প্রথম পাতা

দিনভর নাটকীয়তা রাতে আন্দোলন স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার

১২ জুন ২০১৯, বুধবার, ১০:১৫ পূর্বাহ্ন

দিনভর নানা নাটকীয়তার পর রাতে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা। ছাত্রদলের কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে তারা এ ঘোষণা দেন। এর আগে নতুন কমিটি গঠনে একাডেমিক ইয়ার নির্ধারণ করে দেয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনশনে বসেন বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতারা। সোয়া ১১টার দিকে তারা কার্যালয়ের মূলফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে দিনভর প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এ সময় কার্যালয়ে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে তারা কার্যালয় ছেড়ে যাওয়ার চাপ দেন। সে জন্য কার্যালয়ের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্সও ডেকে আনেন। খবর পেয়ে ছাত্রদলের কাউন্সিল ও নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতা সেখানে ছুটে আসেন।

তারা ছাত্রনেতাদের বুঝানোর চেষ্টা করেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারেননি। বরং কয়েকজন ছাত্রনেতা শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে ধাক্কা দেন। ছাত্রদলের একজন মাঝারি সারির নেতাকে পিটিয়ে আহত করেন। বিকালে অসুস্থ রুহুল কবির রিজভীকে দেখতে নয়াপল্টনে যান বিএনপি স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তারা ভেতরে ঢুকে রিজভীর শারীরিক পরিস্থিতির খোঁজ-খবর নিয়ে বেরিয়ে যাবার পর ছাত্রনেতারা আবারও কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন। এ ঘটনায় ছাত্রদলের কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন কমিটির নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে। সন্ধ্যায় এক বৈঠকে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে ডেকে নেয়া হয় গুলশানে। এ বৈঠক শেষে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেন ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা। ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিক বলেন, নেতারা ছাত্রদলের সার্বিক বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। আলোচনা অব্যাহত থাকবে। নেতাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে আমরা আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছি। আশাকরি, পরিস্থিতি বিবেচনা করে শীর্ষ নেতৃত্ব বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেবেন।

বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তালা লাগানোর নেপথ্য কারণ আসলে কি? ছাত্রনেতাদের প্রতিবাদের ধরণ ও নানামুখী প্রচার-প্রচারণার কারণে এমন প্রশ্ন এখন সর্বত্র। বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলকে ঢেলে সাজাতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল করা হয় গত ৩রা জুন। সেই সঙ্গে আগামী ৪৫দিনের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। নতুন কমিটিতে নেতৃত্ব নির্বাচনে শর্ত হিসেবে প্রার্থীদের একাডেমিক ইয়ার নির্ধারণ করে দেয়া হয়। আর এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র নেতারা। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানান, বিরোধী দলের রাজনীতিতে প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে যথাসময়ে কোন সংগঠনেরই কমিটি পুনর্গঠনের সুযোগ পাওয়া যায়নি। প্রকাশ্য রাজনীতিতে প্রশাসনের প্রতিবন্ধকতা ও নেতাকর্মীদের মামলা হামলাজনিত কারণে বারবার চেষ্টা করেও কমিটিগুলো আপডেট রাখা যায়নি। ফলে ছাত্রদল নেতাদের ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পাশাপাশি ও তারা বয়সী হয়ে পড়েছেন।

এতে একদিকে নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের জট লেগেছে, অন্যদিকে নিয়মিত ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্রনেতারা সম্পর্কহীন হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে নানামুখী সমালোচনার শিকার হয়েছে বিএনপি। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের দাবি ছিল ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী সিনিয়র ও মাঝারি সারির নেতাদের। এমনকি ছাত্রদলের তুলনামুলক জুনিয়র নেতৃত্ব ও ছাত্রদল সমর্থক শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদের হাতে ছাত্রদলের নেতৃত্ব ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রদের হাতে ছাত্রদলের নেতৃত্ব ফিরিয়ে দিতে ছাত্রদলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় বিএনপি। রাজনীতির বৃহত্তর স্বার্থে সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের স্যাক্রিফাইসের একটি ইঙ্গিতও দেয়া হয়। এ নিয়ে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে সার্বিক বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পরে তিনি স্কাইপে ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় করেন। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের শর্তযুক্ত করার ঘটনা পুরো পরিস্থিতি পাল্টে দেয়। পরে কাউন্সিল করতে তিনটি কমিটি গঠন করে দায়িত্ব ভাগ করে দেয়ার বিষয়টি জানানো হয়। কমিটিগুলো হলো- নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, বাছাই কমিটি ও আপিল কমিটি। প্রতিটি কমিটি গঠন করা হয়েছে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে।  

