বিশ্বজমিন
আসলেই পাকিস্তানকে একঘরে করে ফেলছে ভারত!
মানবজমিন ডেস্ক
২৯ মে ২০১৯, বুধবার, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন
তবে কি সত্যিই পাকিস্তানকে একঘরে করে ফেলছে ভারত! অনেকদিন ধরে বিষয়টি আলোচনায়। কিন্তু এবার দৃশ্যত মনে হচ্ছে, সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছে তারা। বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে ভারতে লোকসভা নির্বাচনের পর। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেবেন বৃহস্পতিবার। এতে বাংলাদেশ সহ বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে বাদ রাখা হয়েছে পাকিস্তানকে। এখানেই শেষ নয়। শপথ নেয়ার পর সিঙ্গাপুরের বিশকেকে আয়োজিত সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। সেখানে সম্মেলনের পাশাপাশি চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে তিনি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। ওই সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু তার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কোনো বৈঠক করবেন না মোদি। দেখা হয়ে গেলে হাই হ্যালোর মধ্যেই তাদের কথা সীমিত থাকতে পারে।
ভারত ও পাকিস্তান একে অন্যের চির বৈরি। কিন্তু বিষয়টি কঠিন আকার ধারণ করেছে সম্প্রতি। বিশেষ করে তা প্রকট হয়ে ওঠে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে। পাকিস্তান সন্ত্রাসকে মদত দেয়- এই অভিযোগে ইসলামাবাদে আয়োজিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়া বাতিল করে ভারত। একই পথ ধরে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা সহ আরো কয়েকটি দেশ। ফলে সেই যে সার্কের ভাগ্য ঝুলে গেছে, এখনও তা ঝুলছে। সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অচল হয়ে আছে।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি নির্বাচিত হওয়ার পর শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে। তখন মনে হয়েছিল, দুই দেশের মধ্যে জমে থাকা কূটনৈতিক বিরোধের সমাধান হয়ে যাবে। এই উপমহাদেশ নতুন একটি শান্তির বারতা দেখতে পেয়েছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা। কিন্তু তাও আস্তে আস্তে মিইয়ে গেছে। সর্বশেষ এবার নতুন ক্ষমতায় আসেন ইমরান খান। তিনি ক্ষমতায় আসার অল্প পরেই কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ভারতের আধা সামরিক বাহিনীর কমপক্ষে ৪০ জন সদস্য নিহত হন। এর জন্য দায়ী করা হয় পাকিস্তানকে। বলা হয়, পাকিস্তান মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আকাশপথে ‘ডগফাইট’ হয়। পারমাণবিক শক্তিধর এই দুটি দেশের মধ্যে ভয়াবহ একটি সার্বিক যুদ্ধের আশঙ্কায় কাঁপতে থাকে পুরো অঞ্চল, এমনকি সারা বিশ্ব। পাকিস্তান আটক করে ভারতের যুদ্ধবিমানের পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে। পরে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে তাকে ভারতের হাতে তুলে দেন ইমরান খান। কিন্তু ভারত সেটাকে পাকিস্তানের দুর্বলতা হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করে।
এবার লোকসভা নির্বাচনের আগে কার্যত নরেন্দ্র মোদি ও তার বিজেপিকে সমর্থন দিয়ে বিবৃতি দেন ইমরান খান। মোদি জিতেছেন। কিন্তু তার মন নরম হয় নি। তিনি বৃহস্পতিবার শপথ নিচ্ছেন। এতে এ অঞ্চলের অনেক প্রতিবেশীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও থাকছেন না ইমরান খান। তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি। মোদির এমন পদক্ষেপকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা ইমরান খানের প্রতি এক রকম হেয় হিসেবে দেখছেন।
