণ ডাইরি) করেন। সেই জিডিতে তিনি অভিযোগ করেন যে, ওই বাড়ির মাটির নিচে গুপ্তধন আছে। তিনি বাড়ির ঘরের মধ্যে খনন করে সেই গুপ্তধন উদ্ধারের জন্য পুলিশের কাছে দাবি জানান। পরে পুলিশ বাড়িটিতে যায় এবং মালিককে বিষয়টি অবগত করেন। এরপর একদল শ্রমিক ৫ ফিট খোঁড়ার পর ওই বাড়িতে কিছুই পায়নি। বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা এসেও সেখানে নিশ্চিত হন যে, বাড়ির নিচে কিছুই নেই।

গত ৮ই জুলাই মিরপুরের সি ব্লকের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, আক্কাশ আলী নামে এক ব্যক্তি এসে তালা খুলেন। তার পরনে আনসার সদস্যদের পোশাক ছিল। তিনি নিজেকে বাড়ির দারোয়ান হিসাবে পরিচয় দিলেন। বাড়ির মধ্যে গিয়ে দেখা যায়, পাকা টিনসেডের বাড়ি। ৬ রুম বিশিষ্ট ৫ টিতেই তালা মারা। প্রথম রুমে থাকেন বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী আক্কাশ আলী। আর গুপ্তধন খোঁজা হয়েছিল ওই কক্ষটির সর্বশেষ পেছনে। খোঁড়াখুড়ির স্থানটি ইট বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানায়, বাড়িটিতে আগে দুইজন ডাক বিভাগের কর্মচারী তাদের পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। ঘটনার পর থেকে তারা চলে গেছেন।
বাড়ির কেয়ারটেকার আক্কাশ আলী জানান, ঘটনার পর নানামুখী ঝামেলা এড়াতে ভাড়াটিয়ারা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন। আমি শুধু একাই এখন বাড়িটি পাহারা দিচ্ছি। তবে, নিজেও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকি। পেটের দায়ে এখানে পাহারা দেয়া। বাড়ির কেয়ারটেকার শফিকুল ইসলাম জানান, আমি সাতদিন পর পর এসে বাড়িটি দেখে যাই। গুপ্তধন আছে এমন ঘটনার পর বাড়িটি ভাড়া দেয়ার জন্য আর  টুলেট লাগানো হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম জানান, গুপ্তধন আছে বলে পুলিশী পাহারায় সেখানে খনন করা হয়। কিন্তু, কিছুই পাওয়া যায়নি। অন্য বাসিন্দা আশিকুল ইসলাম জানান, এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে আমি পরিবার নিয়ে বসবাস করি। দেখছি, বাড়িটি টিনসেডের। লোকমুখে শুনেছি, বর্তমান বাড়ির মালিক আগে যার কাছে বাড়িটি কিনেছেন তারই এক আত্মীয় লোকমুখে শুনেছিলেন যে, ওই বাড়ির পেছনের একটি কক্ষে গুপ্তধন আছে। সেই কথাটি তিনি পুলিশকে জানায়। পুলিশ বাধ্য হয়ে মালিকের অনুমতি নিয়ে খনন কাজ শুরু করেন।

সেই রহস্যময় বাড়ির বর্তমান মালিক মনিরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মানবজমিনকে জানান, ম্যাজিষ্ট্রেটের ও বুয়েটের বিশেষজ্ঞের একটি দলের উপস্থিতিতে সেখানে খনন করে কিছুই পাওয়া যায়নি। আমি পুলিশকে বলে ছিলাম, যদি সেখানে গুপ্তধন পাওয়া যায়, তাহলে আমার সেই গুপ্তধনে দাবি থাকবে না।

তিনি আরও জানান, সেটি যেন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করা হয়। আসলে প্রভাবশালীদের ইশারাই ওইটি পরিকল্পিত একটি ষড়যন্ত্র ছিল। সেই ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেছে। তিনি দাবি করেন, বাড়িটি দ্রুত ভেঙ্গে তিনি নতুন ভবন নির্মাণ করবেন।
এ বিষয়ে মিরপুর থানার ওসি দাদন ফকির জানান, মিরপুরের ওই বাড়িতে গুপ্তধন আছে জানিয়ে আবু তৈয়ব নামের এক ব্যক্তি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। বিষয়টি ঢাকা জেলা প্রশাসনকে জানানোর পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বাড়িতে মাটি খননকাজ চালানো হয়। কিছু না পাওয়ায় সেটি আবারও ভরাট করে দেয়া হয়। তিনি আরও জানান, একদল দুর্বৃত্ত ওই বাড়িটি নিয়ে নানা তামাশা শুরু করেছিল। গুপ্তধন আছে বলে দাবি করেছিল পুলিশের কাছে। খনন করে সেটির ফয়সালা করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status