ছাত্রদলের সিনিয়র ও মাঝারি সারির নেতারা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিলকে স্বাগত জানালেও নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে একাডেমিক ইয়ার যুক্ত করাকে হটকারি সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচনা করছেন। তারা বলছেন, ছাত্রদলের নেতৃত্ব অবশ্যই ছাত্রদের হাতে যাওয়াই কাঙ্ক্ষিত বিষয়। কিন্তু বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের এটাও বিবেচনা করতে হবে যে, প্রতিকূল পরিবেশের কারণে যথাসময়ে ছাত্রদলের কমিটি পুনর্গঠন হয়নি। ফলে নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের জট তৈরি হয়েছে। ছাত্রনেতারা বলছেন, ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা কয়েকবছর ধরেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল। এক দুই বছর আগে সে কমিটি বাতিল করা হলেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের ছাত্রদলকে যদি ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা থাকে তাহলে তারা একদিন সে উদ্যোগ নিতে পারতেন। নেতৃত্ব জটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সম্প্রতি সিনিয়র নেতারা সবাই একমত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে একটি সুনির্দিষ্ট লিখিত দাবিনামা দেয়া হয়। তার সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময়েও ছাত্রনেতারা একাট্টা হয়ে একই দাবি করেছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, প্রথমে ৬ মাসের জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন ও পরে এক বছরের জন্য একটি স্বল্পমেয়াদী কমিটি করে ছাত্রদলের সিনিয়র ও মাঝারি সারির নেতাদের সম্মানজনকভাবে বিদায় দেয়া যায়। পাশাপাশি তাতে আগামীদিনের নেতৃত্বের বয়সও কমে আসবে।

কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিল ও নতুন কমিটির শর্তে ছাত্রনেতাদের সমস্ত দাবিতে অগ্রাহ্য করা হয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতারা বলছেন, এর মধ্যে দিয়ে অন্তত দেড় শতাধিক সিনিয়র ও মাঝারি সারির নেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যাদের মধ্যে রাজনীতি করতে গিয়ে গুমের শিকার, বারবার কারাভোগকারী, অর্ধশতাধিক মামলার আসামী ও ক্ষমতাসীনদের হাতে হামলার শিকার অনেকেই রয়েছেন। নতুন সিদ্ধান্তের কারণে দেখা যাচ্ছে কেবল সিনিয়র নেতারাই নয়, মাঝারির সারির অনেক নেতার রাজনীতি শেষ হয়ে যাবে। অথচ এ শর্তের মাধ্যমে বিশেষ কিছু অর্জন হবে না। কারণ ২০০০ সালে এসএসসি বা সমমানের যে শর্ত যুক্ত করা হয়েছে তাতে তাদেরও বয়স হয়ে গেছে ইতিমধ্যে ৩৪-৩৫ বছর। তাদের নেতৃত্ব যে কমিটি হবে তারাও সে অর্থে তরুণতর হবে না। শত শত ছাত্রনেতার রাজনৈতিক জীবন অনিশ্চিত করে তোলা নতুন এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কয়েকটি সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন ছাত্রনেতারা। তারা বলছেন, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কয়েকটি গ্রুপ নিজেদের পছন্দের ও অনুগতদের হাতে ছাত্রদলের নেতৃত্ব তুলে দিতে চান। এইজন্য তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভুলবার্তা দিয়ে ও প্রভাবান্বিত করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করেছেন। এক্ষেত্রে ছাত্রনেতাদের ক্ষোভের লক্ষ্যবিন্দু হয়ে পড়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থানকারী সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বিএনপি ও ছাত্রদল দুইপক্ষ নানা যুক্তি তুলে ধরলেও কার্যালয়ে তালা দেয়ার পেছনে অন্যকিছু ইঙ্গিত পাচ্ছেন রাজনৈতিক মহল। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেন, দলে নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের প্রতিযোগীতা থাকে, কোন সিদ্ধান্ত প্রতিকূলে গেলে প্রতিবাদও হয়। কিন্তু কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। তারা বলছেন, এখানে রিজভীকে টার্গেট করা হচ্ছে। নানা সমালোচনা থাকলেও দলের দুর্দিনে নিজের পরিবার ছেড়ে টানা একবছরের বেশি সময় কার্যালয়ে অবস্থান করে প্রতিদিন দলের পক্ষে নানা ইস্যুতে কথা বলছেন তিনি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সায় না থাকলে সেটা তার পক্ষে সম্ভব হতো না। কিন্তু সরকারের এবং বিএনপিরই একাংশের কাছে তার কার্যালয়ে থাকার বিষয়টি পছন্দের নয়। ফলে তারা বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতাদের প্রতিবাদকে উপলক্ষ করে রিজভীকে কার্যালয় থেকে বের করতে চায়। এ জন্য তারা কৌশলে বিক্ষুব্দ ছাত্রনেতাদের উস্কানি দেয়ার পাশাপাশি সামাজিক ও মূলধারার গণমাধ্যমে কৌশলী প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা বলেন, সরকার ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে। তারা কৌশলে আমাদের ছাত্রনেতাদের ব্যবহার করে দলের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতেই নেপথ্যে সুতো টানছেন। দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করছেন ছাত্রদল নেতাদের। এদিকে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে গতকাল সকালে ছাত্রনেতারা বিক্ষোভ শুরুর পরপরই সেখানে ছুটে যান ছাত্রদলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। কিন্তু সেখানে তারা পরিস্থিতি শান্ত করতে ব্যর্থ হওয়ার পর গুলশান কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন।

কার্যালয়ে তালা, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন: এদিকে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতারা প্রতিবাদ শুরু করেন। সোয়া ১১টায় তারা নয়াপল্টনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় সেখানে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন। তারা কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাধা দেন সাবেক ছাত্রনেতারা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়। বিএনপির চার নেতাকে ছাত্রনেতারা বলেন, বয়সসীমা না করে ছাত্রদলের ধারাবাহিক কমিটি দিতে হবে। আর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একাই দুটি পদ নিয়ে অফিসকেই বাড়ি-ঘর বানিয়েছেন।

রিজভীকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যান। পরে বরকত উল্লাহ বুলু কার্যালয়ের সামনে থেকে চলে যান। অন্য তিন নেতা কার্যালয়ে পাশে বইয়ের দোকানে বসতে চাইলে দোকানের সাটার নামিয়ে দেন। এসময় শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী কার্যালয়ে ভিতরে গিয়ে কথা বলতে চাইলে তাকে বাধা দেন এবং এক পর্যায়ে তাকে ধাক্কা দেন। ছাত্রনেতাদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক শেষে ফজলুল হক মিলন সাংবাদিকদের বলেন, কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দল থেকে দেয়া হয়েছে। আর আমরা সবাই বসে এটা কার্যক্রম করবো। তবে দুঃখ ও অভিমান থাকতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়। আর তাদের দুঃখ ও বেদনা আমরা শুনবো। এর কিছুক্ষণ পর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে হাজির হন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান। এসময় বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদল নেতারা দুদুকে ঘিরে ধরে তাদের দাবির কথা তুলে ধরেন। তবে তাদের কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়নি। কিছুক্ষণ পর রিজভী আহমেদকে কার্যালয় থেকে বের করে দেয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আনে ছাত্রদল। পরে অ্যাম্বুলেন্সটি ফিরিয়ে দেয়া হয়। দুপুরে তারা কার্যালয়ের বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এদিকে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে বিক্ষুব্ধরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে সেখানে আগে থেকেই অবস্থানরত ঢাকা মহানগর পূর্ব ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম নয়নকে পিটিয়ে বের করে দেন।

এটা মান-অভিমান, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে: আব্বাস-গয়েশ্বর
এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অসুস্থ রুহুল কবির রিজভীকে দেখতে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিকাল ৫টায় প্রথমে মির্জা আব্বাস ও কিছুক্ষণ পর গয়েশ্বর রায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান। তাদের সাথে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু ও রফিকুল ইসলাম মজনুও কার্যালয়ে যান। বিক্ষুব্ধরা তালা খুলে তাদের কার্যালয়ে ঢুকতে দেন। তারা সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে রিজভীর শারীরিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন।

পরে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা দুইজন। মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এটা (বিক্ষুব্ধ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের কর্মসূচি) কিছু না। ওরা মান-অভিমান করেছে, এটা ঠিক হয়ে যাবে। বিষয়টা সাংবাদিকরা যেভাবে সিরিয়াসলি নিয়েছে বা উপস্থাপন করেছে আসলে সে রকম সিরিয়াস নয়। এটা পোলাপানের কাজ-কর্ম, মান-অভিমানের কাজ। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে ঈদ গেছে। মান-অভিমান হয়েছে। এটা ঠিক হয়ে যাবে। কারো কিছু করতে হবে না। কোনো সালিশ, আলোচনা কিছুই করতে হবে না। ওরা রাগ করেছে, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা কোনো পরিস্থিতি না যদি আপনারা ফলাও করে প্রচার না করেন। কেউ ব্যথা পেলে চিৎকার দেয়-এটাই স্বাভাবিক। আমাদের দীর্ঘদিন দলের কতগুলো পদ্ধতিগত কারণে বা নিয়মিত কাউন্সিল না হওয়ার কারণে যোগ্য ছেলেরা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। সেই বিষয়টা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। এরা দলের জন্য পরিশ্রম করে, এরা বাইরের নয়, এরা দলের মঙ্গল চায়।’ গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘দলের মঙ্গল এবং ওদেরও যতটুকু প্রাপ্যটা আছে তা সমাধান করার পথ আমাদের খুঁঁজতে হবে। এটা অনেক বড় দল, অনেক কর্মী, অনেক নেতা। আমরা বিরোধী দলে আছি, আমাদের সীমাবদ্ধতাও আছে।

এই সীমাবদ্ধতার মূল কারণটা হলো আমাদের নিয়মিত কাউন্সিল হয়নি। মামলা-হামলা-নির্যাতনের কারনে নিয়মিত এই সাংগঠনিক কাজগুলো হয়নি। এই নিয়মিত সাংগঠনিক কাজগুলো হলে ওরাও ছাত্রদল করার জন্য এতো আগ্রহী হতো না। ওরাও বুঝে এটা।’ সমাধান কী দেখছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘সমস্যা যেমন আছে, সমাধানও আছে। আলোচনার মাধ্যমে এটার সমাধান হবে।’ রিজভী কেমন আছেন এবং তাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে গয়েশ্বর রায় বলেন- ‘তিনি অসুস্থ। তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। তাকে হাসপাতালে নেয়া হবে কিনা সেটা সেখানে চিকিৎসকরা ঠিক করবেন। কিন্তু বাইরের এই ঘটনার জন্য তাকে হাসপাতালে যেতে হবে- এটা যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন না।’ উল্লেখ্য, রোববার রাতে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন রিজভী আহমেদ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কার্যালয়ে অবস্থান করে দলের সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন করায় অসুস্থতার খবর পেয়ে দলীয় চিকিৎসকরা সেখানে ছুটে যান। তারপর থেকে চিকিৎসকদের অধীনে কার্যালয়েই চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।   

দফায় দফায় মিটিং গুলশানে: এদিকে ছাত্রদলের সংকট নিরসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন ছাত্রদলের কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ বৈঠকে স্কাইপে যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তারই অংশ হিসেবে সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতাদের বেশ কয়েকজনকে সে বৈঠকে ডেকে নেয়া হয়। বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারি বাবু, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজীব আহসান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবীবুর রশীদ হাবিব ও আকরামুল হাসান অংশ নেন। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্রনেতাদের মধ্যে সাবেক সহ সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, ইখতিয়ার কবির, জয়দেব জয়, যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, মফিজুর রহমান আশিক, বায়োজিদ আরেফিন, ফয়েজ উল্লাহ, মিয়া রাসেল, ঢাবি সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার, মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজ, জবি সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান বিপ্লব, মহানগর পূর্বের সভাপতি খন্দকার এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন মানিক, দক্ষিণের সভাপতি জহিরউদ্দিন তুহিন, পশ্চিমের সভাপতি আবদুল গাফফার, সাধারণ সম্পাদক সাফায়েত আরাফাত রাব্বি ও বাংলা কলেজ সভাপতি আইয়ুব আলী বৈঠকে অংশ নেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সে বৈঠক চলছিল। তবে সন্ধ্যার পর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষুব্দ ছাত্রনেতারা সরে যায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status