বিশ্বজমিন
ব্রিফকেসের পরিবর্তে লালসালুতে মোড়া ভারতের বাজেট
কলকাতা প্রতিনিধি
৬ জুলাই ২০১৯, শনিবার, ৮:৩৯ পূর্বাহ্ন
ভারতের প্রথম পূর্ণ সময়ের নারী অর্থমন্ত্রী হিসেবে নির্মলা সীতারমন মোদি সরকারের দ্বিতীয় দফায় প্রথম বাজেট পেশ করার আগেই প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নজির তৈরি করেছেন। শুক্রবার তিনি ব্রিফকেসের পরিবর্তে লালসালুতে মোড়া ফাইলে বাজেট নিয়ে সংসদে এসেছেন। ফলে ৭২ বছরের ইতিহাস ভেঙে অতীত হয়ে গেছে বাজেট ব্রিফকেস। তার আগে অবশ্য রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করে বাজেটের একটি কপি তার হাতে তুলে দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর যতবার বাজেট পেশ হয়েছে, ততবারই অর্থমন্ত্রীরা লাল রঙের ব্রিফকেস নিয়ে সংসদে এসেছেন। স্বাধীনতা উত্তর ভারতে প্রথম বাজেট পেশ হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ২৬শে নভেম্বর। সেই সময় অর্থমন্ত্রী ছিলেন আর কে সন্মুখম চেট্টি। তিনি বাজেট বক্তৃতার কপি একটি লাল রঙের ব্রিফকেসে নিয়ে সংসদে এসেছিলেন। তার পর থেকেই ব্রিফকেসের প্রচলন। অর্থমন্ত্রী বদলের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিফকেস বদলালেও তার মূল কাঠামো, আদল বা রঙে বিশেষ বদল হয়নি। প্রথম বাজেটের পর এবারই প্রথম সেই রীতির পরিবর্তন করলেন নির্মলা সীতারামণ। এর আগে ১৯৭০ সালে নারী অর্থমন্ত্রী হিসেবে ইন্দিরা গান্ধীও বাজেট পেশ করেছিলেন। তবে তিনি পূর্ণ অর্থমন্ত্রী ছিলেন না। সেক্ষেত্রে নির্মলা প্রথম পূর্ণ সময়ের মহিলা অর্থমন্ত্রী হিসেবে বাজেট পেশ করেছেন। ব্রিফকেসের পরিবর্তন নিয়ে দেশটির মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মন্যিয়ম বলেছেন, ভারতের নিজস্ব ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই ব্রিফকেসের পরিবর্তে লালসালুতে মোড়া ফাইলে বাজে নিযে এসেছিলেন অর্থমন্ত্রী। তিনি আরো বলেছেন, এই পরিবর্তন দাসত্ব থেকে সরে আসারই প্রতিফলন। সেই সঙ্গে তিনি এদিনের বাজেটকে পশ্চিমা ভাষায় বাজেট বলতে চাননি। বলেছেন, এটি আসলেই বহিখাতা (লেজার)। এদিন সংসদে দ্বিতীয় মোদি সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য মজবুত দেশের পাশাপাশি মজবুত নাগরিক তৈরি করা। বাজেটে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের আয়-ব্যয়ের হিসেবের পাশাপাশি আগামী পাঁচ বছর নরেন্দ্র মোদি সরকারের আর্থিক নীতি কী হবে, তারও রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী এদিন তার বাজেট ভাষণে বলেছেন, ২০১৪ সালে ভারতের অর্থনীতি যেখানে ছিল ১.৮৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সেখানে তা এখন ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। এ বছরেই তা ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পরিণত হবে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তা ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের অর্থনীতিকে ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ৫ ট্রিলিয়ন (লাখ কোটি) ডলারে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আর্থিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে আর্থিক বৃদ্ধির হার নিয়মিত ৮ শতাংশের কোঠায় থাকতে হবে। নির্বাচনের আগে যে অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ হয়েছিল তার অনেক কিছুই এবারের পূর্ণাঙ্গ বাজে পরিবর্তন করা হয়েছে। এবারের বাজেটে অনেক সংস্কারেরও রূপরেখা হাজির করা হয়েছে। এদিন অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০২২ সালের মধ্যে ভারতের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ এবং ১ কোটি ৯৫ লাখ নতুন বাড়ি তৈরি করা হবে। কৃষিক্ষেত্রে প্রচুর বিনিয়োগের সংস্থান করা হচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। মধ্যবিত্তকে স্বস্বি দিয়ে ৫ লক্ষ রুপি পর্যন্ত আয়ে কর ছাড়ের ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে মধ্যবিত্তদের দেয়া ছাড়ের ঘাটতি ধনীদের উপরে করের বোঝা চাপিয়ে পূরণ করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বার্ষিক ২-৫ কোটি রুপি পর্যন্ত আয়ের ব্যক্তিদের অতিরিক্ত ৩ শতাংশ আয়কর দিতে হবে। বছরে ৫ কোটি টাকার উপরে আয় হলে দিতে হবে ৭ শতাংশ অতিরিক্ত কর। অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থনীতি ও জনগণের দাবি মেটানোর মধ্যে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেছেন নতুন অর্থমন্ত্রী।