শেষের পাতা

রোহিঙ্গা সমস্যার জন্য জাতিসংঘও দায়ী: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কূটনৈতিক রিপোর্টার

২১ জুন ২০১৯, শুক্রবার, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

কোনো সমস্যাই একদিনে সৃষ্টি হয় না, রোহিঙ্গা সমস্যাও নয়। দীর্ঘদিনে রোহিঙ্গা সংকট পুঞ্জীভূত হয়েছে। এর জন্য জাতিসংঘও  দায়ী মন্তব্য করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ওই সঙ্কট যখন ধীরে ধীরে ঘণিভূত হচ্ছিলো, তখন জাতিসংঘ অনেক কিছু গোপন রেখেছিল। এ জন্য নিশ্চয়ই তারাও দায়ী। গতকাল সকালে রাজধানীতে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি ফর রেড ক্রস আইসিআরসি এবং কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতি (ডিকাব)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দিনব্যাপী সেমিনারের উদ্বোধন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইস্কাটনস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ মিলনায়তনে জেনেভা কনভেনশনের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারের উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের পদ্ধতিগত ভুল ছিল এবং এ জন্যই তারা সংকট সমাধানে সফল হতে পারেনি- জাতিসংঘের এমন উপলব্দির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, এটি একদিনে হয়নি। অনেকদিন ধরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছিলো। জাতিসংঘ তখন সেই বিষয়ে সজাগ হয়নি। দুনিয়া থেকে সংঘাত দূর করতে মানসিকতা তৈরি জরুরি উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ সেটাতে বিশ্বাস করে। কিন্তু সেই অনুপাতে কাজ করে না। মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট ভয়াবহ রূপ ধারণের পর জাতিসংঘ কিছু বক্তব্য দিয়েছে। এর বেশিরভাগই বাংলাদেশের জন্য। মন্ত্রী অভিযোগ করেন যেখানে তাদের (জাতিসংঘের) কাজ করা দরকার, সেখানে তাদের উদ্যোগ-অবস্থান অত্যন্ত দুর্বল। জেনেভা কনভেনশন আইন লঙ্ঘিত হয়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, অনেকক্ষেত্রে যখন মানবতা আক্রান্ত হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, তখন যারা আইন তৈরি করেছেন, তাদের অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নেন। ফলে আইনগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারে যারা নিরীহ লোক, যারা যুদ্ধে কোনোভাবেই জড়িত নয়, তাদের মানবিকতা লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই রোহিঙ্গা সঙ্কটের জন্য মিয়ানমারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সন্ত্রাস দমনের তথাকথিত নাম করে তারা শুধু মুসলিম নয় অন্য ধর্মের রোহিঙ্গাদেরও নিজ দেশ থেকে বিতারিত করেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেমিনারে দেয়া বক্তৃতায় বলেন, ৭০ বছর আগে মানবতাকে রক্ষায় জেনেভা কনভেনশন হয়েছিল, ওই সময়ে বিশ্ব ঐকমত্যে পৌঁছেছিল এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। আজ আমরা জেনেভা কনভেনশনের জন্মতিথি পালন করছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন সারাবিশ্ব হত্যাযজ্ঞ মেতেছিল তা প্রতিহত করতেই বিশ্ব নেতারা ওই কনভেনশন করেছিল। এটি খুবই ভাল কনভেনশন। বিশ্বে ভাল ভাল আইন আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু আইনগুলোর বৈষম্যমূলক ব্যবহার ঠেকানো যায়নি। এ জন্য কনভেনশন নিয়েও মানুষ প্রশ্ন তুলছে। মন্ত্রী বলেন, কনভেনশন আছে, আইন আছে, কিন্তু যুদ্ধ- বিগ্রহে সাধারণ মানুষকে বিশ্ব রক্ষা করতে পারছে না। যেমনটি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ঘটেছে। মন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানী বাহিনী এখানে কোন আইন বা কনভেনশনের ধার ধারেনি। বাংলাদেশ এ জন্য সবচেয়ে বেশী ভুক্তভোগী মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, এখন মিয়ানমারে যা ঘটছে সেটি ওই একই রকম ঘটনা। সেখানে মানবতা আক্রান্ত। বর্মীদের আত্যাচার থেকে প্রাণে বাঁচতে ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অস্থায়ী আশ্রয় নিয়েছে। জেনেভা কনভেনশনের আইনগুলো যদি মানা হত তাহলে এ ধরণের ঘটনা রোধ করা যেতো মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, আজ মিয়ানমার, ফিলিস্তিন যেখানেই মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে সেখানেই প্রতিবাদে সোচ্চার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্যই বিশ্ব বিবেক এবং গণমাধ্যমকে এটি করতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status