দেশ বিদেশ

নতুন নির্বাচন চায় বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার

৯ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:৩০ পূর্বাহ্ন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জনগণের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে একটি ফ্যাসিবাদি স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের এই ভয়াবহ প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে সরকার। এখান থেকে সরে এসে জনগণের নির্বাচিত পার্লামেন্ট ও সরকার গঠনের লক্ষ্যে অবিলম্বে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছি। মির্জা আলমগীর বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো প্রায় ভেঙে পড়েছে। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার জন্য বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করেছে অত্যন্ত সুচতুরভাবে। বিচারপতি খায়রুল হকের এক রায়ের মধ্য দিয়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে নির্বাচনকালীন তত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার পূণ:প্রবর্তন করে। একে একে সংবিধানের গণতান্ত্রিক বিধানগুলোকে বাদ দিয়ে একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করা এবং রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার মারাত্মক প্রক্রিয়া তারা সম্পন্ন করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় নির্বাচন ব্যবস্থা, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, এমনকি বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ দলীয়করণ করা হয়েছে। ফলে বিচারবিভাগের নিকট জনগণ নূন্যতম আস্থাও হারিয়ে ফেলেছে। বিচার বিভাগের নিকট মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত রায়ে পরিস্কারভাবে বলেছেন- বিচার ব্যবস্থা দলীয়করণের শিকার হয়েছে এবং জনগণ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিম্ম আদালতে আইন মন্ত্রণালয়ের নিরঙ্কুশ প্রভাব নিশ্চিত করা হয়েছে এবং ন্যায় বিচার তিরোহিত হচ্ছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হচ্ছে। উচ্চ আদালতেও এর প্রভাব আমরা দুঃখজনকভাবে দেখতে পাচ্ছি। বিচারপতি সিনহাকে বল প্রয়োগের মাধ্যমে অপসারণ-দেশত্যাগে বাধ্য করার ফলে ভীতি সর্বগ্রাসী হয়েছে এবং দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগের কারণে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটেছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মামলায় এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে ট্রেনে গুলি ছোড়া মামলার রায়ের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুুদন্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ১৩ জনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এই রায় সমগ্র জাতিকে বিস্মিত, হতাশ ও ক্ষুদ্ধ করেছে। আমরা যে কোনো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। আমরা সবসময়ই সন্ত্রাসের ঘটনায় নিন্দা করেছি। প্রতিবাদ জানিয়েছি এবং সুষ্ঠু বিচার চেয়েছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঘটনাগুলিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। তিনি বলেন, ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে সংঘটিত এই হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। অথচ মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে। এই রায়ে মধ্য দিয়ে বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে তা ফুটে উঠেছে। একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় প্রায় সকল কর্মকর্তাকে এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করে তিন বছর পর অভিযোগপত্র দিয়ে ২৫ বছর পর এই আদেশ প্রমাণ করেছে- এই আদেশ ন্যায়বিচার পরিপন্থি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। শুধুমাত্র ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার জন্য একের পর এক গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে, বিরোধী রাজনীতিকে ধ্বংস করে, গণতন্ত্রকে চিরতরে নির্বাসিত করার আয়োজন সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ। জনগণের আশ্রয়ের শেষস্থল বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা, একনায়কতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। যেহেতু বর্তমান পার্লামেন্ট জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়নি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করে নির্বাচনের ফলাফল জবরদস্তি নিজেদের পক্ষে নিয়েছে, তাই জনগণের কাছে জবাবদিহিতার কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে। বিচার বিভাগও এর প্রভাব থেকে মুক্ত নয়।
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, পাবনায় ট্রেনে গুলির ঘটনায় কারোরই মৃত্যু ঘটেনি, সেখানে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই ধরনের রায়ের ঘটনা আমার জীবনে কোনোদিন শুনিনি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এভোকেট জয়নাল আবদীন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status