শেষের পাতা

গাজীপুরে অতিরিক্ত টাকা খাচ্ছে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে

১২ জুলাই ২০১৯, শুক্রবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

গাজীপুরে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার নিয়ে গ্রাহকরা পড়েছেন বিড়ম্বনায়। বিদ্যুৎ গ্রাহকরা বিশেষ করে ভুতুড়ে বিল, পর্যাপ্ত সংখ্যক রিচার্জ স্টেশন না থাকাসহ নানা ভোগান্তিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গ্রাহকদের অভিযোগ, লাগানোর পরই অতিরিক্ত টাকা গিলে খাচ্ছে প্রিপেইড মিটার। এসবের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমে নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। গ্রাহকদের এসব অভিযোগের প্রতিকার ও প্রিপেইড মিটার সরবরাহ বন্ধ রাখার দাবিতে এরই মাঝে বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও বিদ্যুৎ অফিস ঘেরাও স্মারকলিপি দিয়েছে তারা। ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে চান ৪০ লাখ মানুষের এই জেলার বাসিন্দাগণ। তবে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছেন, যারা বিল বকেয়া রাখছে কিংবা নিজেদের ত্রুটি রয়েছে, সেসব গ্রাহকরাই আন্দোলন করছেন। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ বলছেন, সাধারণ জনগণ যাতে কোনো ধরনের ভোগান্তিতে না পড়েন সে জন্য তৎপর রয়েছেন তারা।

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ও মহানগরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় গাজীপুরের বাসাবাড়ি, কল-কারখানায় স্থাপন করা হচ্ছে প্রিপেইড মিটার। গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রিপেইড মিটারে মিটার ভাড়া আগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। পর্যাপ্ত ভেন্ডিং বা রিচার্জ স্টেশন নেই, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে কার্ড কিনতে হয়, হঠাৎ মিটার লক হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া ইচ্ছেমতো টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে। আগের চেয়ে অনেক বেশি বিদ্যুৎ বিল আসে প্রিপেইড মিটারে। এতে করে ভাড়া দেয়া মালিকদের বাসা ও দোকানপাট খালি হয়ে যাচ্ছে। তবে গ্রাহকদের এসব অভিযোগ মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলায় বাসা বাড়ি, কল-কারখানায় স্থাপন করা হচ্ছে প্রিপেইড মিটার। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা বলে এসব মিটার প্রতিস্থাপন করা হলেও এই মিটার নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন গ্রাহকরা।

গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রিপেইড মিটারে মিটার ভাড়া আগের চেয়ে চার গুণ, বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ থাকলেও মিটার থেকে টাকা কাটা যায়, প্রিপেইড মিটার বিদ্যুৎ ব্যয় ডিজিটাল মিটারের দ্বিগুণ, পর্যাপ্ত ভেন্ডিং বা রিচার্জ স্টেশন নেই, দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে কার্ড কিনতে হয়, একাধিকবার কার্ড ক্রয়ের ঝামেলা, হঠাৎ মিটার লক হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, পল্লীবিদ্যুতের লাইনে পল্লীবিদ্যুতের লোকছাড়া কাজ করা নিষিদ্ধ বিধায় তাদের ডেকেও তাৎক্ষণিক পাওয়া সম্ভব হয় না। এ ছাড়া পূর্বে ছাপানো বিলিং সিস্টেম ছিল কিন্তু বর্তমানে ফ্ল্যাট রেটে ইচ্ছেমতো টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে, ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের জন্য অতিরিক্ত টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। গ্রাহকরা বলছেন, কার্ড মিটারে তাদের অনেক অসুবিধা। আগে বিল আসতো যেখানে ৪০০০ টাকা এখন বিল আসে ৯০০০ হাজার টাকা। প্রিপেইড মিটারের অতিরিক্ত টাকা কোথায় যায় তা আমরা জানি না। প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের জন্য জুলুম, কখন এটি শেষ হবে তা জানে না গ্রাহক। বাসাবাড়িতে ভাড়া যেখানে এক হাজার টাকা সেখানে বিদ্যুৎ বিল আসে ৫শ’ টাকা। ফলে বাসা খালি হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাদের আরো অভিযোগ, প্রিপেইড মিটার রিচার্জ নিয়ে আগে গ্রাহকদের কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই মিটার চালু করায় নানা বিড়ম্বনা হচ্ছে। কার্ড রিচার্জ করার পদ্ধতি না জানায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রাহকদের। নরমাল মিটারে যেখানে ৩০০শ’ টাকা বিল আসতো সেখানে বিল আসছে ৫০০শ’ টাকা। বিদ্যুতের লোকজন উল্টাপাল্টা বোঝায়।

এ নিয়ে গাজীপুর নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন বলেছেন, প্রিপেইড মিটার হলো জনসাধারণকে অর্থনৈতিকভাবে মেরে ফেলার একটা অবস্থা। প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের নানা অভিযোগ আমাদের কাছে আসছে। তাই বিড়ম্বনা নিরসন এবং প্রিপেইড মিটার বন্ধের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
গাজীপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার যুবরাজ চন্দ্র পাল বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যেই এই মিটার প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। যাদের বিল বকেয়া রয়েছে তারাই প্রিপেইড মিটার নিয়ে নানা অভিযোগ করছেন। আর কার্ড রিচার্জের জন্য পর্যাপ্ত রিচার্জ স্টেশন এবং মোবাইলের মাধ্যমে রিচার্জের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস. এম. তরিকুল ইসলাম জানান, সরকারের ভালো এই উদ্যোগ যেন জনগণের কষ্টের কারণ হয়ে না দাঁড়ায় এবং ভোগান্তি না হয়, সেজন্য কষ্ট থেকে উত্তোরণের পথ বের করতে দ্রুত ঊর্ধ্বতনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। বিদ্যুৎ সুবিধা কীভাবে সর্বস্তরের জনগণ সহজে পেতে পারে সেটা নিয়েই সরকারের কাজ। মানুষকে কষ্ট দেয়া সরকারের কাজ না। আমাদের অনেক সিস্টেম লস হচ্ছে। তার জন্য জনগণ দায়ী নয়। এটার জন্য পুরাতন মিটারগুলো দায়ী। এগুলো থেকে যেন আমরা বেরিয়ে আসতে পারি, আমাদের সিস্টেম লস যাতে কমে যায় সে জন্যই আধুনিক প্রিপেইড মিটার বসানো হচ্ছে। কিন্তু এই মিটারের কারণে সেটা যদি জনগণের সমস্যার কারণ হয়ে যায়, তাহলে এটা থেকে উত্তরণের কি উপায় তার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status