দেশ বিদেশ

জামানত হারালেন সাবেক চিপ হুইপ

দশ বছরে আওয়ামী লীগের ভোটার কমেছে ৪২ হাজার

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

২৬ জুন ২০১৯, বুধবার, ৯:২২ পূর্বাহ্ন

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০০৮ সালে বগুড়া-৬ সদর আসন থেকে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন করেছিলেন। ওই ভোটে তিনি ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯৩ ভোট পেয়ে ধানের শীষ মার্কায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি আলহাজ মমতাজ উদ্দিন নৌকা মার্কায় ভোট পেয়েছিলেন ৭৪ হাজার ৬৩৪। পরের দশম সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী জোটের পক্ষে মনোনয়ন পান জাতীয় পার্টি নেতা নূরুল ইসলাম ওমর। ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগের প্রার্থী সোমবার হয়ে যাওয়া উপ-নির্বাচনে ভোট পেয়েছেন ৩২ হাজার ২৯৭। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিএনপি হয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বগুড়া-৬ সদর আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে তিনি ২ লাখ ৭ হাজার ২৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মাহজোট প্রার্থী নূরুল ইসলাম ওমর লাঙ্গল প্রতীকে ভোট পেয়েছিলেন ৪০ হাজার ৩৬২ ভোট। নির্বাচিত হওয়ার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ না নেয়ায় ওই আসনে ২৪শে জুন উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনের বিএনপি আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিসহ মোট সাত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ফলাফলে বিএনপি প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ ৮৯ হাজার ৭৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী টি জামান নিকেতা ৩২ হাজার ২৯৭ ভোট পান সাবেক বিরোধীদলীয় চিপ হুইপ জাতীয় পার্টির নেতা নূরুল ইসলাম ওমর মাত্র ৭ হাজার ২৭১ ভোট পেয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ১০ বছরে আসনে ভোটারবৃদ্ধি এবং দলের কর্মী বৃদ্ধির পরও এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট কমে যাওয়ায় বিভিন্ন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নেতা ও কর্মীদের মধ্যে। কড়া সমালোচনা করছেন সাধারণ মানুষও। ফেসবুকে নামে বেনামে নানা মন্তব্য করছেন অনেকেই। মাত্র ১৭৫ দিন পরে এসেই একই ব্যক্তির ভোট নেমে আসে ৭ হাজারে। হারান জামানত। পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১০ বছরের আওয়ামী লীগের ভোট কমেছে বগুড়া সদর আসনে ৪২ হাজার। লাঙ্গল এককভাবে ভোট করতে এসে ভোট মাত্র ৭ হাজার। অপরদিকে গেল উপ-নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে শরীক দল জামায়াত এখানে নীরব ছিল। ফলে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হলেও দুই লাখ ৭ হাজার ২৫ ভোট থেকে নেমে এসেছে মাত্র ৮৯ হাজার ৭৪২ ভোটে।
জামানত হারালেন সাবেক চিপ হুইপ: কথায় কথায় উন্নয়নের ফুলঝুড়ি আওরাতেন জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক বিরোধী দলীয় চিপ হুইপ নূরুল ইসলাম ওমর। সদর আসনে নির্বাচিত হওয়ার পর মূলত এই আসনে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন চোখে না পড়লেও সভা-সমাবেশে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন এমন কথা অহরহ বলতেন। তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো তে আলোচক হিসেবে যেতেন। ফলে তিনি টকশো ওমর নামেও বেশ পরিচিতি পান। তিনি ২০১৮’র ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের মহাজোটের হয়ে নির্বাচনের লড়ে ভোট পেয়েছিলেন ৪০ হাজার ৩৬২ ভোট। এবারের  উপ-নির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী টি জামান নিকেতা মনোনয়ন পেলেও জাতীয় পার্টির ওই নেতা এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ফলাফলে মাত্র ৭ হাজার ২৭১ ভোট পেয়ে জামানত হারান। এতে তিনি আবারো আলোচনায় আসেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া বাকি পাঁচ প্রার্থীও তাদের জামানত হারিয়েছেন।
ইভিএম পদ্ধতিতে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রার্থী কোনো প্রশ্ন তোলেন নি। ভোটের ফলাফল নিয়েও কোনো সন্দেহ প্রকাশ করেনি কেউ। নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ৩৪.৫৫% থাকলেও ভোটাররা ইভিএমে ভোট দিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছে। নুরুল ইসলাম ওমরসহ জামানত হারিয়েছেন আরো ৪ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ মুসলীম লীগের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম হারিকেন প্রতীকে পেয়েছেন ৫৫৪ ভোট। তিনি গত ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ) থেকে নির্বাচন করে ৫ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মনসুর রহমান ডাব প্রতীকে ৪৫৬ ভোট পেয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ কবির আহম্মেদ নির্বাচনের কয়েকদিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। ট্রাক প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৬৩০ ভোট। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনহাজ মণ্ডল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপেল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২ হাজার ৯২০ ভোট। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানা গেছে নির্বাচনে প্রদত্ত মোট ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ ভোট না পেলে সেই প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। সোমবার (২৪শে জুন) অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৭০ ভোট। সেই অনুযায়ী জামানত ফেরত পেতে প্রার্থীকে ১৬৭৩৩ ভোট পেতে হবে। কিন্তুআওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া অপর পাঁচ প্রার্থীর কেউ সেই পরিমাণ ভোট পান নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status