ইংল্যান্ড থেকে

রবিন হুডের শহরে বড় আশায় মাশরাফি

ইশতিয়াক পারভেজ, নটিংহ্যাম থেকে

২০ জুন ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

‘ল্যান্ড অব রবিন হুড।’ নটিংহ্যাম কিন্তু এই নামেই পরিচিত। ওহ! রবিন হুডকে তা আপনারা সবাই জানেন। তাই আলাদা করে বলার কিছুই নেই। গরীবের এই মহানায়ক কল্পনা নাকি সত্যি তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে, সেই সঙ্গে বিতর্কও। সেই সব গল্প না হয় আরেক দিন হবে। কিন্তু নটিংহ্যামের মানুষ কিন্তু ঠিকই তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। এই রূপকথার নায়ক ধনীর সম্পদ লুট করে গরীবদের বিলিয়ে দিয়েছেন। ফিরিয়েছেন তাদের মুখে হাসি, জীবনে সুখ। আজ তারই সেই শহরে ক্রিকেটের  বড় মোড়ল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে এই ম্যাচে জিতলে সেফিইনালের স্বপ্ন আরো রঙীন হবে টাইগারদের। রবিনহুডের মতো  দলবল নিয়ে লড়াই করে মাশরাফি বিন মুর্তজাও  কি পারবেন ১৮ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে! বাংলাদেশের সঙ্গে খেলা নিয়ে আস্ট্রেলিয়ার অজুহাতের শেষ নেই। নিজ দেশেতো আমন্ত্রণ করেই না, সুযোগ পেলেই বাতিল করে বাংলাদেশে যাওয়া। বলতে গেলে ভাবটা এমন যে ছোট দলের সঙ্গে খেললে মান যাবে। অস্ট্রেলিয়ার এক সংবাদকর্মীই প্রশ্নটা করলেন। কতটা হতাশার এমন আচরণ! বাংলাদেশ কি প্রমাণ করবে নিজেদের অস্ট্রেলিয়ার সামনে? মাশরাফি বলেন, ‘আমি মনে করিনা এখনো প্রমাণ করার কিছু আছে। তবে খুবই হতাশার যে তারা ট্যুরে আসে না আমাদেরও ডাকে না। বড় দলের বিপক্ষে  খেলতে না পারা সত্যি হতাশার। কারণ এখান থেকে অনেক কিছু শেখার থাকে। তবে এখনই আমাদের সঠিক সময় নিজেদের কে প্রমাণ করার যে আমরা ভালো দল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা অনেক কঠিন তবে জয় অসম্ভব নয়।’

মাশরাফির কথাতেই স্পষ্ট অস্ট্রেলিয়ার মোড়লসুলভ আচরণের জবাব দেয়ার এখনই সুযোগ। তাই জিততে হলে নিজেদের শতভাগই দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আসলে আমদের জিততে হলে  সেরা খেলাটাই খেলতে হবে। তাহলেই সম্ভব হবে  জেতা। কারণ অস্ট্রেলিয়া অসাধারণ দল। বিশেষ করে বিশ্বকাপে তারা অত্যন্ত শক্তিশালী।’ অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দারুণ ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ দল। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে ৩২২ রান তাড়া করে বড় জয় তুলে নিয়েছে টনটনের সমারসেট মাঠে।  সেই জয় কতটা অনুপ্রেরণা হবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে? টাইগার অধিনায়ক অবশ্য মানতে নারাজ যে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে জয় এ ম্যাচে বড় কোনো ভূমিকা রাখবে। অস্ট্রেলিয়া আসলে অন্যরকম দল। ওরা অনেক বেশি প্রফেশনাল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যা হয়েছে তা এ মাঠে উপকার করবে না। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে সবসময়ই ফেভারিট দল। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া ভিন্ন কিছু করে থাকে। আমার কাছে মনে হয়, অন্যতম সেরা দলের সঙ্গে কাল খেলা। এখানে সেরা খেলা ছাড়া আর কোন অপশনই নাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাইতে তাদের বোলিং-এ অনেক বেশি বৈচিত্র্য। তাদের ব্যাটিং-ও অনেক ভালো। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিং-এ যে অবস্থায় ছিলো, সেখানে অস্ট্রেলিয়া থাকলে সাড়ে ৩শ রান করতো। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যে পরিস্থিতি তৈরি করতে পেরেছে, তা অস্ট্রেলিয়াকে করতে দিলে ভিন্ন ধরনের ফল হবে। তাদের অনেক বৈচিত্র্য আছে, আবারো বলছি তারা অনেক বেশি প্রফেশনাল দল।’

গতকাল অনুশীলনে অস্ট্রেলিয়া দল বেশি সময় কাটায় স্পিন আক্রমণ বোকাবেলা করে। তা নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘অনুশীলনে তারা স্পিনারকে বেশি মোকাবেলা করেছে, এটা আমার কাছে মনে হয় যে- এটা পজিটিভও নেয়া যায় নেগেটিভও নেয়া যায়। তারা অন্তত আমাদের স্পিনারদের নিয়ে চিন্তা করছে এটি খুবই ভালো দিক। এখান দিয়েও তাদের অ্যাটাক করার সুযোগ থাকবে আমাদের।’ অন্যদিকে দলের সবার জন্য টাইগার অধিনায়ক ফিল্ডিংয়ে মনোযোগী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ দেখেন আমরা যেমন ফিল্ডিংয়ের কারণে জিতেছি তেমনি হেরেছিও। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দেখেন ৩৩০ হলেও সেটি আমরা তাড়া করে জিততে পারতাম। তা হয়েছে ৩৮০ রান, এটি কিন্তু ভিন্ন বিষয়। ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করা যে কোনো সময় সম্ভব যদি সেটি করতে পারি তাহলে অনেক রান বাঁচানো যায়। অন্তত ২৫ বা ৩০ টা রান। যা পরে বড় হয়ে সামনে আসে। তাই আমার অনুরোধ থাকবে যেন ফিল্ডিংটাতে সবাই আরো মনোযোগী হয়।’

এই ম্যাচের আগে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই অস্ট্রেলিয়ানদের। যদিও তারা সাকিবকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা করেননি বলেই জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সাকিব ছাড়া চোখে পড়ার মতো বড় কোনো পারফরম্যান্স দলের অন্য কেউ দিতে পারেনি। তাই যদি সাকিব আজ ভালো না করে তাহলে কি দল বিপদে পড়বে? এক কথায় সাকিব ছাড়া কি দল অচল! মাশরাফি এমনটি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘মোটেও বাংলাদেশ শুধু সাকিবের উপর নির্ভরশীল নয়। তবে সে অসাধারণ খেলছে। তার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই সে দারুণ ক্রিকেটার। এই বিশ্বকাপে নিজের সেরাটাই খেলে যাচ্ছে। তবে ও ছাড়াও মোস্তাফিজ, সাইফুদ্দিন, মুশফিক, সৌম্য সবাই অবদান রাখছে। আশা করি দল বেশ ভাল অবস্থাতে আছে। এক ম্যাচ খেলার পর অন্য দলকে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। সবার সঙ্গে সবার খেলতে হচ্ছে। ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশন, তাই প্রত্যক ম্যাচে নতুনভাবে শুরু করতে হচ্ছে। কালকের (আজ) ম্যাচটা আলাদাভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ভালো খেলতে হবে। এজন্য আত্মবিশ্বাসটা অনেক জরুরি। তবেই মাঠে গিয়ে আমাদের সেরা খেলাটা খেলতে পারবো।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status