বাংলাদেশ কর্নার

টিম হোটেলে বন্ধুত্বের মাঝেও যুদ্ধের ‘লু’ হওয়া

ইশতিয়াক পারভেজ, বার্মিংহাম থেকে

৩০ জুন ২০১৯, রবিবার, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত নেমে এলেন হোটেলের লবিতে। দীর্ঘক্ষণ ধরে তার জন্য চকলেট নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন তিন ভক্ত। দলের তরুণ তারকা ভক্তের জন্য বাড়িয়ে দিলেন দু’টি টিকিট। সোনার হরিণ পাওয়ার মতো তা লুফে নিলেন ভক্ত। পাশে একজনের করুণ আবেদন সৈকত ভাই দেখেননা আরো একটা পান কিনা। তখন পিছন থেকে এসে হিন্দিতে  টিকিট চাইতে লাগলেন ভারতীয় এক সমর্থক, করলেন সেলফির আবদারও। অবস্থাটা এমন হলো   সৈকতকে যেন তুলেই নিবেন তিনি। অবস্থা বেগতিক দেখে অনুরোধ করা হলো সেই ভারতীয়কে থামতে। এবার তেড়ে এলেন, জানতে চাইলেন কেন তাকে ছবি তুলতে দেয়া হবেনা। তাকে থামিয়ে রক্ষা করলেন হায়াত হোটেলের নিরাপত্তাকর্মীরা। গতকাল থেকে দুই দলের সমর্থকদের দখলে এখন এই হোটেল। যে  যেভাবে পাড়ছেন সেলফি শিকারে ব্যস্ত। সেই সঙ্গে ২ তারিখের ম্যাচে কে জিতবে তার আলোচনাও চলছে জোরোসোরে । শুধু দর্শকরাই নয়, দুই দেশের ক্রিকেটার ও সংবাদকর্মীরা দেখা হলেই আলোচনায় সেই ম্যাচ! কী হবে?  সৈকত জানেন বাস্তবতা তারপরও হুংকার ঠিকই দিলেন। বললেন, ‘ টুর্নামেন্টের এমন একটা অবস্থাতে আছি যে ভারত কিংবা অন্য কোনো দল নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই। ভারত অবশ্যই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। আমরা যে ক্রিকেট খেলছি ওটা খেলতে পারলে ভালো কিছুই হবে। নিজেদের খেলা খেলতে পারলেই এজবাস্টনের উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য ভালো থাকবে। আবার সকালে হয়তো উইকেটে মুভমেন্ট থাকবে। আগে বোলিং করলে শুরুর ১০ ওভারে ২-৩ উইকেট বের করতে হবে।’  
লক্ষ্য করার বিষয় বাংলাদেশ নিয়ে দারুণ সমীহ এখন ভারতীয়দের চোখে মুখে। ভারতের দর্শকরা বাংলাদেশ দলকে নিয়ে যে তাদের চিন্তা-ভাবনা বদলেছেন  তা অনেকটাই স্পষ্ট। বিশেষ করে টাইগার ক্রিকেটারদের  খেলার পাশাপাশি ব্যবহারেও বেশ খুশি। গতকালই ভারতের ক্রিকেটাররা উঠেছে বাংলাদেশের সঙ্গে একই টিম হোটেলে। তখন থেকেই একজন ভারতীয় ক্রিকেটারও আসেননি ভক্তদের কাছে। তবে মাশরাফি, তামিমদের  সঙ্গ পেয়েছেন খুব সহজেই। টিম হোটেলে উঠেই টাইগার অধিনায়কের সঙ্গে দেখা হয়েছে মহেন্দ্র সিং  ধোনির। ভারতের সাবেক এই অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ খোশ গল্পেও মেতেছিলেন। দু’জন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে তুলেছেন ছবিও। তবে  সেই ছবির হাসির আড়ালে ছিল যুদ্ধের উত্তাপ।
ভারত এরই মধ্যে  ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছে। আজ ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলেই তাদের  শেষ চারে খেলা  নিশ্চিত হয়ে যাবে।  সেটি হলে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটি তাদের কাছে হয়তো গুরুত্বপূর্ণ হবেনা। তাই অনেকের ধারণা বাংলাদেশকে জিতিয়ে দিবে ভারত। এমন ধারণার প্রতিবাদ করলেন ভারতের এক সংবাদকর্মী। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের কথা বলে আসলে দুই দলকেই ছোট করার চেষ্টা চলছে।  বাংলাদেশ ও ভারতের লড়াই এখন মর্যাদার। ভারত কেন চাইবে এত ভালো খেলে হারতে। আর বাংলাদেশ দারুণ দল তারা নিজেদের দিনে যে কাউকে হারাতে পারে। তাই তারা ভারতের বিপক্ষে জিতলে কোনো  ভাবেই তা অবাক হওয়ার বিষয় না।’
গতকালই শেষ হয়েছে টাইগারদের পাঁচ দিনের লম্বা ছুটি। সাউদাম্পটনে আফগানদের হারিয়ে বসেই থাকতে হয়েছে তাদের। কারণ বার্মিংহামে অনুশীলনের জন্য মাঠ পায়নি তারা। যে কারণে ছুটিতে যে যার মত ঘুরে বেড়িয়েছেন। আজও এজবাস্টনে সুযোগ নেই অনুশীলনের। কারণ ভারত-ইংল্যান্ড মুখোমুখি হবে এখানে। তাই অন্য কোনো মাঠের ব্যবস্থা করা হয়েছে টাইগারদের জন্য। কাল সেই মাঠেই অনুশীলনে  যোগ দিবে দলের সবাই। কেমন কাটলো ছুটি! তার প্রভাবই কতটা পড়বে দলের উপর? এ নিয়ে সৈকত বলেন, ‘আসলে আমার মনে হয় আমরা যেভাবে ম্যাচ খেলছিলাম বড় ?টুর্নামেন্টে ব্রেক দরকার ছিল। সেটা কাটিয়ে সবাই হোটেলে ব্যাক করছে। কাল অনুশীলন শুরু করবো। ব্রেকটা দরকার ছিল।’  সৈকত ছুটি পেয়ে যে কতটা লাভবান তা জানালেন অন্যভাবেও। কতদিন হলো আপনারা এখানে?  এমন প্রশ্নে সৈকত বলেন, ‘ আমরাতো সেই  মে মাসের ১ তারিখে দেশ ছেড়েছি। বুঝেন কি অবস্থা! ছুটিটা কাজে এসেছে খুব।’
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের আগে কেউ  সৈকতের নাম সেইভাবে চিন্তাই করেনি। তবে আয়ারল্যান্ডে বদলে গেছে তার ভাগ্য। হঠাৎ করেই সুযোগ পেয়েছিলেন দলে। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ম্যাচজয়ী ঝড়ো এক ইনিংস খেলে পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন বিশ্বকাপে জায়গা। তাইতো তো সেই ম্যাচের কথাও বললেন তিনি। ‘হ্যা, আয়ারল্যান্ডে  একটা ম্যাচ বদলে দিয়েছে।’  সেই ত্রিদেশীয় সিরিজেই নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা তুলে নেয় বাংলাদেশ। যার অনুপ্রেরণা কাজ করছে বিশ্বকাপেও। তাই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে পারলে লক্ষ্য থাকবে ‘আসল ট্রফিটাই’।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status