দেশ বিদেশ

আ. কাইয়ুমের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি দ্য অবজার্ভেটরির

মানবজমিন ডেস্ক

২৬ মে ২০১৯, রবিবার, ৪:৫৪ পূর্বাহ্ন

মানবাধিকারকর্মী মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুমকে ‘খেয়ালখুশি মতো আটক ও হয়রানির’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দ্য অবজার্ভেটরি ফর দ্য প্রটেকশন অব হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স। ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার (ওএমসিটি) এবং এফআইডিএইচের অংশীদারী সংগঠন এটি। শান্তিপূর্ণভাবে এবং আইনগতভাবে মানবাধিকার বিষয়ক কর্মকা-ের জন্য তাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে বলে এ সংগঠন মনে করে। এ অবস্থায় আবদুল কাইয়ুমের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সব রকম হয়রানি বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে দ্য অবজার্ভেটরি একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্বস্ত সূত্রে দ্য অবজার্ভেটরি জানতে পেরেছে মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুমকে খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বেসরকারি সংগঠন অধিকারের হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারর্স নেটওয়ার্কের সদস্য, ওএমসিটি এসওএস-টর্চার নেটওয়ার্ক এবং এফআইডিএইচের সদস্য। একই সঙ্গে তিনি বিডিপ্রেস২৪ ডট কমের একজন সাংবাদিকও। কাইয়ুম ময়মনসিংহে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবেও কাজ করেন। দ্য অবজার্ভেটরি লিখেছে, মোহাম্মদ ইদ্রিস খান ওরফে ইদ্রিস আলী খানের কাছ থেকে তার নিউজপোর্টাল তৈরি করে দেয়ার জন্য পাওনা অর্থ আনতে যান কাইয়ুম। এদিন ১১ই মে স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ময়মনসিংহ পুলিশের ডিটেক্টিভ শাখা তাকে গ্রেপ্তার করে। পাওনা অর্থ কাইয়ুমকে মার্কিন ডলারে পরিশোধ করতে চান ইদ্রিস খান। কিন্তু কাইয়ুম তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি জানান, এই পাওনা বাংলাদেশি টাকায় দিলে তবেই তিনি তা গ্রহণ করবেন। এ অবস্থায় ইদ্রিস খানের অফিস ত্যাগ করার সময় গ্রেপ্তার করা হয় কাইয়ুমকে। পুলিশ কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, কাইয়ুম মার্কিন ডলার বহন করছিলেন। তিনি বিদেশী মুদ্রার অবৈধ ব্যবসায় জড়িত। তা সত্ত্বেও তারা কাইয়ুমের কাছে কোনো ডলার পাননি। এ অবস্থায় তাকে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে নেয়া হয় ময়মনসিংহ পুলিশের গোয়েন্দা শাখায়। দ্য অবজার্ভেটরি লিখেছে, স্থানীয় সময় রাত সাড়ে দশটার দিকে ইদ্রিস আলীর কাছ থেকে মার্কিন ডলার নেয়ার কথা স্বীকার করতে তাকে চাপ দেন গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ শাহ কামাল, সাব ইন্সপেক্টর আকরাম, মনজু, জুয়েল ও পরিমল। কিন্তু তিনি এ কথা স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপরে অভিযুক্ত কাইয়ুমকে আদালতে পাঠাতে বলা হয়। এতে পুলিশ অফিসাররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কাইয়ুমকে থাপ্পড় ও লাথি মারতে থাকেন ওসি শাহ কামাল, সাব ইন্সপেক্টর আকরাম। এরপর কাইয়ুমকে তার পরনের বেল্ট খুলতে বলেন সাব ইন্সপেক্টর পরিমল। তিনি তার হাত থেকে ওই বেল্ট নিয়ে কাইয়ুমকে প্রহার করতে শুরু করেন। অন্যদিকে সাব ইন্সপেক্টর মনজু তাকে একটি কাঠের চেয়ার দিয়ে প্রহার করতে থাকেন। কাইয়ুমের মাথায় ঘুষি মারতে থাকেন সাব ইন্সপেক্টর জুয়েল। তারপরও তাদের কথামতো অভিযোগ স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান কাইয়ুম। এ অবস্থায় তাকে রেখে পুলিশ কর্মকর্তারা চলে যান। ১২ই মে। এদিন কাইয়ুমকে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান যে, তাকে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৩, ২৫ ও ২৯ নম্বর ধারার অধীনে এবং বাংলাদেশ দ-বিধির ৩৮৫ ও ৩৮৬ ধারার অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৪ই মে ময়মনসিংহের আদালত কাইয়ুমের জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। ১৬ই মে কাইয়ুমের আইনজীবী ময়মনসিংহ সেশন জজ কোর্টে তার জামিন আবেদন করেন। ২৩শে মে এখানেও জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়। এই বিবৃতি যখন দেয়া হয় তখনও ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় জেলে বন্দি কাইয়ুম। এক্ষেত্রে বেশ কিছু সুপারিশ উত্থাপন করেছে দ্য অবজার্ভেটরি। তাতে বলা হয়েছে, আবদুল কাইয়ুমসহ বাংলাদেশের সব মানবাধিকার কর্মীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে। আবদুল কাইয়ুমসহ বাংলাদেশে আটক সব মানবাধিকার কর্মীর অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। কারণ, তাদেরকে খেয়ালখুুশি মতো আটক করা হয়েছে। কারণ তাদেরকে মানবাধিকারের পক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে শাস্তি দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আবদুল কাইয়ুমের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার অধিকার ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে, যেমনটা বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক আইনে। তার সঙ্গে পরিবার ও আইনজীবীর দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে। তাকে নির্যাতনের যে অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে, সে বিষয়ে অবিলম্বে, পূর্ণাঙ্গ, পক্ষপাতিত্বহীন ও স্বচ্ছ তদন্ত করতে হবে, যাতে দোষীদের শনাক্ত করা যায়, তাদেরকে নিরপেক্ষ আদালতে বিচার করা যায় এবং আইনের অধীনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। আবদুল কাইয়ুমের বিরুদ্ধে আনীত সব রকম হয়রানি বন্ধ করতে হবে। একই কাজ করতে হবে বাংলাদেশের সব মানবাধিকার কর্মীদের জন্যও। নিশ্চিত করতে হবে ভীতিহীনভাবে তারা তাদের কর্মকা- পরিচালনা করতে পারবেন। এমনতরো আরো কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। তা পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে সরকারের শীর্ষ মহলগুলোতে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status