শেষের পাতা

বৃষ্টির অজুহাতে বেড়েছে সবজির দর

বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৩ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৮:৫০ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর বাজারগুলোতে হঠাৎ করে দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ দরে বিক্রি হচ্ছে পিয়াজ। এ ছাড়া রসুন, আদা ও ডিমের দাম আগের মতোই বেশি দরে বেচা-কেনা হচ্ছে। এদিকে বৃষ্টি ও বন্যার অজুহাতে বেড়ে গেছে বেশিরভাগ সবজির দাম। বিশেষ করে শাক-সবজি, কাঁচামরিচ ও আলুর দাম বেড়েছে। তবে চাল এবং মাংসের দামে ছিল স্থিতিশীল। রাজধানীর কাওরানবাজার, সেগুনবাগিচাসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহেও ৩৫ টাকার মধ্যে ছিল। অন্যদিকে ভারতীয় পিয়াজের দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৩৫-৪০ টাকায় উঠেছে। অথচ কিছুদিন আগে ভারতীয় পিয়াজ ২৫-৩০ টাকার মধ্যে ছিল।

এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার এক জরুরি বৈঠকে বসেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে বাণিজ্যসচিব মো. মফিজুল ইসলাম স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট তিন জেলা সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও দিনাজপুরের জেলা প্রশাসকদের ফোন করে আমদানি করা পিয়াজ, রসুন ও আদার ট্রাক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খালাসের ব্যবস্থা করার তাগিদ দেন।

এছাড়া কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে পিয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে কি না- তা যাচাইয়ে বাজার মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এ বছর দেশে পিয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ছাড়া পিয়াজের আরেক উৎস ভারতে দাম বাড়ার তেমন কোনো খবর নেই বলে বৈঠকে জানানো হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে ২৪ লাখ টন পিয়াজের চাহিদা রয়েছে। কোরবানির ঈদে বাড়তি আরও প্রায় ২ লাখ টনের চাহিদা তৈরি হয়। মোট চাহিদার প্রায় ১৭ লাখ টন দেশে উৎপাদন হয়। বাকি ৭ লাখ টন ভারতসহ অন্যান্য উৎস থেকে আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্যমতে, প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ ৪৫-৫০ টাকা, আমদানিকৃত ভারতীয় পিয়াজ ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। অথচ সপ্তাহখানেক আগেও এ পিয়াজ ২৫-৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার কারণে খুচরায়ও বেড়েছে। তবে বাজারে পর্যাপ্ত পিয়াজের সরবরাহ রয়েছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে কারসাজি করে পিয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। প্রতি বছর কোরবানির সময় কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে দাম বাড়ানো হয়।

পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পিয়াজ ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশি পিয়াজের পাইকারি দাম কমে প্রতি কেজি ৩০-৩১ টাকায় নেমেছিল। বৃহস্পতিবার আবার বেড়ে তা ৩৫-৩৬ টাকায় ওঠে। ভারতীয় পিয়াজের দাম প্রতি কেজি ৩১-৩২ টাকা, যা আগের দিন ২ টাকা কম ছিল। তিনি বলেন, পিয়াজের বাজার এখন ভারতের সঙ্গে মিলিয়ে ওঠানামা করছে। শ্যামবাজারে প্রতি কেজি চীনা রসুন ১৪০ টাকা, দেশি রসুন ৯৫-১০০ টাকা এবং চীনা ও মিয়ানমারের আদা ১০৫-১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চীনা আদা ১৬০ টাকা, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের আদা ১৮০-২০০ টাকা, চীনা রসুন ১৬০ টাকা ও দেশি রসুন ১৪০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা। ঈদুল ফিতরের আগেও রসুন ও চীনা আদার কেজি ১২০-১৩০ টাকার মধ্যে ছিল।

এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আলু, বরবটি, পটল, ঝিঙে-সহ প্রায় সব সবজির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা হারে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে বৃষ্টিভেজা আবহাওয়াকে দায়ি করেন বিক্রেতারা। আগের মতোই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে শসা, টমেটো ও গাজর। বাজার ভেদে শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাঁকা টমেটো ও গাজর। সপ্তাহের ব্যবধানে শসা ও গাজরের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও টমেটোর দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে কোনো বাজারেই টমেটোর কেজি একশ টাকার নিচে বিক্রি হয়নি।

শসা, টমেটো ও গাজরের মতো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বেশিরভাগ সবজি। গত সপ্তাহের মতো করলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কাকরোল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে ঝিঙ্গা ও ধুন্দুল। এছাড়া পটল বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি, বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি, পেঁপের কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটির কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে এ সবজিগুলোর দামও অপরিবর্তিত রয়েছে।

কাওরানবাজারের সবজি ব্যবসায়ী আনিস বলেন, গত সপ্তাহেই বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে। তবে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে যে কোনো সময় সবজির দাম বেড়ে যেতে পারে। তার মতে, নতুন করে কোনো সবজির দাম বাড়েনি।
এদিকে দাম বেড়েছে কাঁচামরিচের। কাঁচামরিচের ২৫০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫ থেকে ২০ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

কাঁচামরিচের ব্যবসায়ী ইদ্রিস বলেন, গত সপ্তাহে ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ বিক্রি করেছি ২০ টাকায়। এখন সেটা ৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারিতে দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমাদের এমন বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির আগের সপ্তাহের মতো ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে লাল লেয়ার মুরগি। গরুর মাংস বাজার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি।

আর কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া মাছ এখনও সাধারণ ক্রেতাদের ভোগাচ্ছে। খুচরা বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে পাঙাশ মাছ। রুই মাছ ২৮০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং চিতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status