বাংলাদেশ কর্নার
পঞ্চপাণ্ডবের হাত ধরেই দিগন্ত জয়ের স্বপ্ন
স্পোর্টস রিপোর্টার
৩০ মে ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৭ পূর্বাহ্ন
রবীন্দ্র প্রভাবের বাইরে গিয়ে আধুনিক বাংলা কবিতা সৃষ্টিতে অসামান্য অবদান রেখেছেন ‘পঞ্চপাণ্ডব’ অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাস, বিষ্ণু দে ও সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। বাংলা সাহিত্যে যেমন এই পাঁচ কবি একটি স্থান দখল করে আছেন, তেমনি বাংলাদেশের ক্রিকেটেও মাশরাফি, সাকিব, তামিম, রিয়াদ, মুশফিকরা অনন্য। তবে কবিদের মতো মাশরাফিদের কোনো ধারার বাইরে যেতে হয়নি। দেশের ক্রিকেটে তারাই একটি ধারার সৃষ্টি করেছেন। যে ধারায় আজ বাংলাদেশ জিততে শিখেছে, স্বপ্ন দেখছে দিগন্ত জয়ের।
বাংলাদেশের ওয়ানডে রেকর্ডে পাঁচজনের একেবারে জয়জয়কার। ওয়ানডেতে টাইগারদের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান তামিমের, ৬ হাজার ৫৬১। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাকিবের রান ৫ হাজার ৬৬৭। সাকিবের চেয়ে ১৮০ রান কম নিয়ে তিনে মুশফিক। উইকেটকিপারের গ্লাভস হাতে তার ডিসমিসাল (২০৮) আবার সবচেয়ে বেশি। ৩ হাজার ৭০৩ রান নিয়ে চারে মাহমুদুল্লাহ। বোলিংয়ে ২৬৪ উইকেট নিয়ে সবার উপরে মাশরাফি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাকিবের উইকেট ২৪৯। পঞ্চপাণ্ডবের শুরুর দিনগুলোতে বাংলাদেশ কেবল জিততো কেনিয়া ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বাকি দলগুলোর বিপক্ষে মাঝেমধ্যে একটু ঝলক দেখানো, এই যা। শুরুর দিকে মাশরাফি চোটে জর্জর, খেলায় আজ ফিরছেন তো কাল মাঠের বাইরে। এর মধ্যে ২০০৫ থেকে ২০০৭ এ তিন বছরে ওরা চারজন এলেন, মুশফিক, সাকিব, তামিম ও মাহমুদুল্লাহ। ধীরে ধীরে তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করলেন সোনালি প্রজন্ম হিসেবে। গত ডিসেম্বরে এই প্রজন্ম একসঙ্গে খেলেছে নিজেদের শততম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আর সবশেষ আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে দেখা পেলেন ৫০তম জয়। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে একসঙ্গে ১০৫তম ম্যাচ খেললেন এই পাঁচ ক্রিকেটার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয়টা তাদের জন্য এক মাইলফলক। ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে এটি ছিল পঞ্চপাণ্ডবের ৫০তম আন্তর্জাতিক জয়। আর এক ম্যাচ হারলে তাদের পরাজয়ের ‘ফিফটি’ও পূর্ণ হবে।
প্রতিটি দেশের ইতিহাস বদলে কারো না কারো অবদান থাকে। ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলি লর্ডসের করিডোরে একদিন টি-শার্ট ঘুরিয়ে ভারতের আগামী দিনের শ্রেষ্ঠত্বের বার্তা দিয়েছিলেন। ভিভিএস লক্ষণ ও রাহুল দ্রাবিড় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফলোঅন থেকে দল জিতিয়েছেন, এসব ছিল ভারতের শুরু। সৌরভ যেমন জার্সি খুলে নতুন বার্তা দিয়েছেন, তেমনি ভারতের ইতিহাস পাল্টে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেতা ওই টেস্ট। শচীন নিজের চেষ্টা, মানসিকতা এবং ব্যক্তিত্ব দিয়ে সারা ভারতের আইডলে পরিণত হয়েছেন। অনিল কুম্বলে দেশের মাটিতে দলকে অপরাজেয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাদের পথ ধরেই আজ ধোনি, কোহলিরা ভারতকে বিশ্ব মঞ্চে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে যেমন অর্জুনা রানাতুঙ্গা, ডি সিলভা, মুরালিধরন, সনাথ জয়সুরিয়া ও চামিন্দা ভাসকে পঞ্চপাণ্ডবের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যাদের হাত ধরেই সোনালি ট্রফি ঘরে তুলেছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের পঞ্চপাণ্ডবের হাত ধরেই সোনালি ট্রফির মিশনে এবার ইংল্যান্ড যাত্রা করেছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রথম যে নামটি অবশ্যই নিতে হবে তিনি হলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান। নিঃসন্দেহে তিনিই প্রথম এই বীজ বপন করতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশ থেকেও বিশ্ব সেরাদের কাতারে যাওয়া যায়। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডকে ৪-০ তে হারানোর সিরিজে নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্লেজিং করা, চোখে চোখ রেখে লড়াই করা, শরীরী ভাষায় অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দিয়ে সাকিব দেখিয়েছেন কীভাবে একাই লড়াই করা যায়। তার সে সিরিজের একক বীরত্বগাথা পরবর্তীতে অন্য খেলোয়াড়দের মাঝে সাহসের সঞ্চার করেছে। সাকিব এরপর অনেক সিরিজেই বীরত্ব তৈরি করেছেন। গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জয়ে ব্যাটিং-বোলিং বা ফিল্ডিং দিয়ে দলকে সহায়তা করেছেন। জয় একটি দলের ভাষা তৈরি করে। কিন্তু সাকিব তার মানসিকতা এবং নিজেকে উচ্চতায় নিয়ে তৈরি করেছেন সংস্কৃতি। ২০০৬ সালে ওয়ানডে অভিষেক সাকিবের। বিশ্বকাপে তিনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার। ২০০৭, ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলে ২১ ম্যাচে পাঁচটি হাফসেঞ্চুরিসহ করেছেন ৫৪০ রান, আর উইকেট নিয়েছেন ২৩টি।
দেশের ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডবের দ্বিতীয়জন তামিম ইকবাল। তামিম ইকবাল নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সবার আগে ২০০৭ বিশ্বকাপের ইনিংসই সবার চোখে ভাসবে। ওই ইনিংসটি শুধু তামিম ইকবালের আগমনী বার্তা দেয়নি, ভারতকে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় করে নতুন এক বাংলাদেশের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল বিশ্ব মঞ্চে। লর্ডসে প্রথম ইনিংসে ৫৫ রানে আউট হবার পর রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে সেঞ্চুরি করেন তামিম ইকবাল। তামিম বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাটিং রেকর্ডের মালিক। দেশের অবিসংবাদিত সেরা ওপেনারও চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন ইংল্যান্ড-ওয়েলসে। গত বিশ্বকাপে অল্পের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছিলেন, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে আউট হয়ে যান ৯৫ রানে। ক্রিকেটের সেরা আসরে ২১টি ম্যাচ খেলে তার মোট রান ৪৮৩, হাফসেঞ্চুরি তিনটি।
পঞ্চপাণ্ডবের তৃতীয়জন মুশফিকুর রহীম। একটা সময় এমনকি এখনো বাংলাদেশের সমর্থকদের মনে যে বিষয়ে সন্দেহ থেকে গেছে তা হলো, বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা অলস এবং তারা খুব বেশি পরিশ্রম করতে চায় না। কিন্তু মুশফিকুর রহীম এই অপবাদটি ঘুচিয়ে দিয়েছেন। পরিশ্রম, পরিশ্রম এবং পরিশ্রম দিয়েই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সবচেয়ে ধারাবাহিক এক ব্যাটসম্যান হিসেবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসেই এতোটা ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান কখনো আসেনি। তরুণ প্রজন্মের জন্য আদর্শ একজন। যাকে দেখে উঠতি প্রজন্মের ক্রিকেটাররা শিখতে পারে। মুশফিকের নেতৃত্বে টেস্টে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কার মতো পরাশক্তিকে হারিয়েছে টাইগাররা। বিশ্বকাপেও তার ব্যাট উজ্জ্বল। সাকিব-তামিমের সমান ২১ ম্যাচ খেলে চারটি হাফসেঞ্চুরিসহ মুশফিক করেছেন ৫১০ রান।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম অংশগ্রহণ ১৯৯৯ সালে। ২০১১ পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপ খেলে ফেললেও কোনো ব্যাটসম্যানের নামের পাশে সেঞ্চুরি ছিল না। চার বছর আগে সেই আক্ষেপ দূর করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাও আবার একটি নয়, দুটি সেঞ্চুরির গর্বিত মালিক তিনি। অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ড-বধের ম্যাচে করেন ১০৩ রান। হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচে অপরাজিত ১২৮ রানের আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংস। দু’টি বিশ্বকাপ খেলে ১০ ম্যাচে ৩৯৭ রান করা মাহমুদুল্লাহ ব্যাট লোয়ার মিডল অর্ডারে বাংলাদেশের জন্য বিরাট ভরসা।