১৩ ও ১৪ই জুন বিশেকেকে হতে যাচ্ছে এসসিও সামিট। দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন মোদি। এটাই হবে এ মেয়াদে তার বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রথম দেখাসাক্ষাত। এ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন ইমরান খান। তার সঙ্গে মোদির সাক্ষাতের বিষয়ে সরকারি সূত্রগুলো বলেছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইমরানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কোনো বিষয় বিবেচনার মধ্যে নেই। ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকের বিষয়ে মিডিয়ায় যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তা পুরোপুরি দূরকল্পনা। তবে তাদের মধ্যে ‘পাসিং মিটিং’য়ের বিষয় উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে সেটা হলে হবে অনানুষ্ঠানিক। তাতে দ্বিপক্ষীয় কোনো বিষয় আলোচনা হবে না। কারণ, শিডিউলে তা নেই।
ওদিকে সরকারি সূত্রগুলো বলেছেন, মোদির শপথ অনুষ্ঠানে ইমরান খানকে আমন্ত্রণ না জানানোকে তিরস্কার হিসেবে দেখা উচিত নয়। কারণ, এ শপথ অনুষ্ঠানে আফগানিস্তান ও মালদ্বীপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ও অংশীদারদের আমন্ত্রণ জানানো হয় নি।
ওদিকে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে বিশকেকের সম্মেলনে কোনো পক্ষই মোদি-ইমরানের মধ্যে দৃশ্যত গঠনমূলক আলোচনার প্রস্তাব দেয়ার মতো অবস্থায় নেই। তবে তাদের মধ্যে করমর্দন বা পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সামান্য সময়ের জন্য শুভেচ্ছা বিনিময়ের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না।
এখানে উল্লেখ্য, পুলওয়ামা হামলা ও তার পর পর পাকিস্তানের বালাকোটে ভারত যে বিমান হামলা চালায়, তার পরও মোদি ও ইমরান খান গত কয়েক মাসে সম্পর্ক বা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে ইমরান খানকে চিঠি লিখেছেন নরেন্দ্র মোদি। তাতে তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশে দুই দেশ একত্রে কাজ করতে চায়। এর দু’এক সপ্তাহ পরে চিঠির জবাব দেন ইমরান খান। অভিনন্দনের জন্য মোদিকে ধন্যবাদ জানান ইমরান। পাশাপাশি তিনি আলোচনা প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানান। লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে ফোন করেন ইমরান। এ সময় মোদি সন্ত্রাস মোকাবিলার ওপর জোর দেন।
ওদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের সঙ্গে মোদির বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কারণ, পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জৈশ ই মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় এতদিন ভেটো দিয়েছে। কিন্তু এবার তারা তা করে নি। ফলে তাদের প্রতি ভারতের অন্যরকম একটি কৃতজ্ঞতা বোধ কাজ করছে। এমন আবহে প্রথম বৈঠক হবে দু’নেতার মধ্যে। এ বছর ভারতেই মোদি ও সি জিনপিংয়ের মধ্যে আরেকটি আনুষ্ঠানিক বৈঠকের তারিখ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে তারা।
(টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে)
ভারত ও পাকিস্তান একে অন্যের চির বৈরি। কিন্তু বিষয়টি কঠিন আকার ধারণ করেছে সম্প্রতি। বিশেষ করে তা প্রকট হয়ে ওঠে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে। পাকিস্তান সন্ত্রাসকে মদত দেয়- এই অভিযোগে ইসলামাবাদে আয়োজিত সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়া বাতিল করে ভারত। একই পথ ধরে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা সহ আরো কয়েকটি দেশ। ফলে সেই যে সার্কের ভাগ্য ঝুলে গেছে, এখনও তা ঝুলছে। সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অচল হয়ে আছে।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি নির্বাচিত হওয়ার পর শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে। তখন মনে হয়েছিল, দুই দেশের মধ্যে জমে থাকা কূটনৈতিক বিরোধের সমাধান হয়ে যাবে। এই উপমহাদেশ নতুন একটি শান্তির বারতা দেখতে পেয়েছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা। কিন্তু তাও আস্তে আস্তে মিইয়ে গেছে। সর্বশেষ এবার নতুন ক্ষমতায় আসেন ইমরান খান। তিনি ক্ষমতায় আসার অল্প পরেই কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ভারতের আধা সামরিক বাহিনীর কমপক্ষে ৪০ জন সদস্য নিহত হন। এর জন্য দায়ী করা হয় পাকিস্তানকে। বলা হয়, পাকিস্তান মদতপুষ্ট সন্ত্রাসীরা এ হামলা চালিয়েছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আকাশপথে ‘ডগফাইট’ হয়। পারমাণবিক শক্তিধর এই দুটি দেশের মধ্যে ভয়াবহ একটি সার্বিক যুদ্ধের আশঙ্কায় কাঁপতে থাকে পুরো অঞ্চল, এমনকি সারা বিশ্ব। পাকিস্তান আটক করে ভারতের যুদ্ধবিমানের পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে। পরে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে তাকে ভারতের হাতে তুলে দেন ইমরান খান। কিন্তু ভারত সেটাকে পাকিস্তানের দুর্বলতা হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করে।
