এক্সক্লুসিভ

অভিনব কায়দায় যৌন হয়রানি

জিয়া চৌধুরী

২১ জুন ২০১৯, শুক্রবার, ৯:০৮ পূর্বাহ্ন

বেসরকারি এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর বাসা রাজধানীর শাহজাহানপুর এলাকায়। বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতে সিএনজি অটোরিকশা ব্যবহার করেন তিনি। এজন্য বাসা থেকে খিলগাঁও কমিউনিটি সেন্টার এলাকা পর্যন্ত রিকশায় আসতে হয় তাকে। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে মহাখালীর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান তিনি। মাঝে-মধ্যে সিএনজি অটোরিকশা পেতে দেরি হলে কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় অপেক্ষা করতে হয়। গত মে মাসে অটোরিকশার জন্য অপেক্ষমাণ থাকা অবস্থায় বিব্রতকর এক ঘটনার শিকার হন তিনি। রাস্তায় যথেষ্ট জায়গা থাকা সত্তেও সাদা রংয়ের একটি প্রাইভেট কার তার গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী কিছুটা গাড়ির পাশ থেকে সরে গেলেও আরো চাপিয়ে দেয়া হয় প্রাইভেট কার। গাড়ির জানালার কাঁচ নামিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে ছোঁয়ার চেষ্টা করে গাড়িচালক। এমন সময় একটি সিএনজি অটোরিকশা পাওয়ায় দ্রুত চলে যান ওই শিক্ষার্থী। ঘটনার শেষ এখানে নয়। সাদা রংয়ের ব্যক্তিগত গাড়িটির চালক এরপরও আরো দুইদিন এমন ঘটনা ঘটান। সবশেষ গত ১৩ই মে খিলগাঁও কমিউনিটি সেন্টারের সামনের এলাকায় ময়লার ভাগাড়ের পাশে সিএনজি অটোরিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। সেদিনও সাদা রংয়ের প্রাইভেট কারটি তাকে ফলো করে পাশে গিয়ে থামে। রাস্তার পাশের ময়লার ট্যাংকের সাথে তরুণীকে চাপিয়ে গাড়ি দাঁড় করায় এবং ড্রাইভিং সিটে থাকা চালক তরুণীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে যৌন হয়রানির চেষ্টা করে। এরপর ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা লোকটি গাড়ির স্টার্ট বন্ধ না করে গাড়ি থেকে নেমে তরুণীকে বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল কথা বলে। ওই শিক্ষার্থী তখন চিৎকার শুরু করলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে পালিয়ে যায় গাড়িচালক। তবে সেদিন কৌশলে গাড়ির নম্বরপ্লেটের ছবি তুলে রাখেন ওই শিক্ষার্থী। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যৌন পীড়ন করার অপরাধে খিলগাঁও থানায় একটি মামলা করেন মেয়েটির বাবা। মামলার এজাহারে দেয়া গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নম্বরের (ঢাকা মেট্রো-গ-২৫-৮২৫৫) সূত্র ধরে কাজ শুরু করে খিলগাঁও থানা পুলিশ। মামলা দায়েরের ঠিক এক মাস পর গাড়ির নম্বরের সূত্র ধরে আব্দুস সাত্তার (৪০) নামের ওই গাড়িচালককে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আব্দুস সাত্তার এক চিকিৎসকের ব্যক্তিগত গাড়িচালক ছিলেন। তাকে আনা-নেয়ার ফাঁকে রাইড শেয়ারিং অ্যাপেও যাত্রী তুলতো সে। এর ফাঁকে সড়কের ধারে গাড়ি পার্ক করতো। যানবাহনের অপেক্ষায় থাকা নারীদের টার্গেট করে থামানো হতো গাড়ি। সুযোগ বুঝে তাদের গায়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করতো গাড়িচালক আব্দুস সাত্তার। তবে অবস্থা বেগতিক দেখলেই গাড়ি স্টার্ট করে দ্রুত পালিয়ে যেত। এর মধ্যে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জনকে হয়রানি করার কথা পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে আব্দুস সাত্তার। তার গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহনে। এসব বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) খিলগাঁও জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম সোহাগ মানবজমিনকে জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ওই তরুণীর বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে গাড়ির নম্বরের সূত্র ধরে আমরা বিআরটিএ-তে গাড়ির মালিকের ঠিকানা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠাই। তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী গাড়ির মালিকের সাথে যোগাযোগ করে গত ১৭ই জুন গাড়ির মালিক এবং তার ড্রাইভারকে থানায় হাজির করা হয়। তাৎক্ষণিক অপরাধীকে শনাক্তকরণের জন্য ভিকটিম ঐ তরুণীকে ডাকা হয়। পরে উপস্থিত ৭/৮ জনের মধ্য থেকে ওই গাড়িচালককে অপরাধী হিসেবে শনাক্ত করে সে। গাড়ির চালক আব্দুস সাত্তার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমরা জানতে পারি এর আগেও আরো অনেকের সাথে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটায় সে। তবে, সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। এসব ঘটনার ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে অভিযোগ গেলে অপরাধ প্রবণতা আরো কমে আসবে বলেও জানান তিনি। হয়রানির শিকার তরুণীর বাবা ও মামলার বাদী জানান, আমার মেয়ে যে ঘটনার শিকার হয়েছে তা যেন আর কারো সাথে না ঘটে। এজন্য আমি দ্রুত থানায় লিখিত অভিযোগ দেই। তবে আমার মেয়ে গাড়ির নম্বরপ্লেটের ছবি তুলে রাখায় তাকে ধরা সম্ভব হয়েছে। এরকম সব মেয়েদের নিজেদের রক্ষায় এগিয়ে আসারও অনুরোধ করেন তরুণীর বাবা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status