পাঁচজনের মধ্যে সবার বড় মাশরাফি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যার অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। ২০১৪ সালে ভীষণ দুঃসময়ে জাতীয় দলের নেতৃত্বভার পান তিনি। আফগানিস্তান-হংকংয়ের মতো দলের কাছে হেরে বাংলাদেশ তখন হতাশার চোরাবালিতে। কিন্তু মাশরাফির নেতৃত্বে টাইগারদের বদলে যেতে সময় লাগেনি। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তরণ, বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান-ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জয়, দুই বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল আর গত সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলা অধিনায়ক মাশরাফির সাফল্যের তালিকা দীর্ঘ। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে অধরা শিরোপা। এই মাশরাফির হাত ধরেই ছয় ফাইনালে হারের পর সপ্তম ফাইনালে এসে প্রথম ট্রফি জিতে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে ১৬ ম্যাচে ১৮ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ১৬৫ রান করেছেন মাশরাফি। জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ২০০৩ সালে। চার বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে (৪/৩৮) ভারতকে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১১ বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি ইনজুরির কারণে। সাকিব-তামিম-মুশফিকের মতো মাশরাফি তাই চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন এবার। তবে তিন সতীর্থের সঙ্গে পার্থক্য, ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’-এর এটাই শেষ বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বদলে দেয়ার নায়কের সামনে তাই বাড়তি চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশের ওয়ানডে রেকর্ডে পাঁচজনের একেবারে জয়জয়কার। ওয়ানডেতে টাইগারদের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান তামিমের, ৬ হাজার ৫৬১। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাকিবের রান ৫ হাজার ৬৬৭। সাকিবের চেয়ে ১৮০ রান কম নিয়ে তিনে মুশফিক। উইকেটকিপারের গ্লাভস হাতে তার ডিসমিসাল (২০৮) আবার সবচেয়ে বেশি। ৩ হাজার ৭০৩ রান নিয়ে চারে মাহমুদুল্লাহ। বোলিংয়ে ২৬৪ উইকেট নিয়ে সবার উপরে মাশরাফি। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সাকিবের উইকেট ২৪৯। পঞ্চপাণ্ডবের শুরুর দিনগুলোতে বাংলাদেশ কেবল জিততো কেনিয়া ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বাকি দলগুলোর বিপক্ষে মাঝেমধ্যে একটু ঝলক দেখানো, এই যা। শুরুর দিকে মাশরাফি চোটে জর্জর, খেলায় আজ ফিরছেন তো কাল মাঠের বাইরে। এর মধ্যে ২০০৫ থেকে ২০০৭ এ তিন বছরে ওরা চারজন এলেন, মুশফিক, সাকিব, তামিম ও মাহমুদুল্লাহ। ধীরে ধীরে তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করলেন সোনালি প্রজন্ম হিসেবে। গত ডিসেম্বরে এই প্রজন্ম একসঙ্গে খেলেছে নিজেদের শততম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আর সবশেষ আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে দেখা পেলেন ৫০তম জয়। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে একসঙ্গে ১০৫তম ম্যাচ খেললেন এই পাঁচ ক্রিকেটার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয়টা তাদের জন্য এক মাইলফলক। ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে এটি ছিল পঞ্চপাণ্ডবের ৫০তম আন্তর্জাতিক জয়। আর এক ম্যাচ হারলে তাদের পরাজয়ের ‘ফিফটি’ও পূর্ণ হবে।