এবার লোকসভা নির্বাচনের আগে কার্যত নরেন্দ্র মোদি ও তার বিজেপিকে সমর্থন দিয়ে বিবৃতি দেন ইমরান খান। মোদি জিতেছেন। কিন্তু তার মন নরম হয় নি। তিনি বৃহস্পতিবার শপথ নিচ্ছেন। এতে এ অঞ্চলের অনেক প্রতিবেশীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও থাকছেন না ইমরান খান। তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নি। মোদির এমন পদক্ষেপকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা ইমরান খানের প্রতি এক রকম হেয় হিসেবে দেখছেন।
১৩ ও ১৪ই জুন বিশেকেকে হতে যাচ্ছে এসসিও সামিট। দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ওই সম্মেলনে যোগ দেবেন মোদি। এটাই হবে এ মেয়াদে তার বিশ্বনেতাদের সঙ্গে প্রথম দেখাসাক্ষাত। এ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন ইমরান খান। তার সঙ্গে মোদির সাক্ষাতের বিষয়ে সরকারি সূত্রগুলো বলেছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইমরানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় কোনো বিষয় বিবেচনার মধ্যে নেই। ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকের বিষয়ে মিডিয়ায় যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তা পুরোপুরি দূরকল্পনা। তবে তাদের মধ্যে ‘পাসিং মিটিং’য়ের বিষয় উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে সেটা হলে হবে অনানুষ্ঠানিক। তাতে দ্বিপক্ষীয় কোনো বিষয় আলোচনা হবে না। কারণ, শিডিউলে তা নেই।
ওদিকে সরকারি সূত্রগুলো বলেছেন, মোদির শপথ অনুষ্ঠানে ইমরান খানকে আমন্ত্রণ না জানানোকে তিরস্কার হিসেবে দেখা উচিত নয়। কারণ, এ শপথ অনুষ্ঠানে আফগানিস্তান ও মালদ্বীপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ও অংশীদারদের আমন্ত্রণ জানানো হয় নি।
ওদিকে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে বিশকেকের সম্মেলনে কোনো পক্ষই মোদি-ইমরানের মধ্যে দৃশ্যত গঠনমূলক আলোচনার প্রস্তাব দেয়ার মতো অবস্থায় নেই। তবে তাদের মধ্যে করমর্দন বা পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সামান্য সময়ের জন্য শুভেচ্ছা বিনিময়ের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না।
এখানে উল্লেখ্য, পুলওয়ামা হামলা ও তার পর পর পাকিস্তানের বালাকোটে ভারত যে বিমান হামলা চালায়, তার পরও মোদি ও ইমরান খান গত কয়েক মাসে সম্পর্ক বা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে ইমরান খানকে চিঠি লিখেছেন নরেন্দ্র মোদি। তাতে তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস ও সহিংসতামুক্ত পরিবেশে দুই দেশ একত্রে কাজ করতে চায়। এর দু’এক সপ্তাহ পরে চিঠির জবাব দেন ইমরান খান। অভিনন্দনের জন্য মোদিকে ধন্যবাদ জানান ইমরান। পাশাপাশি তিনি আলোচনা প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানান। লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে ফোন করেন ইমরান। এ সময় মোদি সন্ত্রাস মোকাবিলার ওপর জোর দেন।
ওদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের সঙ্গে মোদির বৈঠককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কারণ, পাকিস্তান ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জৈশ ই মোহাম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞায় এতদিন ভেটো দিয়েছে। কিন্তু এবার তারা তা করে নি। ফলে তাদের প্রতি ভারতের অন্যরকম একটি কৃতজ্ঞতা বোধ কাজ করছে। এমন আবহে প্রথম বৈঠক হবে দু’নেতার মধ্যে। এ বছর ভারতেই মোদি ও সি জিনপিংয়ের মধ্যে আরেকটি আনুষ্ঠানিক বৈঠকের তারিখ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে তারা।
(টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে)