প্রথম পাতা
লাফ দিতে গিয়ে বগিতে পিষ্ট সানজিদা-ফাহমিদা
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
২৫ জুন ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:২২ পূর্বাহ্ন
সিটেই বসা ছিলেন সানজিদা ও ফাহমিদা। দুর্ঘটনার সময় যখন ট্রেন দুলছিল তখন তারা দাঁড়িয়ে যান। পড়ে যখন ট্রেনের বগি দু’বার উল্টে যাচ্ছিলো তখন তারা জানালা দিয়ে বাইরে লাফ দেন। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। বগিটি গিয়ে আছড়ে পড়ে তাদের ওপর। পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান তারা দু’জন। সানজিদা ও ফাহমিদা দু’জনই সিলেটের সরকারি নার্সিং কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী। ঢাকায় একটি সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য তাদের ডাক পড়েছিলো। এ কারণেই তারা রাতের ট্রেনে ঢাকা যাচ্ছিলেন। বসা ছিলেন পিছনের একটি বগিতে। দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের নার্সদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বাড়িতে চলছে কান্নার রোল। তাদের এমন মৃত্যু মেনে নেয়নি কেউ। গতকাল দুপুরে যখন লাশ দু’টি সিলেটে পৌঁছে তখন কান্নায় ভারী হয়ে উঠে পরিবেশ। ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহপাঠীরা তাদের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বলেন- নার্সিং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই শিক্ষার্থী ছিলো সবচেয়ে মেধাবী। এ কারণে নার্সিং বিষয়ে কোনো সেমিনার হলেই ডাক পড়তো তাদের। সহপাঠীদের সবার প্রিয় ছিলো তারা। নিহত সানজিদা আক্তার বাগেরহাট জেলার মোল্লার হাট থানার আতজুরি ভানদর খোলা গ্রামের মো. আকরাম মোল্লার মেয়ে এবং ফাহমিদা ইয়াসমিন ইভা সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালালপুরের আবদুুল্লাহপুর গ্রামের আবদুল বারীর মেয়ে। তারা দু’জনই সিলেট নার্সিং কলেজের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক মানবজমিনকে জানিয়েছেন- জালালপুরের ফাহমিদা ইয়াসমিন ইভার লাশ ইতিমধ্যে তার পরিবার সদস্যরা বাড়িতে নিয়ে এসেছেন আর বাগেরহাটের সানজিদা আক্তারের লাশ গ্রহণ করতে নার্স নেতৃবৃন্দ কুলাউড়া হাসপাতালে যান। সেখানে লাশ গ্রহণ করে তারা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। বাদ আসর জানাজা শেষে লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এদিকে- গতকাল দুপুরে শহরতলীর জালালপুর গ্রামে পৌঁছ নিহত ইভার লাশ। এ সময় কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে জালালপুরের পরিবেশ। গ্রামের মানুষই নয়, পরিবারকে সান্ত্বনা জানাতে ছুটে যান এলাকার মানুষ। এ সময় লাশ দেখে কাঁদেন সবাই। বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ইভার বাবা-মা। জানালেন- গত শুক্রবার শেষবারের মতো বাড়িতে এসেছিলো ইভা। যাওয়ার সময় বলে গেছে ঢাকায় যাবে। ফিরে এসে বাড়ি আসবে। কিন্তু আর জীবিত ফিরলে না। লাশ হয়ে ফিরলেন ইভা। ইভার বাড়ি সিলেটে হলেও তিনি কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করতেন। মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। জালাল স্কুল থেকে এসএসসি ও কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হন তিনি। এরপর ভর্তি হন নার্র্সিং কলেজে। ওসমানী মেডিকেলে আহত ২৪ জন: ট্রেন দুঘর্টনার খবর পেয়েই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রস্তুতি শুরু করেন ডাক্তাররা। হাসপাতালে ছুটে যান জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায়। এছাড়া ক্যাজুয়েলিটি বিভাগের সিনিয়র ডাক্তাররা ছুটে আসেন হাসপাতালে। তখন রাত ১ টা। সবাই প্রস্তুত। ৮টি এম্বুলেন্স পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বিশেষ কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে। ট্রেন দুঘর্টনার মোকাবিলায় আহতরা যাতে চিকিৎসা পান সে কারণে নেয়া হয় এই প্রস্তুতি। রাত দেড়টা থেকে আসতে শুরু করেন রোগীরা। এর মধ্যে বেশির ভাগ রোগীই হচ্ছেন মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত। কারো কারো হাত ও পা ভেঙে গেছে। রোগী আসা মাত্র জরুরি বিভাগ থেকেই শুরু হয় চিকিৎসা দেয়া। ভোররাত পর্যন্ত মোট ২৮ জন আহতকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে ৪ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জরুরি বিভাগ থেকেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর বাকি ২৪ জনকে ভর্তি করা হয় ওসমানি হাসপাতালের ক্যাজুয়েলিটি বিভাগে। রাতে সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায় জানিয়েছেন- ‘রোগীরা আসার আগেই আমরা প্রস্তুত ছিলাম। ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশে সব প্রস্তুতিই রাখা হয়েছিলো। এ কারণে রোগী আসা মাত্রই তারা সেবা পেয়েছেন। আমরা প্রায় ২০০ রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম।’ তিনি বলেন- ঘটনার খবর পেয়েই আমরা সিলেট থেকে এম্বুলেন্স পাঠাতে শুরু করি। এর বাইরে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমা হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। গতকাল বিকালে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন- যারা ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তারা ভালো রয়েছেন। এদের মধ্যে কেউ আশঙ্কাজনক অবস্থায় নেই। সিলেট জেলা বিএনপি’র বিবৃতি: কুলাউড়ার বরমচালে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি ও অসংখ্য যাত্রী সাধারণ আহত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিলেট জেলা বিএনপি। সরকারের অব্যবস্থাপনার কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তারা। একই সাথে দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন নেতৃবৃন্দ। সোমবার এক বিবৃতিতে সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম ও সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, বৃহত্তর সিলেট নিয়ে সরকারের উদাসীনতা ও দেশ পরিচালনায় চরম অব্যবস্থাপনার কারণে শাহবাজপুরের ব্রিজ ভেঙে কয়েকদিন থেকে সারা দেশের সঙ্গে সিলেটের বাস যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।