দেশ বিদেশ

নানামুখী সংকটে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা

তিনদিন পর ভিসির আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

৯ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:০০ পূর্বাহ্ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের সংকট কাটছেই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার আড়াই বছর পরও নানামুখী সংকটে কলেজগুলো। ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা, একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ না করা, স্বতন্ত্র একাডেমিক ভবন তৈরি না হওয়া, স্বতন্ত্র সিলেবাস প্রণয়ন ও সে সিলেবাসে পরীক্ষা না হওয়া, সাত কলেজের শিক্ষকদের দ্বারা উত্তরপত্র মূল্যায়ন না হওয়াকে বড় সমস্যা বলে দেখছেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। সমস্যাসমূহ নিরসনে বিভিন্ন সময় আন্দোলনও করে তারা। বেশ কয়েকবার অবরোধ করা হয় শাহবাগ ও নিউমার্কেট মোড়। আন্দোলনের পর আশ্বাস মিলে- আবার আন্দোলনে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের। দীর্ঘমেয়াদী সমাধান সহসায় হচ্ছে না বলেও মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো। তারা এর জন্য লোকবল সংকটকে দায়ী করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা যেখানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ হাজার শিক্ষার্থীর নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছি। সেখানে অতিরিক্ত পৌণে দুই লাখ শিক্ষার্থী যোগ হলে স্বাভাবিকভাবেই একটা জটলা তৈরি হবে। তার প্রভাই পড়ছে। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এখনো বেশকিছু নথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে আসেনি। তাই সংকট বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাতে ২০১৭ সালে সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।
 কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সরকারি বাঙলা কলেজ। এসব কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা তখন ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজারের মতো। এদিকে সেশন জট, ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা, ত্রুটিযুক্ত ফলাফল প্রকাশ, বিনা নোটিশে নতুন নিয়ম কার্যকর, সিলেবাস বহির্ভূত প্রশ্নপদ্ধতিসহ নানা সংকট নিরসনে গত ৬ই জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু করে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পাঁচ দফা দাবিতে চলা এ আন্দোলন গতকাল স্থগিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দিতে গেলে ভিসি তাদের দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে এ সিদ্ধান্ত হয়। শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবি হলো- ফলাফল প্রকাশের দীর্ঘায়ন পরিহার করে ৯০ দিনের মধ্যে সব বিভাগের ত্রুটিমুক্ত ফলাফল একসঙ্গে প্রকাশ করা, অনার্স মাস্টার্স ডিগ্রি সব বর্ষের ফলাফলে গণহারে অকৃতকার্য হওয়ার কারণ প্রকাশসহ খাতা পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে; সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন নির্মান করতে হবে, সিলেবাস অনুযায়ী মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রণয়নসহ উত্তরপত্র মূল্যায়ন সম্পূর্ণরূপে সাত কলেজের শিক্ষক দ্বারা করতে হবে এবং সেশনজট নিরসনের লক্ষ্যে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশসহ ক্রাশ প্রোগ্রাম চালু করা। গতকাল পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বেলা ১১টায় ঢাকা কলেজের প্রধান ফটকের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের নিচে অবস্থান নেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে স্মারকলিপি দেন। এসময় তারা ভিসির কাছে নিজেদের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে আন্দোলনের আহ্বায়ক ঢাকা কলেজের ছাত্র মো. আবু বকর বলেন, ভিসি স্যার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের ফলাফল ৯০ দিনের আগেই প্রকাশ করা হবে। তাই এ বিষয়ে বিশেষ পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে, যা বাস্তবায়ন করতে ৪-৬মাস সময় লাগবে এবং চলমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে আগের মতো দেরি হবে না। তিনি বলেন, ভিসির নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁরা নিজ নিজ কলেজে যোগাযোগ করবেন। যে আশ্বাস তাঁদের দেয়া হয়েছে, কলেজে যোগাযোগ করে যদি তার প্রতিফলন দেখা না যায়, তাঁরা আবারও আন্দোলনে যাবেন। সেই পর্যন্ত তাঁদের কর্মসূচি স্থগিত থাকবে। জানা গেছে, বৈঠকে ভিসি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ৯০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশসহ সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এটি কার্যকর হতে ছয় মাস লাগবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, যেসব শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন, তাঁরা নিজ কলেজে এ বিষয়ে আবেদন করতে পারবেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, সাত কলেজের জন্য স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। সাত কলেজের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কলেজগুলোর শিক্ষকেরাই প্রণয়ন করবেন, তাঁদের একাডেমিক সনদেও কোনো পরিবর্তন আনা হবে না। কলেজগুলোর জন্য শিগগিরই একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি। সাত কলেজের সংকট নিরসনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে সরকারের উচ্চ মহলেরও। জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী সাত কলেজের সংকট নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ভিসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের অন্যতম সমস্যা পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়া। সুরাইয়া আক্তার নামে ইডেন মহিলা কলেজের এক ছাত্রী জানান, তিনি ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। গত ফেব্রুয়ারিতে স্নাতক চুড়ান্ত পরীক্ষা দিলেও এখনো ফল প্রকাশ হয়নি। যার কারণে তিনি কোন চাকরিতে আবেদনের যোগ্যতা হারাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ দুই দিক দিয়েই স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতক পাস (ডিগ্রি) কোর্সের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে আছেন। যেমন স্নাতকে (সম্মান) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে সাত মাস আগে। কিন্তু এখনো ফল প্রকাশিত হয়নি। অথচ এসব শিক্ষার্থীর দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা আগামী নভেম্বরে নেয়ার কথা হচ্ছে।


   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status