দেশ বিদেশ
নতুন ঋণ না নেয়ার শর্তে বিশেষ সুবিধা পাবেন খেলাপিরা
স্টাফ রিপোর্টার
৯ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:৩০ পূর্বাহ্ন
ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা বিজ্ঞপ্তির ওপর হাইকোর্টের দেয়া স্থিতাবস্থার আদেশ শর্তসাপেক্ষে দুই মাসের জন্য স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে ঋণ খেলাপিরা বিশেষ সুবিধা পেতে যাচ্ছেন। বিশেষ সুবিধা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের আইনগত বৈধতার প্রশ্নে জারিকৃত রুল দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে বলেছেন আপিল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে যেসব ঋণখেলাপি মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুবিধা নেবেন তারা কোনো ব্যাংক থেকে আর ঋণ নিতে পারবেন না। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এছাড়া, ব্যাংকের ঋণ বিধি ও নীতি-সংক্রান্ত রিটের এই মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি জে.বি.এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এদিন সর্বোচ্চ আদালতে রাষ্ট্র পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আদেশের পর এটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, এটা পলিসি মেটার, শিল্প খাত এর সাথে জড়িত। জাতীয় স্বার্থে সরকার এই সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে, রিটকারীপক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ঋণ খেলাপিদের কাছে যে টাকা আছে, তো আছেই। এখন তারা (ঋণ খেলাপিরা) এই সুযোগটা (বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া বিশেষ সুবিধা) নিয়ে ব্যাংকে যে টাকাগুলো আছে সে টাকাগুলোও নেয়ার পথ তৈরি করেছিল। সে পথ যাতে বন্ধ করা যায়, সেই চেষ্টা ছিল আমাদের। আমার মনে হয় আজকের আদেশের কারণে সেটায় অনেকটাই সফল হয়েছি। ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিলে সরকারের কাছে টাকা আসবে, কিন্তু ব্যাংকের টাকা তারা (নতুন ঋণ) নিতে পারবে না। এর মধ্য দিয়ে আমরা আশা করছি, জনগণের রক্ষিত টাকা রক্ষা করা সম্ভব হবে। মনজিল মোরসেদ আরো বলেন, আদালত আদেশ দেয়ার সময় অ্যাটর্নি জেনারেল আপত্তি তুলে বলেছিলেন, এমন আদেশ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারের কার্যকারিতা থাকবে না। তখন একজন বিচারক বলেছেন, দুই মাসে আর কী হবে। আর আপনি কি নিশ্চয়তা দিতে পারবেন যে এই সুযোগটা দেয়ার পরে বেসিক ব্যাংক, ফার্মার্স ব্যাংকের মত আরেকটা ব্যাংক ধসে পড়বে না? সেটা তো পারবেন না। ব্যাংক পরিচালনায় ‘সৎ লোকের’ নিয়োগ নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে বেঞ্চের একজন বিচারক অর্থ বিভাগের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, সামান্য ঋণের জন্য গ্রামের কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। বড় বড় ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কি ব্যবস্থা নিচ্ছে? বিশেষ শ্রেণিকে সুবিধা দেয়া হচ্ছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিচারক বলেন, ছোট ছোট ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে সবসময় সঠিকভাবে মামলা চলে। কিন্তু ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কী আইনি ব্যবস্থা হয়? আর যেন কোনো বেসিক ব্যাংক, ফার্মার্স ব্যাংক তৈরি না হয়, আমরা এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন! উল্লেখ্য, গত ১৬ই মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ ওই বিশেষ নীতিমালা সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে। এক রিট আবেদনের ধারাবাহিকতায় করা সম্পূরক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১শে মে হাইকোর্ট এক আদেশে ওই নীতিমালার কার্যক্রমের ওপর ২৪শে জুন পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন।