তারকা সাক্ষাতকার

কমেন্ট্রি বক্স থেকে আতহার আলী খান

‘সমালোচনা নয়, ভরসা রাখুন’

ইশতিয়াক পারভেজ, ইংল্যান্ড থেকে

১১ জুন ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:০০ পূর্বাহ্ন

ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ মাঠে যখন ১১ টাইগার লড়াই করছেন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। তখন কমেন্ট্রি বক্স থেকে একাই তাদের হয়ে লড়ছেন আতহার আলী খান। হ্যা, ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশের একমাত্র ধারাভাষ্যকার হিসেবে আছেন দেশের সাবেক এই ক্রিকেটার। দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ম্যাচ গুলোতে ধারাভাষ্যের আড়ালে ভাগ করে নিচ্ছেন টাইগারদের সুখ-দুঃখ। ইংলিশদের বিপক্ষে ম্যাচ তখন শেষ হবে হবে। পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। মুখে মলিন হাসি নিয়ে বের হয়ে এলেন তিনি। অনুরোধ করতেই দৈনিক মানবজমিন-এর স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজের সঙ্গে অকপটে জানালেন টাইগারদের বিশ্বকাপ সম্ভাবনার কথা। বিশেষ করে কমেন্ট্রি বক্স থেকে তার দেখা মূল্যায়ন তুলে ধরলেন অকপটে। তার সেই কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-

প্রথম তিন ম্যাচ
প্রথম ম্যাচটা দেখে মনে হয়েছে শক্তির ৯০ ভাগ প্রয়োগ করেই আমরা জিতেছি। পরের দুটি ম্যাচে বোলিং-ব্যাটিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই আমাদের যোগ্যতা অনুসারে খেলতে পারিনি। বড় বিষয় হচ্ছে আমাদের বুঝতে হবে এই বিশ্বকাপ কিন্তু আনপ্রেডিক্টট্যাবল। এখানে যেকোনো দল যে কোনো কিছুই করতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি প্রথম ম্যাচটা ভালো খেলার পর আমাদের আশা কিন্তু বেশি বেড়ে গেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারলেও যেভাবে লড়াই করেছে তাতেও আশাটা বেড়েছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এমন ভাবলে হবে না। ওদের প্রথম থেকে ১০ নাম্বার পর্যন্ত ব্যাটসম্যান। নিজেদের চেনা কন্ডিশনে ইংলিশদের সেরা দলটিই খেলছে। তাদের বিপক্ষে বড় আশা করাটাই ভুল। ওদের ৯ নাম্বার পর্যন্ত ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি আছে। হ্যাঁ, ওদের আগেও আমরা হারিয়েছি। তাই বলে আগের দলের সঙ্গে এখন তুলনা করলে হবে না। ওরা এখন ভয়ঙ্কর দল। দেখেন জেসন রয় কিভাবে খেলেছে। বাটলারকে দেখেন। এরপর ওদের যে বোলার আর্চার ঘণ্টায় ৯০ মাইল গতিতে বল করছে। সব মিলিয়ে খুব কঠিন ম্যাচ জেতা। কারণ এমন গতির বিপক্ষে খেলার অভ্যাস ছিল না। আর রানটা এতই বেশি হয়ে গেছে যে কঠিন হয়ে গেছে। বলবো না যে অসম্ভব ছিল। কিন্তু কঠিন ছিল তাড়া করা।

মাশরাফির সিদ্ধান্ত
মাশরাফির জায়গাতে আমি অধিনায়ক হলেও ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতাম। এখানে বৃষ্টি হচ্ছিল, উইকেট কভারে ঢাকা, আর সকালেতো আবহাওয়া ভেজা ভেজা ছিল। উইকেটটাও সবুজ ছিল। অধিনায়ক চিন্তা করেছে যদি এই কন্ডিশনের সুবিধা নিয়ে দুই তিনটা উইকেট দ্রুত ফেলে দিতে পারি তাহলে ভালো । আমি মনে করি ইংল্যন্ডের বিপক্ষে মাশরাফি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা ভুল হয়নি।

৩’শর বেশি রানের চ্যালেঞ্জ জানাই ছিল
আসলে আমাদের বোলার যেভাবে শুরু করছে সেটি ধরে রাখতে পারছে না। কারণ দেখেন এই কন্ডিশনে যে গতির প্রয়োজন সেই রকম বোলার আমাদের নেই। কিন্তু আরো একটি বিষয় হলো গতি না থাকলে যেভাবে এক জায়গাতে বল করার কথা সেটাও হয়নি। লাইন, লেন্থও ঠিক ছিল না। গতিতে বল যদি নাও করতে পারে তারপরও যদি সঠিক ভাবে কাজ গুলো করতে পারতো ব্যাটসম্যান বিভ্রান্ত হয়ে ভুল শট খেলতো। হয়তো তাতে আমাদের সুযোগও থাকতো। আসরে আমাদের ক্ষতি হয়ে গেছে তাসকিন নেই। ও আমাদের সবচেয়ে গতির বোলার। এছাড়াও রুবেলও দলের বাইরে আছে। যাই হোক একটা দিন বা দুটি দিন হয়নি তাতে ভেঙে পড়ার কিছুই নেই। আশা করি সামনে ভালো কিছুই হবে।

