প্রথম পাতা

রাজধানীর ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ

শুভ্র দেব

১১ জুন ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:৪২ পূর্বাহ্ন

ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয় বলে তথ্য উঠে এসেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক পর্যালোচনা রিপোর্টে। গত ছয়মাস নিয়মিত বাজার   তদারকি করে তারা এ রিপোর্ট তৈরি করেছে। এতে দেখা গেছে, ১০০ টি ফার্মেসির মধ্যে ৯৩টি ফার্মেসিতেই মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়। আবার কোনো কোনো ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণের দীর্ঘদিন পরেও সেটি বিক্রি করা হচ্ছে। এসব অপরাধে সংস্থাটি ইতিমধ্যে অন্তত দুই শতাধিক ফার্মেসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিছু কিছু ফার্মেসি সাময়িক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ এসব ওষুধ বিক্রি করা গুরুতর অপরাধ। এসব ওষুধ অসুস্থ রোগীকে সুস্থতার বদলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এ ধরনের প্রতারণা রোধে সারা দেশে তদারকি টিম গঠন করেছে। এসব টিম কখনও ক্রেতা সেজে আবার কখনো ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে ফার্মেসিগুলোর কার্যক্রম নজরদারির আওতায় রেখেছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, আমরা গত এক বছর ধরে এ নিয়ে কাজ করে আসছি। সর্বশেষ ছয় মাসের একটি রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখেছি ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়। কয়েক মাস আগে এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ওষুধ প্রশাসন বলেছিল এটি বাস্তবতা বিবর্জিত। এমন মন্তব্য করার পর আমরা ঢাকা শহরে তিনটি টিম পাঠিয়েছিলাম। তারা ঢাকা শহরের পাঁচটা থানায় ২১টি ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়েছে। তার মধ্যে ২০টি ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পায়। তিনি বলেন, ওষুধ ব্যবসায়ীদের থানা পর্যায়ে কমিটি আছে। তাদেরকে নিয়ে আমরা বৈঠক করছি তারা যেন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ আর না রাখে। তারা আমাদেরকে জানিয়েছে, বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানিগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ফেরত নিতে চায় না। আর নিলেও অনেকদিন দেরি হয়। তাই তাদেরকে বলেছি তারা একটা বক্স রাখবে যেখানে লেখা থাকবে ‘মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, বিক্রির জন্য নয়’। এরকম প্র্যাকটিস ঢাকায় শুরু হয়েছে। যেসব ফার্মেসিতে এরকম লেখা আছে আমরা এসব ওষুধে হাত দেই না। তবে যদি সেলফের মধ্যে পাই সেগুলো ধরি। শাহরিয়ার বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে পারি নাই। কিন্তু এখন আমরা আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি কিছু কিছু ফার্মেসি কয়েকদিনের জন্য বন্ধ করে দিচ্ছি। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা মেয়দোত্তীর্ণ ওষুধ না সরাচ্ছে।  

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ খান মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওষুধের একটা মান বজায় রাখতে হয়। ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির কাছে যখন ওষুধ থাকে তখন ওষুধের একটা জীবন থাকে। কিন্তু বাইরে আসলে সেটা অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ ফার্মেসি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয়। কেমিক্যালের সঙ্গে তাপমাত্রার একটা সম্পর্ক আছে। তাপমাত্রার কারণে ওষুধের অনেক কিছু নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, প্রধান বৈজ্ঞানিক তথ্য হচ্ছে একটা ওষুধ তৈরির পর ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো পরীক্ষা করে সেটার বয়স নির্ধারণ করে কোন ওষুধ থেকে কতদিন উপকার পাওয়া যাবে। কোন ওষুধের মেয়াদ যদি লেখা থাকে জুন মাসে তবে সেটি যদি ভালোভাবে রাখা হয় তাহলে সেটি আরও কয়েকমাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। আর এর বাইরে যারা এসব ওষুধ বিক্রি করছে তারা অপরাধ করছে। কোন অবস্থাতেই এরকম করা যাবে না। যদি করে থাকে তবে তারা হত্যাকারী। তারা মানুষ হত্যা করছে। তিনি বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ যুবকেদের কম ক্ষতি করলেও একজন বৃদ্ধ অসুস্থ ব্যক্তির মারাত্বক ক্ষতি হবে।  তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগীয় সংস্থা, ওষুধ প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ জনগণ এক হয়ে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। এছাড়া ওষুধ প্রশাসনের একজন করে প্রতিনিধি থাকবে। কোন স্থানে কয়টি ওষুধের দোকান থাকবে সেটি ঠিক করে দিবে। আবার প্রত্যেকটা ফার্মেসিতে একজন রেজিস্টার ফার্মাসিস্ট থাকবে।

র‌্যাব সদরদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোওয়ার আলম বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে আমার অভিযান আছে। তবে আমাদের কাছে কোন পরিসংখ্যান নেই কত শতাংশ ফার্মেসিতে এধরনের ওষুধ রাখা হয়। ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ থাকতেই পারে। সেটা ফার্মেসি বিক্রি করছে কিনা সেটি দেখতে হবে। আমরা এরকম যাদেরকে পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, হাজার হাজার ওষুধের মধ্যে একটা দুইটা ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ৯৩ শতাংশ ফার্মেসীতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ আছে এটা তিনি কিভাবে বলছেন আমার জানা নাই। আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ নিয়ে কাজ করছি যাতে এটা বন্ধ হয়। নির্দেশও দেয়া হয়েছে কেউ যেন কোন মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি না করে। এজন্য আমাদের নিয়মিত কয়েকটি টিম কাজ করছে। এছাড়া বিশেষ অভিযানও চালানো হয়। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় টিম কাজ করে। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ কোম্পানি ফেরত নেয় না ফার্মেসি মালিকদের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থ নিয়েছি। তাদেরকে বলে দিয়েছি তারা যেন সেটা নিয়ে রিপ্লেস দেয়। আর কোন ফার্মেসি যদি এসব ওষুধ বিক্রি করে তবে ফার্মেসি ড্র্যাগ লাইসেন্স বাতিল করে দেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status