ভারত

কলকাতার ডায়েরি

ডেঙ্গুর মশা খুঁজছে ড্রোন

পরতিোষ পাল

২৯ জুন ২০১৯, শনিবার, ১২:৩৫ অপরাহ্ন

কলকাতায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে এবার কাজে লাগানো হচ্ছে ড্রোন। গত বছর কলকাতার বেশ কিছু এলাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্তÍ হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।  এবার তাই আগেভাগেই সতর্ক হয়েছে কলকাতা পুরসভা। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশে কয়েক মাস ধরে শহরের পাঁচটি বরো এলাকায় (কয়েকটি ওয়ার্ড নিয়ে একটি বরো)  ক্যামেরা লাগানো ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালানো হয়েছে।  ড্রোন ক্যামেরার তোলা ছবিতে ধরা পড়েছে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার বংশবৃদ্ধির চিত্র। কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ-সহ পুর স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দেখানো হয়েছে সেই সব ছবি। পুরসভার স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তপন কুমার মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গত বছর কলকাতার যে সব বরো এলাকায় ডেঙ্গি রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল, মূলত সেখানকার উঁচু বাড়ির ছাদে, পরিত্যক্ত কারখানায় ও জঙ্গলে ড্রোনের সাহায্যে ছবি তোলা হয়েছে। ৪৮৪টি ছবির অনেকগুলিতেই ধরা পড়েছে এডিস মশার বংশবিস্তার। স্বাস্থ্য উপদেষ্ট জানিয়েছেন, ড্রোন ক্যামেরার ছবি এবং রিপোর্ট নিয়ে বৈঠকে আলোচনার পরে ঠিক হয়েছে, পুরসভার পতঙ্গ বিশেষজ্ঞ দল সেই ছবি দেখে মশা নিধনের প্রক্রিয়া স্থির করবে। আর দুর্গম স্থানে ও বহুতলের ছাদে ড্রোনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে মশা মারার তেল।

জ্যোতি বসু স্মরণে মিউজিয়াম

ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি কমিউনিষ্ট নেতা হিসেবে পরিচিত জ্যোতি বসু। পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ তিন দশক তিনি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। একসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী করার জন্য তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। তার মৃত্যুর পর জ্যোতি বসুর স্মরণে মিউজিয়াম ও গবেষণা কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কসবাদী কমিউনিষ্ট পার্টি। সেজন্য বামফ্রন্ট আমলেই নিউ টাউনে জমি কেনা হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে সরকার বদলের পর তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসায় আর সেই জমি হস্তান্তর করা হয়নি। এবার জ্যোতি বসুর জন্মদিন ৮ জুলাইয়ের আগেই যাতে সেই জমি হাতে পাওয়া যায় সেজন্য সমস্ত ছুৎমার্গ ভুলে বাম নেতারা বৈঠক করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য অন্য একটি জমি নেবার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু মার্কসবাদী কমিউনিষ্ট পার্টির নেতারা তাতে রাজি হননি। বামফ্রন্ট আমলেই নিউটাউনে ৫ একর জমি কিনেছিল মার্কসবাদী কমিউনিষ্ট পার্টি। ঠিক হয়, সেখানে জ্যোতি বসু ব্যবহার্য্য বিভিন্ন জিনিস রাখার পাশাপাশি জ্যেতি বসু সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড সোস্যাল স্টাডিজ  গড়ে তোলা হবে। বাম নেতারা  মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন,  নির্দিষ্টভাবে কেনা জমি তাদেরই দিতে হবে। সব টাকা তারা আগেই দিয়ে দিয়েছিলেন। শুধু  জমি হস্তান্তর করেনি সরকার। পার্টির নেতারা একাধিকবার হিডকো চেয়ারম্যান এবং পুর নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। এদিন অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিনের আগেই জমি হস্তান্তরের আশ্বাস দিয়েছেন। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দলের পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী, পলিটব্যুরোর সদস্য রবীন দেব ও শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য।

কাটমানি নিয়ে নচিকেতার গান

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখন কাটমানি শব্দটি নিয়ে চলছে জোর তোলপাড়। সরকারি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ থেকে, মানুষের কাছ থেকে নেতারা কমিশন বাদ কিছু টাকা কেটে রাখার অঘোষিত নিয়ম চালু করেছিলেন।  সঙ্গে জোরজবরদস্তি তোলা আদায় করে চলেছে শাসক দলের ছোটবড় সব নেতা। এই কাটমানি ও তোলার দাপটে সাধারণ মানুষ যে অতীষ্ঠ সেটা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুধাবন করেছেন। আর তাই সম্প্রতি দলের নেতা-কর্মীদের এক বৈঠকে  ‘কাটমানি’র টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তার পর থেকে  রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে। চাপের মুখে তৃণমূলের অনেক নেতা মুচলেকা দিয়েছেন টাকা ফেরত দেবেন বলে। অনেকে ইতিমধ্যেই টাকা ফেরত দিতে শুরু করেছেন। আবার অনেক নেতাই ভয়ে বাড়ি ছেড়ে লুকিয়ে রয়েছেন। আর এই কাটমানির প্রভাব নিয়েই এবার গান লিখেছেন নচিকেতা চক্রবর্তী। নিজেই সেই গানে সুর দিয়ে তা ইউটিউবে লোডও করে দিয়েছেন। তার পর থেকে সেই গান নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে ঘুরছে।  সেই আবহকেই এবার সুরে বাঁধলেন নচিকেতা। বৃদ্ধাশ্রম গানের স্রষ্টা এবার শুনিয়েছেন,  খেয়েছেন যারা কাটমানি, দাদারা অথবা দিদিমণি, এসেছে সময়... ফেরত দিন, আসছে দিন...। রীতিমত কাটমানি নিয়ে কাটাছেঁড়া করেছেন শিল্পী। নেতা-মন্ত্রী-আমলা, কাউকেই ছাড় দেওয়া হয়নি। নচিকেতা বলেছেন, এমন গান এই প্রথম লিখলাম, তেমন তো নয়। যখনই এমন পরিস্থিতি এসেছে আমি লিখেছি। সত্যি কথাটা জোর দিয়ে বলেছি। মানুষের মনের কথা গানের মাধ্যমে সঠিক মাত্রার ‘স্যাটায়ার’ -এর তড়কা লাগিয়ে সকলের সামনে নিয়ে আসার জন্য নচিকেতাকে অশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিজেপির সাংসদ ও গায়ক বাবুল সুপ্রিয়। নচিকেতার কাটমানি নিয়ে গানের একটি ভিডিও নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে পোষ্টও করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তবে নিজেকে এখনও মমতার অনুগামী জানিয়ে নচিকেতা বলেছেন, দলীয় নেতাদের বিভিন্ন কাজকর্মে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তিতে একটা প্রভাব তো পড়ছিলই। মমতা এই কাটমানি ফেরত দেওয়ার কথা বলে নতুন একটা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বিজেপির এনকাউন্টার তত্ত্ব

পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার স্বপ্নে বিভোর ভারতীয় জনতা পার্টির নেতারা। তৃণমূল কংগ্রেস ভেঙ্গে নেতা কর্মীদের দলে আনার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় বিজেপির রাজ্য নেতা সায়ন্তন বসু ও রাজু বন্দ্যেপাধ্যায়। এনকাউন্টার তত্ত্বকে সামনে এনে আলোড়ন তৈরি করেছেন। বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথের রাজ্য উত্তরপ্রদেশে এই এনকাউন্টার তত্ত্ব ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশে এনকাউন্টারে বেশকিছু ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ অবশ্য  নিহতদের দুস্কৃতী বলে দাবি করেছে। এই নিয়ে দেশ জুড়ে প্রবল সমালোচনাও হয়েছে। এবার সেই তত্ত্বকেই পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতিবাজদের মোকাবিলায় হাজির করেছেন রাজ্যের বিজেপি নেতারা। রাজ্য বিজেপির সম্পাদক সায়ন্তন বসু পশ্চিমবঙ্গে দুষ্কৃতীরাজ বন্ধ করতে এনকাউন্টারে ভরসা রেখে বলেছেন, কোনও দুষ্কৃতীকে রেয়াত করা হবে না। হয় গ্রেপ্তার করা হবে, নয়তো এনকাউন্টার করে মারা হবে। এ ছাড়া বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেছেন, অপরাধ করে কোনও দুষ্কৃতীকে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। আরেক বিজেপি নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ও পুলিশকে ‘এনকাউন্টার’-এর পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত ও তোলাবাজদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করুন। প্রয়োজনে এনকাউন্টার করুন। রাজনৈতিক মহলে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় এলে কি ফিরে আসবে সত্তরের দশকের নৈরাজ্যের ছবিটি।

নামাজ ঠেকাতে হনুমান চালিশা

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখন ধর্মকে যে কোনও ভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করে ফেলা হচ্ছে। গত লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির সাফল্যের পর থেকে এটা বেশি বেশি করে ঘটে চলেছে। আর তাই এবার জুম্মাবারে রাস্তার উপরে বসে মুসলিমদের নামাজ পড়ার যে দীর্ঘদিনের রীতি চলে আসছে তাকে ঠেকাতে বিজেপি উঠেপড়ে লেগেছে। বিজেপি যুব মোর্চার নেতাদের দাবি, মুসলিমরা যদি রাস্তা আটকে নামাজ পড়তে পারেন তবে আমরাও রাস্তা আটকে হনুমান চালিশা পড়বো। যেমন বলা তেমন কাজ। সম্প্রতি বিজেপি যুব মোর্চার নেতা ও কর্মীরা হাওড়ায় পথ আটকে হনুমান চালিশা পাঠ করেছে।  বিজেপির যুব মোর্চা নেতা ও পি সিং বলেছেন, মমতার রাজত্বে আমরা দেখেছি জিটি রোড সহ বড় বড় রাস্তা আটকে শুক্রবারে নামাজ পড়া হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ সময় মত নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছাতে পারেন না। এমনকি মুমূর্ষু রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সও যেতে পারে না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতদিন এই অবস্থা চলবে ততদিন আমরাও পথ আটকে হনুমান চালিশা পাঠ করবো। যুব মোর্চার নেতা দেবজিৎ সরকার জানিয়েছেন, রাস্তা আটকে নামাজের প্রতিবাদে আমাদের এই হনুমান চালিশা পাঠের আসর মাঝে মাঝেই বসবে। তবে বিজেপি বিরোধীদের মতে, রাজ্যে বিভেদের রাজনীতিকে উসকে দিতেই বিজেপি এ সব শুরু করেছে। মুসলিম নেতাদের মতে, জুম্মাবারে বহু মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়েন। তাদের মসজিদে জায়গা দেওয়া যায় না বলেই অল্প সময়ের জন্য তারা রাস্তার ধার ঘেষে নামাজ পড়েন। এটা বহু দিন ধরেই চলে আসছে। এতদিন এ বিষয়ে কেউ কোনও কথা বলেন নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status