বাংলারজমিন
শাহজাদাপুরের দুঃখ সড়কটি!
মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে
১৫ জুন ২০১৯, শনিবার, ৭:৩২ পূর্বাহ্ন
সরাইলের শাহজাদাপুরের মানুষের দুঃখের নাম শাহজাদাপুর-মলাইশ সড়কটি। জীবন যেখানে থমকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে বারবার। হোঁচট খাচ্ছে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা। নিয়মিতই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাদের সাধারণ জীবনযাত্রা। রোগী হয়ে বেরিয়ে পথিমধ্যে লাশ হচ্ছে অগণিত আপনজন। সড়কে শিক্ষার্থী, মহিলা ও শিশুদের অবর্ণনীয় দুঃখ দুর্দশার চিত্র দেখতে হচ্ছে বারবার। শুধু সড়কটির জন্য চিকিৎসক ও শিক্ষকরা এই গ্রামে বদলি হয়ে আসতে চান না। জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের আশ্বাসের ফুলঝুরি ঝরছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু বাস্তবায়ন আলোর মুখ দেখছে না। কবে দেখবে তারও হদিস মিলছে না। সরাইল উপজেলার ৯নং শাহজাদাপুর ইউনিয়নের শাহজাদাপুর, নিয়ামতপুর ও ধাউরিয়া তিনটি গ্রামের সৃষ্টি প্রায় ৮ শতাধিক বছর আগে। বর্তমানে সেখানে ১৭০০-১৮০০ পরিবারের বসবাস। আর জনসংখ্যা প্রায় ২০ সহস্রাধিক। ৮০০ বছর ধরে তারা কাঁদছেন মাত্র ৩ কিলোমিটার শাহজাদাপুর-মলাইশ সড়কটির জন্য। তাদের কান্না কেউ শুনছেন না। সুযোগে আশ্বাসের বাণী দিয়ে ভোট নিয়ে যাচ্ছেন। দুঃখের ভাগ নিতে বেঁকে যাচ্ছেন সাপের মতো। সরজমিনে দেখা যায়, মলাইশ গ্রামের সীমানা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক। বর্ষা ও শুষ্ক দুই মৌসুমেই সমস্যা। তবে বর্ষার পানি বেশি হলে সুবিধা। নৌকায় করে শাহবাজপুর ও মলাইশে আসেন। শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হাঁটা। আর গত বছর দিন ধরে অটোরিকশা। আর ধুলার রাজত্বে অসহায় থাকেন যাত্রীরা। বৃষ্টি হলে সড়কটিতে হাঁটু সমান কাঁদা হয়ে যায়। খালি পায়ে কাদা ভেঙে সড়কটি পাড়ি দিতে হয় তাদের। মহিলা, শিক্ষার্থী ও শিশুদের কি যে অবর্ণনীয় দুঃখ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। চালকদের গাড়ি পার করতে হয় ধাক্কায়। পরনের জামা কাপড় মুহূর্তের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। রোগী ও লাশ নিয়ে যেতে দম বন্ধ হয়ে যায় স্বজনদের। অনেক সময় গর্ভবতী মহিলাদের সন্তান প্রসব হয় সড়কেই। আবার মৃত্যুর ঘটনাতো ঘটছেই। সড়কটির কারণেই অন্য এলাকার লোকজন এ এলাকায় বিয়েশাদী করাতে আগ্রহী হয় না। সক্ষম পরিবারগুলো গ্রাম ছেড়ে পাড়ি জমায় শহরে। আর গ্রাম থেকে সীমাহীন কষ্ট বুকে ধারণ করেই পড়াশোনা করছে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা। সড়কের কাদার ছবি তুলতে দেখে স্থানীয় জনৈক প্রবীণ ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলেন, ‘সারা জীবন অই রাস্তাডা কষ্ট দিল। এইডার লাগি কত শরম পাইলাম। আমডা অহমানি অইয়া অই গেলাম। আর ছবি ওডাইয়া আমডারে অহমানি কইরুইন না।’ সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা বলেন, শুধু শাহবাজপুর-শাহজাদাপুর নয় সরাইল-পানিশ্বর ও রসুলপুর-আজবপুর সড়কের কাজ আমি শেষ প্রান্তে রেখে এসেছি। আল্লাহর চাহেত স্বল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। আর একটু ধৈর্য ধরুন। শাহজাদাপুরের মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হবে।