প্রথম পাতা

ট্রেনে যাত্রী ছিল ৩ গুণ গতি ছিল বেশি

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

২৫ জুন ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:২০ পূর্বাহ্ন

সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনে উঠেছিল অতিরিক্ত যাত্রী। খোদ রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় তিন গুণ যাত্রী ছিল ওই ট্রেনে। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে প্রচণ্ড গতিতে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। যাত্রী বোঝাই ট্রেনের গতি বেশি থাকার কারণেই কুলাউড়ার বরমচালে  এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন সবাই। একই সঙ্গে রেল লাইনটিও ছিল দুর্বল। সংস্কার হয়নি অনেক দিন। স্থানীয়রা নিজেরাও দেখেছে অনেক নাট খোলা রয়েছে। কোনো ক্লিপ ছিল না। এ নিয়ে কয়েক দিন আগে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাসও দিয়েছে। যোগাযোগ করেছে স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও। এরপরও ওই অংশ মেরামত করা হয়নি। তবে রেল সচিব মোফাজ্জেল হোসেন গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেননি। শুধু বলেছেন, তদন্তের পর জানা যাবে কেন এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার পর কয়েক জন যাত্রী মানবজমিনকে জানিয়েছে, ট্রেনের গতি ছিল বেশি। কারণ, প্রায় ৪০ মিনিট বিলম্বে ওই ট্রেনটি সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। ওই এলাকায় যাওয়া মাত্রই ট্রেনের গতি কমানো হয়। পাহাড়ি এলোমেলো রাস্তা। এ কারণে সাতগাঁও এলাকা পর্যন্ত ট্রেন কম গতিতে যায়। ফলে ওই এলাকা পাড়ি দিতে সোয়া দুই ঘণ্টার মতো সময় লাগে। কিন্তু ট্রেনের গতি কমানো হয়নি। যখন ট্রেনটি দুর্ঘটনা কবলিত হয় তখনো চালক ট্রেন থামাতে পারেননি। গতির কারণে ছিটকে যাওয়া ৫টি বগি রেখেই চালক প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে ট্রেন থামান। ততক্ষণে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে ট্রেনের পেছনের দিকের ৫টি বগি। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী ওই ট্রেনের প্রায় ১৭টি বগি ছিল। এতে নির্ধারিত আসনে যাত্রী ছিল প্রায় ৯০০ জন। এর বাইরে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে আরো দিগুণ যাত্রী ওঠে। কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল স্টেশনের অনেক যাত্রী ছিলেন। সব মিলিয়ে যাত্রী হবে প্রায় আড়াই হাজার। ট্রেনের ভেতরে এসব যাত্রী ব্যাগেজ ছিল। ফলে অতিরিক্ত যাত্রী থাকায় গত তিন দিন ধরে ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলো প্রেসার নিতে পারছিল না। ট্রেনের চালকরাও এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ওপর বিরক্ত ছিলেন। কারণ- প্রেসার (শক্তি) কম থাকার কারণে ট্রেন নিয়ন্ত্রণে রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন চালকরা। গত শুক্রবার রাতেও সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া উপবন ট্রেন কম প্রেসারের কবলে পড়েছিল। এ কারণে প্রায় ৩ ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়েছিল ওই রাতের ট্রেন। এরপর থেকে প্রতিদিনই ঘটছে এ ধরনের ঘটনা। ট্রেন দুর্ঘটনার পর স্থানীয় কয়েকজন যুবক জানিয়েছেন, বরমচালের কালা মিয়ার বাজার পাড়ি দিলেই বড়ছড়া রেল ব্রিজ। ওই ব্রিজটি বেশি বড় না। ট্রেনের একটি বগির আয়তনের চেয়ে ছোট। ব্রিজের দুই পাশে রেলওয়ে সড়কে ক্লিপ ছিল না। এ কারণে নড়বড়ে ছিল রেল লাইন। বিষয়টি গত ঈদের সময় তাদের নজরে আসে। এ নিয়ে তারা ফেসবুকে সতর্কতামূলক পোস্ট দেন। স্থানীয় রেলওয়ে স্টেশনে এ বিষয়টি জানিয়েছেন। এরপরও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেয়ায় এ ঘটনা। ঘটনা কবলিত বড় ছড়া ব্রিজ ও তার আগের রেলের স্লিপার ও পাত সরে গেছে। চ্যাপ্টা হয়ে গেছে অনেক স্থানে। ফলে ট্রেনটির গতি বেশি থাকার কারণে পেছনের ৫টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পাশে পড়ে যায়। দুঘর্টনার সময় বিকট একটি শব্দ হয়। সচরাচর ট্রেন চলাচলের সময় এরকম শব্দ তারা পান না। কিন্তু রোববারের রাতের শব্দ বিকট হওয়ায় আশপাশের লোকজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে দেখেন ট্রেনের ৫টি বগি ছিটকে পড়ে গেছে। এ সময় তারা আহতদের আর্ত চিৎকার শুনেন। রেললাইনের পাশের নন্দনগরের বাসিন্দা ফারুক মিয়া জানিয়েছেন, ব্রিজের পাশে জোড়ার মধ্যে পাত দুটি লাগানো থাকে। এদিকে একটি নাট, ওদিকে আরেকটি নাট থাকার কথা। কিন্তু কোনো নাটই ছিল না। এ কারণে ট্রেন যাওয়ার সময় ওই এলাকায় কাঁপে বেশি। নরুল আমিন চৌধুরী  জানিয়েছেন, অন্যদিনের চেয়ে কালকে গতিও একটু বেশি মনে হয়েছে। মহলাল এলাকার বাসিন্দা পারভেজ বলেন, রাতে ট্রেনটিতে বিপুলসংখ্যক যাত্রী ছিল। অন্য সময়ের তুলনায় অনেক যাত্রী। এদিকে সিলেট থেকে আখাউড়া পর্যন্ত রেললাইন ঝুঁকিপূর্ণ অনেক আগে থেকেই। এ কারণে সিলেটবাসী এই রুটে ডাবল লাইন করার দাবি জানিয়ে আসছে। ঝুঁকিপূর্ণ একটি লাইন এবং তাও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে সিলেট-আখাউড়া রেলপথ। বেশ কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন সময় বগি লাইনচ্যুত্যের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে ত্রুটি সারিয়ে ট্রেন চলাচল করা হয়। স্থায়ী কোনো সমাধান দেয়া হয় না। কখনো পাহাড়ি ঢলে রেললাইনের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। আবার কখনো ব্রিজ ভেঙে যায়। এই রুটের অধিকাংশ স্লিপারেই নেই নাট-বল্টু। জীবনবাজি রেখে প্রতিদিন ছুটে চলে ৬টি আন্তঃনগরসহ কয়েকটি লোকাল ট্রেনের যাত্রীরা। ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথে পারাবত, জয়ন্তিকা, পাহাড়িকা, উদয়ন, উপবন ও কালনী এক্সপ্রেস নামের ৬টি আন্তঃনগর ট্রেন প্রতিদিন দুবার করে ১২ বার আসা-যাওয়া করে। হবিগঞ্জের শাহজিবাজারে ৭৩ নম্বর সেতু, লস্করপুরে ১০২ নম্বর সেতু, শায়েস্তাগঞ্জে ১০৫ নম্বর সেতু, বাহুবলের রশিদপুরে ১১৪ নম্বর সেতু, কমলগঞ্জের ভানুগাছে ১৮৩ নম্বর সেতু এবং ছাতকে ৩২ নম্বর সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই সেতুগুলোকে মেরামতের তালিকায় রেখেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status