শেষের পাতা

বাণিজ্য ঘাটতি ছাড়ালো ১ লাখ কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২১ জুন ২০১৯, শুক্রবার, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

একদিকে আমদানি বাড়ছে। অন্যদিকে সে অনুযায়ী অর্জিত হয়নি রপ্তানি আয়। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেনে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশের পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার  কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের এ অবস্থা অর্থনীতির জন্য বড় উদ্বেগের বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। এসব বড় বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যোগান দিতেই আমদানি করতে হচ্ছে। এতে আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সেই তুলনায় রপ্তানি আয় বাড়েনি। যার কারণে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ১০ মাস শেষে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩ হাজার ৩৪৩ কোটি ডলার। বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৪ হাজার ৭১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে এপ্রিল মাস শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা।

তবে গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্যে ঘাটতি আরো বেশি ছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বাণিজ্য ঘটতি ছিল ১ হাজার ৫২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

এদিকে আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বেতন ভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ৮৬৪ কোটি ডলার। বিপরীতে বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ৫৬৭ কোটি ডলার। এ হিসাবে সেবাখাতে দেশে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯৬ কোটি ডলার, যা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৯১ কোটি ডলার।

অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৩১১ কোটি ডলার। যার প্রবৃদ্ধি ১০.১ শতাংশ। পণ্য ও সেবা বাণিজ্যে যে পরিমাণ ঘাটতি হয়েছে, তা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাব ঋণাত্মক (-) রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এর পরিমাণ কিছুটা কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫০৬ কোটি ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৭৭৯ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত মানে হলো নিয়মিত লেনদেনে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকা মানে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হবে। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আমদানি চাপের কারণে ডলারের দাম বাড়ছে। ফলে চলতি বছরে কয়েক দফা ডলারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বছরের শুরুর দিন আন্তঃব্যাংক রেটে ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। এখন ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।

তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৩১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার, এর মধ্যে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ১৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের চেয়ে এফডিআই বেড়েছে ২৬.৬১ শতাংশ আর নিট বেড়েছে ১৩.৩১ শতাংশ।

এদিকে আলোচিত সময়ে এফডিআই বাড়লেও দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপক হারে কমেছে। গত অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ৫৭ শতাংশের ওপরে কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে শেয়ারবাজারে মাত্র ১৪ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যা তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৩৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

সর্বশেষ গত ১২ই জুন হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৮০ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ২৬১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status