প্রতিটি দেশের ইতিহাস বদলে কারো না কারো অবদান থাকে। ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলি লর্ডসের করিডোরে একদিন টি-শার্ট ঘুরিয়ে ভারতের আগামী দিনের শ্রেষ্ঠত্বের বার্তা দিয়েছিলেন। ভিভিএস লক্ষণ ও রাহুল দ্রাবিড় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফলোঅন থেকে দল জিতিয়েছেন, এসব ছিল ভারতের শুরু। সৌরভ যেমন জার্সি খুলে নতুন বার্তা দিয়েছেন, তেমনি ভারতের ইতিহাস পাল্টে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেতা ওই টেস্ট। শচীন নিজের চেষ্টা, মানসিকতা এবং ব্যক্তিত্ব দিয়ে সারা ভারতের আইডলে পরিণত হয়েছেন। অনিল কুম্বলে দেশের মাটিতে দলকে অপরাজেয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাদের পথ ধরেই আজ ধোনি, কোহলিরা ভারতকে বিশ্ব মঞ্চে মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে যেমন অর্জুনা রানাতুঙ্গা, ডি সিলভা, মুরালিধরন, সনাথ জয়সুরিয়া ও চামিন্দা ভাসকে পঞ্চপাণ্ডবের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যাদের হাত ধরেই সোনালি ট্রফি ঘরে তুলেছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের পঞ্চপাণ্ডবের হাত ধরেই সোনালি ট্রফির মিশনে এবার ইংল্যান্ড যাত্রা করেছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রথম যে নামটি অবশ্যই নিতে হবে তিনি হলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসান। নিঃসন্দেহে তিনিই প্রথম এই বীজ বপন করতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশ থেকেও বিশ্ব সেরাদের কাতারে যাওয়া যায়। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডকে ৪-০ তে হারানোর সিরিজে নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্লেজিং করা, চোখে চোখ রেখে লড়াই করা, শরীরী ভাষায় অগ্নিস্ফুলিঙ্গ দিয়ে সাকিব দেখিয়েছেন কীভাবে একাই লড়াই করা যায়। তার সে সিরিজের একক বীরত্বগাথা পরবর্তীতে অন্য খেলোয়াড়দের মাঝে সাহসের সঞ্চার করেছে। সাকিব এরপর অনেক সিরিজেই বীরত্ব তৈরি করেছেন। গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জয়ে ব্যাটিং-বোলিং বা ফিল্ডিং দিয়ে দলকে সহায়তা করেছেন। জয় একটি দলের ভাষা তৈরি করে। কিন্তু সাকিব তার মানসিকতা এবং নিজেকে উচ্চতায় নিয়ে তৈরি করেছেন সংস্কৃতি। ২০০৬ সালে ওয়ানডে অভিষেক সাকিবের। বিশ্বকাপে তিনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ক্রিকেটার। ২০০৭, ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলে ২১ ম্যাচে পাঁচটি হাফসেঞ্চুরিসহ করেছেন ৫৪০ রান, আর উইকেট নিয়েছেন ২৩টি।
দেশের ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডবের দ্বিতীয়জন তামিম ইকবাল। তামিম ইকবাল নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সবার আগে ২০০৭ বিশ্বকাপের ইনিংসই সবার চোখে ভাসবে। ওই ইনিংসটি শুধু তামিম ইকবালের আগমনী বার্তা দেয়নি, ভারতকে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় করে নতুন এক বাংলাদেশের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল বিশ্ব মঞ্চে। লর্ডসে প্রথম ইনিংসে ৫৫ রানে আউট হবার পর রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে সেঞ্চুরি করেন তামিম ইকবাল। তামিম বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্যাটিং রেকর্ডের মালিক। দেশের অবিসংবাদিত সেরা ওপেনারও চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন ইংল্যান্ড-ওয়েলসে। গত বিশ্বকাপে অল্পের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছিলেন, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে আউট হয়ে যান ৯৫ রানে। ক্রিকেটের সেরা আসরে ২১টি ম্যাচ খেলে তার মোট রান ৪৮৩, হাফসেঞ্চুরি তিনটি।
