প্রথম পাতা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিথ্যাচার করছে মিয়ানমার

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১৩ জুন ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ‘মিথ্যাচার’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। বুধবার রাষ্ট্রীয়    অতিথি ভবন পদ্মায় এক কূটনৈতিক ব্রিফিং শেষে মন্ত্রী এ অভিযোগ করেন। বলেন, মিয়ানমার বলেছে, বাংলাদেশের কারণে নাকি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দেরি হচ্ছে। এটা মিথ্যাচার। তাদের ধারাবাহিক প্রোপাগাণ্ডার অংশ। প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ এক পায়ে খাড়া উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে রাখাইনে এখনও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করেনি। আমরা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক পর্যন্ত আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সেখানে তারা পরিস্থিতি উন্নয়নে এবং প্রত্যাবাসনের জন্য কোন কিছুই করছে না। এ অবস্থায় আমরা কূটনীতিক এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের বলেছি, আপনারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ান। আমরা এ-ও বলেছি, সেখানে কেবল রোহিঙ্গা মুসলমানরা আক্রান্ত হয়। মানবতা আক্রান্ত। তারা মাত্র দুটি গ্রাম দেখিয়ে বলছে সব ঠিক আছে এটা্‌ও মিথ্যাচার।

আমরা স্বার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোকে বলেছি, মানবতার প্রতি যদি আপনাদের নূন্যতম দরদ থাকে তাহলে মিয়ানমারের ওপর চাপ দিন। তাদের মিথ্যাচারে কান না দিতেও অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। রোহিঙ্গা পরিস্থিতির সর্বশেষ আপডেট জানাতে গতকাল ওই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে সরকার। এতে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছাড়াও সরকারের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর ২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তার আগে গত কয়েক দশকে এসেছে আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। মোট ১১ লাখ রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, তারা এই সংখ্যা নিয়েও মিথ্যাচার করছে। বলছে, ৫ লাখ রোহিঙ্গা না-কী বাংলাদেশে এসেছে! ’১৭ সালের আগস্টের আচমকা রোহিঙ্গা ঢলের পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করে। চুক্তি মতে, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ওই প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও তা পিছিয়ে গত নভেম্বরে নেয়া হয়।

এ সময়ে রাখাইন প্রস্তুত করার কথা বলা হয়। কিন্তু সেটিও হয়নি। যদিও বাংলাদেশের তরফে সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছিল। ওই সময়ে রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে রোহিঙ্গাদের মনে আস্থা পুণঃপ্রতিষ্ঠিত না হওয়ায়, বিশেষ করে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় তারা কেউ ফিরে যেতে রাজি হয়নি। এটিও অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রত্যাবাসন ঝুলে যাওয়ার অন্যতম কারণ। গত মে মাসের সমাপনীতে জাপানে অনুষ্ঠিত ‘ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলনের একটি সেশনে মিয়ানমারের একজন মন্ত্রী অভিযোগ করেন, বাংলাদেশের অসহযোগিতায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তারা প্রস্তুত কিন্তু বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাচ্ছে না। ওই সম্মেলনে সরকার প্রধানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ অংশ নিয়েছিল। মিয়ানমারের ওই ‘মিথ্যাচার’ এর ব্যাখ্যা দিতেই গতকাল বিদেশি কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ব্রিফিং করা হয়। ব্রিফিং শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, এটা ‘ডাহা মিথ্যা’।

প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার কথা ছিল। কিন্তু ৮০০ গ্রামের মধ্যে মাত্র দুটির পরিস্থিতি ভালো দেখিয়ে মিয়ানমার বলছে, সেখানে কোনো সমস্যা নেই। মন্ত্রী বলেন, তারা যে ‘কথা রাখেনি’ সেটাই আমরা দুনিয়াকে জানিয়েছি। মিয়ানমার বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে ‘মিস ইনফরমেশন’ ছড়ায় অভিযোগ করে মন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের প্রতিবেশী। আমরা রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। কূটনীতিকদের জবাব প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, তারা (বিদেশি কূটনীতিক) আমাদের বলেছেন যে, তারা আমাদের সাথে আছেন। আমরা তাদেরকে বলেছি, মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ান, যাতে তারা সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে বাধ্য হয়। এতে প্রায় সবাই একমত পোষণ করেছেন বলেও দাবি করেন মন্ত্রী। এ সময় বাংলাদেশে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। আমরা বলেছি, বাংলাদেশের পাশে আছি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, ভারত, কানাডা, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন,ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা ব্রিফিংয়ে অংশ নেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status