দেশ বিদেশ

খুলনায় লাইসেন্স ছাড়াই চলছে প্যাথেড্রিন ও মরফিনের ব্যবসা!

রাশিদুল ইসলাম, খুলনা থেকে

১২ জুলাই ২০১৯, শুক্রবার, ৯:০৬ পূর্বাহ্ন

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াই নগরীর অধিকাংশ বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে প্যাথেড্রিন, মরফিন ও রেকটিফাইড স্পিরিটের ব্যবহার চলছে। এসব অননুমোদিত ড্রাগের যথেচ্ছ ব্যবহার চললেও খুলনার মাদক নিয়ন্ত্রণ অফিস এ যাবৎ কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি। কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে লাইসেন্স না নিয়েই এতদিন অবৈধভাবে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করেছে খুলনার অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। কিন্তু হাসপাতাল পরিচালনার বর্তমান নীতিমালায় মাদকের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হওয়ায় অসম্পূর্ণভাবে লাইসেন্সের আবেদন করেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে হাসপাতাল মালিকরা। ফলে, একবছর মেয়াদের লাইসেন্সের আবেদন করেই নির্ধারিত সময় পার করে ফেললেও তার  কোনো সুরাহা করতে পারেনি খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ অনুসারে কোনো ফার্মেসিতে প্যাথেড্রিন, মরফিন, রেকটিফাইড স্পিরিট মজুত অথবা বিক্রি করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর হতে লাইসেন্স সংগ্রহ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ছাড়া যেসব সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন করা হয় সেসব হাসপাতাল ক্লিনিকে বাধ্যতামূলকভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর হতে মাদকের লাইসেন্স সংগ্রহ করার বিধান রয়েছে।
স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর ও বিপিএমপিএ সূত্রে জানা যায়, খুলনা মহানগরী ও জেলায় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের সংখ্যা শতাধিক। যার মধ্যে খুলনা মহানগরীতে ৬০টির বেশি হাসপাতাল ক্লিনিক রয়েছে যারা অপারেশন করে। এর মধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্লিনিকের সংখ্যা মাত্র ২০টি, যার মধ্যে ৩টি সরকারি। এদিকে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আবু নাসের হাসপাতালের মাদকের লাইসেন্স থাকলেও সদর হাসপাতলের লাইসেন্স নবায়ন হয় না ৫ বছরের বেশি সময়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনা অফিস থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত খুলনা জেলায় মাদকদ্রব্য লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৩৩টি ফার্মেসির এবং সরকারি বেসরকারি মিলে মাত্র ২০টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স আছে যা মোট সংখ্যার ২০ শতাংশের কম।
এদিকে, লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে প্যাথেড্রিন, মরফিন বা রেকটিফাইড স্পিরিট ব্যবহার ও মজুত রাখলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় অবৈধ এসব ড্রাগ পাওয়া গেলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসকে ফোন দিলেও তারা আসেনি। সমপ্রতি নগরীর খানজাহান আলী রোডে ন্যাশনাল হাসপাতালে নারকোটিক্স লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও সেখানে প্যাথেড্রিন পায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও ভ্রাম্যমাণ আদালত। তৎক্ষণাত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস খুলনাকে জানালেও তারা ঘটনাস্থলে আসেনি। কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ক্লিনিক মালিক বলেন, তারা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স আগে কখনই নিতেন না। মাঝে মাঝে তারা ঝামেলা করলে কয়েকজনকে খুশি করলেই হতো। কিন্তু এখন হাসপাতালে মাদকের লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হওয়ায় এ অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তাদের পরামর্শেই অসম্পূর্ণ আবেদন করে রেখেছেন কাল ক্ষেপণের জন্য। খুলনা জেলা ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক মো. আব্দুর রশীদ বলেন, আমরা কোনো হাসপাতাল ক্লিনিকে অভিযান চালাই না। আমরা শুধু ফার্মেসিগুলোতে যাই। অনুমোদনহীনভাবে যারা প্যাথেড্রিন, মরফিন, ইফিডরিন সংগ্রহ মজুত ও বিক্রি করে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই। কিন্তু এর মূল দায়িত্ব মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। হাসপাতাল ক্লিনিকে এর যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করা ও লাইসেন্স দেয়ার দায়িত্ব তাদের।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, আমরা কোনো হাসপাতাল ক্লিনিক ও ফার্মেসিতে অভিযান চালাই না, এটা ওষুধ প্রশাসনের কাজ। আমরা লাইসেন্স দেই আর তারা তদারকি করে। খুলনা জেলার সিভিল সার্জন এসএম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোনো হাসপাতাল ক্লিনিকে লাইসেন্সবিহীন প্যাথেড্রিন ও মরফিন রাখলো কি না, ব্যবহার করলো কি না- এটা দেখার স্পেশাল দায়িত্ব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। আমরাও যখন সার্বিক বিষয় তদন্ত করি তখন এটাও দেখি কিন্তু এটার মূল দায়িত্ব মাদক অফিসের।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status