ফিল্ডিংটা ভালো হচ্ছে না
ম্যাচ জেতার জন্য যে শুধু বোলিং-ব্যাটিংই ভালো করা দরকার তা নয়, সঙ্গে ফিল্ডিংটাও ভালো করতে হবে। হ্যাঁ, এখানে আমাদের ছোট ছোট অনেক ভুলই বড় ক্ষতি করে দিয়েছে। তার মানে এই নয় যে আমরা ভালো ফিল্ডিং করতে পারি না। আমাদের সেই ক্ষমতা আছে। আমাদের দল খুবই ভালো। এখন সামনের ম্যাচগুলোতে যে সুযোগ আছে সেগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।

মাশরাফিকে নিয়ে সমালোচনা
সমালোচনা কাকে নিয়ে না হয়! আমরাও কমেন্ট্রি বক্সে সমালোচনা করি। কিন্তু মাশরাফির বিষয়টা ভিন্ন। সে কতগুলো ইনজুরি নিয়ে এখনো খেলছে তা ভাবতে হবে। প্রথম কথা হলো, এই দলটিকেই না সে বাংলাদেশকেও এখন ওয়ানডেতে কত উপরে নিয়ে গেছে তা ভুলে গেলে হবে না। বিশ্বকাপের মূল পর্বে এমনি এমনি কিন্তু সরাসরি খেলতে আসেনি দল। আমরা জানি ও যদি সেরাটা বল হাতে দিতেও না পারে কিন্তু দলকে শত ভাগ জাগিয়ে রাখছে। এই ছেলেগুলোকে ও যেভাবে উৎসাহ দিচ্ছে, কাছে থেকে সাহস দিচ্ছে তা অসাধারণ। সবচেয়ে বড় কথা হলো মাশরাফি বাংলাদেশকে যা দিয়েছে তা কিভাবে ভুলে যায় সবাই! এটি সত্যি ভীষণ খারাপ বিষয়। আমার কথা হচ্ছে হার জিত থাকবেই, এখন এই অবস্থাতে মাশরাফিকে নিয়ে সমালোচনা না করলে কি হয় না? আমরা এত সহজেই ভুলে যাই কি করে!

মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপ
হ্যাঁ, অসাধারণ অধিনায়ক, অসাধারণ ক্রিকেট মেধার একজন। অনেক ক্রিকেটার বাংলাদেশ দলে আসবে, হয়তো ওর চেয়ে ভালো ক্রিকেটারও আসবে। কিন্তু জানিনা মাশরাফির মতো একজন আসবে কিনা। ও দেশকে যা দিয়েছে তার জন্য সালাম জানাই। এমন একজন অধিনায়ক আমাদের দলের জন্য খুব প্রয়োজন। যার কথাতে দলের ছেলেগুলো জান দিয়ে দিতে পারে।

কমেন্ট্রি বক্স থেকে কী দেখতে চান?
অবশ্যই বেশ কয়েকটা সেঞ্চুরি দেখতে চাই। আমিতো আজই ভেবেছিলাম ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই দুটি সেঞ্চুরি দেখবো বা সাকিবের দেড়শ রান দেখবো। কিন্তু হয়নি, তবে এতে আমি হতাশ নই। সামনে আরো ৬ টি ম্যাচ আছে। তামিম ইকাবাল, সৌম্য সরকার যারাই খেলছে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে আরো বেশি। এখানে যেটা হচ্ছে তিনটা ম্যাচেই ব্যাটসম্যানরা সেট হয়ে আউট হয়েছে। সেটি করলে হবে না। অন্তত এক, দু’জনকে ইনিংস বড় করতে হবে। নয়তো সব দিন বড় স্কোর করা বা তাড়া করা সম্ভব হবেনা।

কমেন্ট্রি বক্সের চ্যালেঞ্জ
দেখেন এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ। তবে নিজের দেশ যখন ভালো করতে থাকে তখন অনেক ভালো লাগে। পাশ থেকে বড় বড় কমেন্টেটররা বলে তোমার দেশ দারুণ করছে। জিতলে পিঠ চাপড়ে ভালো বলে। খুব গর্ববোধ করি তখন। খারাপ করলেও প্রফেশনাল হিসেবে হয়তো মুখে হাসি রাখতে হয়। কিন্তু কষ্ট লাগে, তখন অনেকেই সুযোগ পেয়ে ক্রিটিসাইজও করে। ভালো লাগে না। এছাড়াও আমি যেটা বলতে চাই, এরাই আমদের নানা ভাবে জয় এনে দিয়েছে। তাই এখন সমালোচনা বাদ দিয়ে ভরসা রাখুন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status