প্রথম পাতা

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ

ঘণ্টায় আসছে সাত রোগী

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

১১ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:২৬ পূর্বাহ্ন

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহরূপ নিচ্ছে। ঘণ্টায় সাতজনের বেশি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত  হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭২ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন। চলতি জুলাই মাসে গড়ে প্রতিদিন ১৩৮ জনের উপরে ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন। ১০ই জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩৮৪ জন। জুন মাসে ১৭৫০ জন চিহ্নিত হয়েছেন। এবছর চিকিৎসকসহ এই পর্যন্ত তিন জন মারা গেছেন। আর ৩ হাজার ৪৫৮ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৮৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে। এদিকে এক দশকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩ হাজার ৬৩৪ জন, মারা গেছেন ২৯৯ জন।

৯ই জুলাই সচিবালয়ে এক সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ডেঙ্গুর এই মৌসুমে জ্বর হলে অবহেলা না করে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন । তিনি বলেন, রোগীদের জন্য বলব, আমরা জ্বর হলে অনেক সময় সাধারণ জ্বর মনে করি। ডেঙ্গু জ্বরও রোগীর কাছে সাধারণ জ্বর বলেই মনে হয়। যে কোন জ্বরকে তারা যেন সাধারণ জ্বর মনে না করেন, অবহেলা না করেন। চিকিৎসকের পরামর্শ নেন, ডেঙ্গু পরীক্ষা করেন। যদি পরীক্ষা করে দেখা যায় ডেঙ্গু নেগেটিভ তবেই সাধারণ বা অন্য কোনো জ্বর হতে পারে। ডেঙ্গু পজিটিভ হলে ডেঙ্গুর বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।  ডিজি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ডেঙ্গু চিকিৎসায় গাইডলাইন তৈরি করেছি। অনেকে অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য ডেঙ্গুতে অন্যরকম চিকিৎসা দেন। সেটাও কিন্তু রোগীর জন্য খারাপ হতে পারে। কাজেই রোগীদের জন্য পরামর্শ জ্বর হলে অবহেলা করবেন না। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার আগেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসছেন হাসপাতালে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, চলতি বছর হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় ডেঙ্গু বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু মশার উপদ্রব বাড়ে। কিন্তু এবার যেহেতু আগেই বৃষ্টি হয়েছে তাই মশার উপদ্রব আগ থেকেই দেখা গেছে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে। জমে থাকা বৃষ্টির পানি থাকলে মশার প্রজনন বাড়ে। তাই বাড়ি বা বাড়ির আঙিনার কোথাও যেন পরিষ্কার পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে। এ ছাড়া যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত ও অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। অ্যাসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ব্যথার ওষুধ খাওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ৪ থেকে ৫ দিন জ্বর থাকলে ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

রাজধানীর ধানমন্ডি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৭৩ জন, ইবনে সিনা হাসপাতালে ২০ জন,  বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে ৪০ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ৪৬ জন, ইসলামী হাসপাতাল কাকরাইলে ৩৯ জন, আজগর আলী হাসপাতালে ২০ জন, সালাউদ্দিনে ২৪ জন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭৫ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৩৫ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২০ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী  হাসপাতালে ৫৮ জন, বারডেম হাসপাতালে ১২ জন,  মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ৪৮ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ৩০ জন, বিজিবি হাসপাতালে ২৩ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।  কন্ট্রোল রুম সূত্র জানা গেছে, জানুয়ারিতে ৩৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ফের্রুয়ারিতে এই সংখ্যা ছিল ১৮ জন, মার্চে ১৭ জন, এপ্রিলে ৫৮ জন, মে মাসে ১৯৩ জন, জুন  মাসে ১৭৫০ জন এবং জুলাই মাসে এ পর্যন্ত ১৩৮৪ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে ৬৮৯ জন ছাড়া অন্য রোগীরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়া জ্বরই হোক তা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশার বিস্তার কমাতে হবে। এডিস মশার দুইটি প্রজাতি এডিস ইজিপ্টাই ও এডিস অ্যালবুপিকপকটাসের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে আবার মানুষ থেকে মশার মাধ্যমে আসছে। পরে মশা থেকে আবার মানুষকে সংক্রমিত করছে। একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে বার বার ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অন্যান্য মশা ময়লা নোংরা পানিতে বংশ বিস্তার করলেও এডিস মশা এর ব্যতিক্রম, পরিষ্কার পানিতে ডিম ছাড়ে। সহজে চোখে পড়ে না এমন জায়গার পরিষ্কার পানিতে এ মশারা ডিম ছাড়ে। ফলে শহরে বিশেষ করে অভিজাত এলাকায় এডিস মশা বেশি দেখা যায়।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুলাহ বলেন, মে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। শীতের সময় কমে আসবে। তিনি বলেন, এই সময়ে জ্বর বা গায়ে ব্যথা হলে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। সাধারণ ডেঙ্গু জ্বর তেমন মারাত্মক রোগ নয়। ডেঙ্গু রোগীর যখন বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের প্রমাণ মেলে (যেমন মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ, মলের সঙ্গে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি) তখন একে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বলা হয়। অধিক রক্তক্ষরণের ফলে শরীরের জলীয় উপাদান কমে যায়। ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। জ্বর বাড়লে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অথবা আরো বেশি জ্বর হলে তা কমিয়ে রাখার জন্য সাপোজিটরি ব্যবহার করতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status