দেশ বিদেশ

সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণে কৃষক সংকটে ৯ দফা দাবি উত্থাপন বিএনপি’র

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ মে ২০১৯, রবিবার, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

ধানের নায্যমূল্য না পাওয়া সরকারের ভ্রান্ত নীতিকে দায়ী করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কৃষকদের বর্তমানে যে দুরবস্থা, তা সরকারের ভুলনীতির প্রতিফলন। কৃষক ও ভোক্তার মাঝে মধ্যবর্তী একটা পক্ষ সুবিধা ভোগ করায় ও চাল আমদানির কারণেই কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। সরকারের দুর্নীতি ও অদূরদর্শিতার কারণে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষি আজ ধ্বংসের মুখে। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে ফসল উৎপাদনে। এর সুদূরপ্রসারী পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি কৃষিখাতকে একটি আধুনিক ও টেকসই খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজন সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার। একই সঙ্গে কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য ধানকেনায় ১০ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদানসহ সরকারের প্রতি ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি। গতকাল দুপুরে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব দাবি তুলে ধরেন। মির্জা আলমগীর বলেন, শ্রমিকের কষ্ট লাঘব ও কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের অধীন কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নামে একটি প্রকল্প রয়েছে। দেশের হাওর ও দক্ষিণ উপকূলীয় এলাকায় ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দিয়ে প্রকৃত কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য ছিল এ প্রকল্পটির। কিন্তু সরকারের দলীয়করণ ও দুর্নীতির কারণে প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কোটি কোটি টাকার এই প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে সরকারের দলীয় লোকজন। আর প্রকৃত কৃষক এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা আলমগীর বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ধানের দাম কমে যাওয়ায় কৃষকের ধান সরকার কিনে নিয়েছিল। তখন গুদামজাত করার মতো বেশি স্থান না থাকায় স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাতে ধান গুদামজাত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন, বিশ্বব্যাংক থেকে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য টাকা এনে সরকার দলীয় লোকজন ভাগ করে খেয়ে ফেলছেন। তিনি বলেন, সরকারের দলীয়করণের কারণে খাদ্য বিভাগের অসাধু কর্মকর্তারা কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি চাল কিনতে ৩-৫ টাকা করে ঘুষ নিচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের পকেট ভারী করার জন্য তাদের ধানকেনার অনুমতি দিয়ে সরকার কৃষকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে- এগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাসহ কৃষকের সংকট উত্তরণে বিএনপির ৯ দফা দাবিগুলো হচ্ছে- কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে সরকার ঘোষিত মূল্য অনুযায়ী কৃষককে কমপক্ষে ৩ মাসের জন্য সমপরিমাণ টাকা বিনা সুদে প্রদান করা। যেমন: কোনো ক্ষুদ্র চাষি ৫০ মণ ধান উৎপাদন করলে তাকে ৫০ মণ ধানের বিপরীতে ৫৬,০০০/-টাকা ধার দেয়া। ৩ মাস পর কৃষক তার ধান বিক্রি করে ধার পরিশোধ করবে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তদারকির মাধ্যমে সঠিকভাবে ক্ষুদ্র চাষিকে চিহ্নিত করে এই কাজ করতে পারে সরকার। এতে কৃষক বর্তমান অবস্থা হতে পরিত্রাণ পাবে। সরকারি পর্যায়ের ধান চাল গুদামজাত করার ক্ষমতা প্রায় ২১.৮ লাখ টন। এই ধারণ ক্ষমতা বাড়িয়ে বেশি পরিমাণে ধান ক্রয় করতে হবে। কৃষকদের সহায়তা দিতে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে বেসরকারি গুদাম ভাড়া করে সেখানে ধান চাল সংগ্রহ করা যেতে পারে। সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির আওতা বাড়িয়ে অধিক পরিমাণ চাল বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। যেন কৃষকের বাড়তি উৎপাদনের সদ্ব্যবহার করা যায়। কৃষকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ ধান ক্রয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে হবে। যা দিয়ে সরকার অতিরিক্ত প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ বা ক্রয় করতে পারবে। প্রান্তিক চাষি ও ক্ষেত মজুরদের জন্য বিশেষ সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারদলীয় কর্মীদের ধানকেনার অনুমতি বাতিল করা, ধান উপাদন সম্পর্কে সরকারি সঠিক তথ্য প্রদান, মওসুমের আগেই ধান সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা, ধান-চাল সংগ্রহের পরিমাণ কমপক্ষে বোরো উৎপাদনের ১৫ শতাংশ করা। ধান চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অসৎ কর্মকর্তাদের জড়িত করা যাবে না। অসৎ কর্মকর্তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
মির্জা আলমগীর সরকারের ভুলনীতির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, দেখুন- সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী দেশ খাদ্যে বিশেষ করে চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে চাল উপাদনের পরিমাণ ৩ কোটি ৬২ লাখ টন। অথচ এই সময়ে সরকারি চ্যানেলে বা ব্যবস্থায় খাদ্য শস্য আমদানি হয়েছে ৯৭ দশমিক ৭ লাখ টন। ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচাল (ইউএসডিএ) এর প্রতিবেদন অনুসারে- গত ৩২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণে (৩৮ লাখ মেট্রিক টন) বাংলাদেশ চাল আমদানি করেছে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে। মানে একদিকে বলা হচ্ছে, আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ; অন্যদিকে বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে চাল। কেবল তাদের (ক্ষমতাসীন) সুবিধাভোগীদের সুবিধা দেয়ার জন্যই এই আমদানী করা হয়েছে। ফলে কৃষক তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষকদলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান ?দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কৃষিবিষয়ক সহ-সম্পাদক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল ফারুক, কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status