বিশ্বজমিন

মুরসিকে হত্যা করা হয়েছে, দায় নিতে হবে সরকারকে

মানবজমিন ডেস্ক

১৮ জুন ২০১৯, মঙ্গলবার, ১২:৪৯ অপরাহ্ন

মুসলিম ব্রাদারহুডের দাবি, সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে হত্যা করা হয়েছে। তার মৃত্যুকে ভয়াবহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, এই মৃত্যুর দায় নিতে হবে মিশর সরকারকে। মুরসি কারাগারে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পাননি। এর প্রতিবাদে দেশে দেশে মিশরীয় দূতাবাসগুলোর বাইরে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুড। মুরসি মারা যাওয়ার পর মঙ্গলবার কায়রোর পূর্বাঞ্চলে মদিনা নাসর কবরস্তানে তাকে দাফন করা হয়েছে। তার আইনজীবী আবদেল মোনেম আবদেল মাকসুদ বলেছেন, এ সময় মুরসির পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সোমবার আদালতে অচেতন হয়ে পড়েন মুরসি। পরে জানানো হয়, তার মৃত্যু হয়েছে। তার নামাজে জানাজা পড়ানো হয়েছে তোরা জেলখানার হাসপাতাল এলাকায়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা ছিলেন মোহাম্মদ মুরসি। আরব বসন্তের ধারাবাহিকতায় ৩০ বছরের স্বৈরশাসক হোসনি মুবারকের পতনের পর মিশরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় ২০১২ সালে। ওই নির্বাচনে নাটকীয়ভাবে নির্বাচিত হন মোহাম্মদ মুরসি। এটাই সেখানে প্রথম কোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচন। কিন্তু ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেন নি মুরসি। এক গণ প্রতিবাদ ও সামরিক অভ্যুত্থানে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়। ক্ষমতা কেড়ে নেন সেনা প্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। তারপর তিনি প্রেসিডেন্ট হন। ওদিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পর পরই গ্রেপ্তার করা হয় মুরসিকে। তারপর থেকে তিনি জেলেই ছিলেন।

মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ হয়েছে। তবে তারা তাদের নেতা মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুকে একটি হত্যাকা- আখ্যাযিত করে তার জানাজায় গণজমায়েত আহ্বান করেছিল। কিন্তু মঙ্গলবার তাকে দাফন করার সময় মদিনা নাসর কবরস্থান ছিল ফাঁকা। কোনো নেতাকর্মী বা সাধারণ মানুষকে দেখা যায় নি সেখানে। তবে নিজেদের ওয়েবসাইটে মুসলিম ব্রাদারহুড একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে সারা বিশ্বে মিশরীয় দূতাবাসের বাইরে প্রতিবাদে জমায়েত হতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ব্রাদারহুড।

বেশ কয়েক বছর ধরে রিপোর্ট প্রকাশ হচ্ছিল যে, মুরসির সঙ্গে কারাগারে অশোভন আচরণ ও নির্যাতন করা হচ্ছে। তাই অধিকারকর্মীরা বলছেন, তার মৃত্যুকে জেলখানায় নিঃসঙ্গ রেখে তার ওপর পর্যায়ক্রমে দুর্ব্যবহারের অভিযোগের প্রেক্ষাপতে দেখা উচিত। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মুরসির মৃত্যুর দায় এখন মিশর সরকারকে নিতে হবে। তারা তার উপযুক্ত মেডিকেল সেবা ও কারাগারে বন্দির মৌলিক অধিকার দিতে ব্যর্থ হয়েছে।  অন্যদিকে একই রকম বিবৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক আরেক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা বলেছে, সাবেক এই প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর দায় নিতে হবে মিশর সরকারকে। মুরসি মারা যাওয়ার শেষ কয়েক ঘন্টায় সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে তারা।

মোহাম্মদ মুরসির বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। তিনি প্রায় ৬ বছর ধরে জেলে বন্দি ছিলেন। ডায়াবেটিস, লিভার ও কিডনি সহ বিভিন্ন রোগে দীর্ঘদিন ভুগছিলেন তিনি। ২০১২ সালে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি করে হত্যা করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে তিনি ২০ বছরের জেল ভোগ করছিলেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে কমপক্ষে ৬টি মামলা। অন্যদিকে উপসাগরীয় দেশ কাতার সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দাগিরির দায়ে তাকে দেয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন জেল। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে জেলবিদ্রোহ করা, বিচার বিভাগকে অবমাননা করা ও সন্ত্রাসে জড়িত থাকার অভিযোগ। তবে তার সমর্থকরা এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status