পঞ্চপাণ্ডবের তৃতীয়জন মুশফিকুর রহীম। একটা সময় এমনকি এখনো বাংলাদেশের সমর্থকদের মনে যে বিষয়ে সন্দেহ থেকে গেছে তা হলো, বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা অলস এবং তারা খুব বেশি পরিশ্রম করতে চায় না। কিন্তু মুশফিকুর রহীম এই অপবাদটি ঘুচিয়ে দিয়েছেন। পরিশ্রম, পরিশ্রম এবং পরিশ্রম দিয়েই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সবচেয়ে ধারাবাহিক এক ব্যাটসম্যান হিসেবে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসেই এতোটা ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান কখনো আসেনি। তরুণ প্রজন্মের জন্য আদর্শ একজন। যাকে দেখে উঠতি প্রজন্মের ক্রিকেটাররা শিখতে পারে। মুশফিকের নেতৃত্বে টেস্টে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কার মতো পরাশক্তিকে হারিয়েছে টাইগাররা। বিশ্বকাপেও তার ব্যাট উজ্জ্বল। সাকিব-তামিমের সমান ২১ ম্যাচ খেলে চারটি হাফসেঞ্চুরিসহ মুশফিক করেছেন ৫১০ রান।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম অংশগ্রহণ ১৯৯৯ সালে। ২০১১ পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপ খেলে ফেললেও কোনো ব্যাটসম্যানের নামের পাশে সেঞ্চুরি ছিল না। চার বছর আগে সেই আক্ষেপ দূর করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তাও আবার একটি নয়, দুটি সেঞ্চুরির গর্বিত মালিক তিনি। অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ড-বধের ম্যাচে করেন ১০৩ রান। হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচে অপরাজিত ১২৮ রানের আরেকটি দুর্দান্ত ইনিংস। দু’টি বিশ্বকাপ খেলে ১০ ম্যাচে ৩৯৭ রান করা মাহমুদুল্লাহ ব্যাট লোয়ার মিডল অর্ডারে বাংলাদেশের জন্য বিরাট ভরসা।
পাঁচজনের মধ্যে সবার বড় মাশরাফি। বাংলাদেশের ক্রিকেটে যার অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। ২০১৪ সালে ভীষণ দুঃসময়ে জাতীয় দলের নেতৃত্বভার পান তিনি। আফগানিস্তান-হংকংয়ের মতো দলের কাছে হেরে বাংলাদেশ তখন হতাশার চোরাবালিতে। কিন্তু মাশরাফির নেতৃত্বে টাইগারদের বদলে যেতে সময় লাগেনি। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তরণ, বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান-ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জয়, দুই বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল আর গত সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলা অধিনায়ক মাশরাফির সাফল্যের তালিকা দীর্ঘ। সর্বশেষ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে অধরা শিরোপা। এই মাশরাফির হাত ধরেই ছয় ফাইনালে হারের পর সপ্তম ফাইনালে এসে প্রথম ট্রফি জিতে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে ১৬ ম্যাচে ১৮ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ১৬৫ রান করেছেন মাশরাফি। জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ২০০৩ সালে। চার বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে তার দুর্দান্ত বোলিংয়ে (৪/৩৮) ভারতকে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১১ বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি ইনজুরির কারণে। সাকিব-তামিম-মুশফিকের মতো মাশরাফি তাই চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন এবার। তবে তিন সতীর্থের সঙ্গে পার্থক্য, ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’-এর এটাই শেষ বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বদলে দেয়ার নায়কের সামনে তাই বাড়তি চ্যালেঞ্জ।