দেশ বিদেশ

১৬ বছর ধরে চলছে মামলা ফের পেছাল যুক্তি তর্কের শুনানি

স্টাফ রিপোর্টার

২৭ জুন ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

ঢাকার নিম্ন আদালতে ১৬ বছর ধরে চলছে রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের নূরুল ইসলাম হত্যা মামলার কার্যক্রম। গতকাল ঢাকা মহানগর ৪র্থ অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে ছিল এই মামলার যুক্তি তর্কের শুনানি। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা শুনানির জন্য সময় আবেদন করেন। ঢাকা মহানগর ৪র্থ অতিরিক্ত দায়রা জজ মাকসুদা পারভীন রাষ্ট্র পক্ষের আবেদন আমলে নিয়ে আগামী ১০ জুলাই মামলার যুক্তি তর্ক শুনানির পরর্বতী তারিখ নির্ধারণ করেন। আদালতে আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ.এন.এম আবেদ রাজা ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন পিপি সাইফুল ইসলাম হেলাল ও অ্যাসিস্টেন্ট পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান। আইনজীবী এ.এন.এম আবেদ রাজা বলেন, মামলাটি আজ যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য ছিল। কিন্তু রাষ্ট্র পক্ষের আবেদনের কারণে আজও যুক্তিতর্ক শুনানি হলো না। আগামী ১০ই জুলাই পরর্বতী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে মামলাটি চলছে। রাষ্ট্রপক্ষের প্রস্তুতি না নেয়ার কারণে মামলাটি দীর্ঘসূত্রিতার ঘটনা ঘটছে। আশা করি মিথ্যা মামলায় আদালতের রায়ে শাহজালাল(৮০), কাওসারী খাতুন(৬০) ও নাসিমা বেগমসহ(৫২) মামলার সব আসামি বেকসুর খালস পাবেন। কারণ আসামি পক্ষ এই মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, যাকে হত্যা করা হয়েছে বলে বাদী মামলা করেছে। প্রকৃতপক্ষে তাকে কেউ হত্যা করেন নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তিনি আসলে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। অপরদিকে, ৪র্থ মহানগর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের অ্যাসিস্টেন্ট পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান চৌধুরী বলেন, পুলিশ প্রথমে এই মামলাটি মিথ্যা মামলা হিসেবে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করে। পরে বাদীর না রাজির আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি পুনঃতদন্তে গেলে পাঁচ জনকে অভিযুক্ত করে পুলিশ আদালতে চার্জশিট প্রদান করে। মামলা বিলম্বের কারণ হিসেবে বাদীর অসহযোগিতা ও যথাসময়ে সাক্ষী না আসাসহ বেশকিছু যৌক্তিক কারণকে দায়ী করেন। উদাহরণ হিসেবে বলেন, বাদী মামলা করেন ২০০২ সালের ৩০ ডিসেম্বর। কিন্তু জবানবন্দি দেন ২০০৬ সালের ১৭ই আগস্ট। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চিকিৎসক সাক্ষী দেন ২০১৫ সালে। খুব শিগগিরই মামলাটির রায় হবে। মামলার আসামি নাসিমা বেগম বলেন, আমি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। আজও হাসপাতাল থেকে মিথ্যা মামলার হাজিরা দিতে আদালতে এসেছি। ২০০২ সালের ৩০ ডিসেম্বর আপন দুই ভাই এর মধ্যে ঝগড়া হয়। বড় ভাই নুরুল ইসলাম, অন্যজন জালাল উদ্দিন। বসতবাড়িতে ছোট বোন সেনোরা লেট্রিন স্থাপন করতে গেলে বড় ভাই নূরুল ইসলাম বাধাঁ দেন। ছোট ভাই জলিল উদ্দিন ঘটনাস্থলে এসে বড় ভাই নূরুল ইসলামের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হন এবং সেখানেই বোনকে ল্যাট্রিন স্থাপনের নির্দেশ দেন। হঠাৎ দু’ ভাইয়ের কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে নূরুল ইসলাম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কান্না কাটির শব্দ শুনে পাশের বাড়ি থেকে ছুটে আসেন বোন কাওসারী খাতুন। কয়েকজন মিলে ধরাধরি করে ঘরে নিয়ে মাথায় পানি ঢালেন। অবস্থার অবনতি হলে মুমূর্ষ নূরুল ইসলামকে নেয়া হয় মিটফোর্ড হাসপাতালে। কিন্তুু জরুরী বিভাগের ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানান, হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণ আগে নুরুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেছেন।
ক্ষোভে নিহতের পুত্র মো. মিন্টু আমি সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলা ঠুকে দেন।
মামলার অপর আসামি শাহজালাল(৮০) বলেন, জমি জমা সংক্রান্ত একটি মিথ্যা মামলায় আমার স্ত্রীর বড় ভাই মৃত নূরুল ইসলামের ছেলে মো. মিন্টু মিয়া আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিছে। অথচ যখন ওর পিতা মৃত্যুবরণ করে তখন আমি বাড়িতেও ছিলাম না। এই বৃদ্ধ বয়সে এখন আর হাজিরা দিতে আসতে মন চায় না। তবুও আসতে হয়। এখন তো মরার সময়। কবে আল্লাহর ডাক আসে, সেই প্রতিক্ষায় দিন কাটাই। আয় রোজগার নেই। দুই ছেলে যা আয় করে, তা দিয়ে সংসারই চলে না। তার মধ্যে আবার প্রতিমাসে মামলার খরচ। মামলার অপর আসামি বৃদ্ধা কাওসারী খাতুন বলেন, আমার পিতা ফজল শেখ এক কাঠা জমি মৃত্যুর আগে লিখে দেন। লিখে দেয়া অংশটি ছিল রাস্তার সাথে। এই বিষয়টা আমার ভাইয়েরা স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে নি। প্রতিনিয়ত এই জমি বিক্রি করে দিতে বলত। বড় ভাই নূরুল ইসলাম যেদিন মারা গেছেন সেদিন রাতেও মামলার বাদী মৃত ভাইয়ের ছেলে মো. মিন্টু বলেন, আমাদের কাছে সম্পত্তি বিক্রি করে দাও। যদি সম্পত্তি বিক্রি কর, তবে তোমার ও তোমার স্বামী শাহজালালের নাম মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। কিন্তু আমি রাজি হইনি।
নথি থেকে জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ ডিসেম্বর মো. মিন্টু কামরাঙ্গীরচর থানায় পিতৃ হত্যার দায়ে মামলাটি করেন। মামলার আসামীরা হলেন মো. জালাল উদ্দিন, শাহজালাল, দেলোয়ার হোসেন (হাশেম), নাছিমা বেগম ও কাওসারী বেগম। মামলার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, তাদের বসত বাড়ির পাশে ল্যাট্রিন স্থাপনের কাজ শুরু করে আসামিরা। এই খবর শুনে তার পিতা নূরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে বাধা দেন এবং নিষেধ করেন। আমার পিতার নিষেধ অমান্য করে আসামিরা গালমন্দ করতে থাকে। হঠাৎ শাহজালালের হুকুমে জালাল উদ্দিন তার পিতাকে কিল ঘুষি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে নূরুল ইসলাম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর দেলোয়ার হোসেন (হাশেম), নাছিমা বেগম ও কাওসারী বেগম বুকের উপরে পারা দেন। পরে মিটফোর্ট হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status