এক্সক্লুসিভ

ধান সংগ্রহে বাধা

৪ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি সেই যুবলীগ নেতা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

২৬ মে ২০১৯, রবিবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

বেলকুচিতে সরকারি ধান সংগ্রহে যুবলীগ নেতার বাধা এবং ইউএনও’র সঙ্গে অশোভন আচরণ করায় মামলা হলেও ৪ দিনেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। বেলকুচির ইউএনও এসএম সাইফুর রহমান বুধবার রাতে থানাায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক রেজা, পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি আরমান, ছাত্রলীগের বহিষ্কৃৃত নেতা রিয়াদ হোসেন, যুবলীগ নেতা রিপন, সাইফুল, জহুরুল এবং সোহাগসহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। নিজের করা তালিকায় ধান সংগ্রহ না করায় বেলকুচি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক রেজা দলবল নিয়ে ইউএনওকে তার অফিসে গিয়ে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন বলে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

রেজার উত্থান যেভাবে
বেলকুচিতে আওয়ামী রাজনীতিতে এক আতঙ্কের নাম সাজ্জাদুল হক রেজা। নিজের সুবিধার জন্য সে সব কিছুই করতে পারে। তার রোষানল থেকে সাবেক মন্ত্রী, এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, ব্যবসায়ী ও দলীয় নেতাকর্মী কেউ বাদ পড়েননি। সর্বশেষ আক্রান্ত হয়েছেন ইউএনও। আপন বড় ভাই নুরুল ইসলাম সাজেদুল আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল লতিফ বিশ্বাসের মেয়েকে বিয়ে করার পর থেকেই বিশ্বাস পরিবারের সঙ্গে সাজ্জাদুল হক রেজার সখ্য গড়ে ওঠে। তাওই (বড় ভাইয়ের শ্বশুর) আর মাওই (বড় ভাইয়ের শাশুড়ি) এর ছত্রছায়ায় দলের পদ-পদবি পেতে থাকে রেজা। দীর্ঘদিন একসঙ্গে উপজেলা ছাত্রলীগ আর যুবলীগের আহ্বায়কের পদ নিজের দখলে রাখেন। মাঝখানে ছাত্রলীগের পদ ছাড়লেও রয়েছেন যুবলীগে। আওয়ামী লীগ টানা ৩য়বার সরকার গঠনের প্রথম বার আবদুল লতিফ বিশ্বাস মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রী পত্নী আশানুর বিশ্বাস প্রথমে ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান, পরে পৌর মেয়র। আর পুত্রা রেজা ছিল তাদের একমাত্র সিপাহশালার। মাঠপর্যায়ের দলের অনেক কিছুই তখন রেজা নিয়ন্ত্রণ করতেন। বর্তমান সরকারের ২য় মেয়াদে বেলকুচি-চৌহালী আসনে মনোনয়ন পান শিল্পপতি আবদুল মজিদ মণ্ডল।

বাদ পড়েন আবদুল লতিফ বিশ্বাস। এ অবস্থায়ও প্রায় আড়াই বছর রেজা তার তাওই লতিফ বিশ্বাসের সঙ্গেই ছিলেন। সে সময় একাধিকবার এমপি মজিদ মণ্ডলের গাড়ি ভাঙচুর ও দলের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন রেজা। একপর্যায়ে এমপি মজিদ মণ্ডলের সঙ্গে রেজার সখ্য গড়ে ওঠে। তাই তাওই আর মাওই এর ভালোবাসা ভুলে গিয়ে তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়াতে থাকে রেজা। তার নেতৃত্বেই পৌর মেয়র আশানুর বিশ্বাসের ওপর হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনায় মামলা হলে রেজাকে হাজতও খাটতে হয়। জামিনে মুক্ত হয়ে এসে রেজা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন। একপর্যায়ে তার তাওই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাসকে বেলকুচি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যেতে বাধা দেয়া হয়। কোনো স্থানে লতিফ বিশ্বাস মিটিং ডাকলে রেজা তার সমর্থকদের দিয়ে সেখানে পাল্টা মিটিং ডেকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন। এ অবস্থায় সরকারের বর্তমান মেয়াদে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ বিশ্বাস আবারও মনোনয়ন বঞ্চিত হন। আর দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন মজিদ মণ্ডলের ছেলে আবদুুল মোমিন মণ্ডল। তাই যুবলীগ নেতা রেজা হয়ে উঠেন অপ্রতিরোধ্য।

প্রথমদফা উপজেলা নির্বাচনে রেজা বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে তৃণমূলের ভোটে জয়ীও হন। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি মোহাম্মদ আলী আকন্দকে পুনরায় মনোনয়ন দেন। এরপর রেজা তার আপন বড়ভাই ছাত্রদলের সাবেক ভিপি নুরুল ইসলাম সাজেদুলকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করান। এখানে বনানী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনের ছোটভাই সিরাজুল ইসলামও নির্বাচনে অংশ নেন। ভোটের মাঠে ভাইকে জেতাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান রেজা। ভোটগ্রহণ শেষে গণনা চলার সময়ও প্রভাব বিস্তার করেন তিনি। গভীর রাত পর্যন্ত ভোট গণনায় সরকারি স্কোর বোর্ডে ঘোষিত তথ্য অনুযায়ী সিরাজুল ইসলাম এগিয়ে ছিল। ওই অবস্থায় গভীর রাতে জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের ডেকে এনে রেজার ভাই নুরুল ইসলাম সাজেদুলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তখন প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয় কম্পিউটার টাইপ ভুলের কারণে সিরাজুল ভুলক্রমে এগিয়ে ছিল। এ নির্বাচনে বিদ্রোহীদের কারণে ধরাশয়ী হয় নৌকা। ফলাফল বর্জন করে সিরাজুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে পুনরায় ভোটের দাবি করলেও তাতে কোনো সুফল পাননি তিনি।

যুবলীগ নেতা রেজা বেলকুচি-চৌহালীর বর্তমান এমপি আবদুুল মোমিন মণ্ডলের আশীর্বাদপুষ্ট, তার আপন ভাই নুরুল ইসলাম সাজেদুল উপজেলা চেয়ারম্যান আর তিনি নিজে যুবলীগের আহ্বায়ক। যে কারণে বেলকুচির রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ এখন রেজার হাতে। তাইতো নিজের দেয়া তালিকায় ধান সংগ্রহ করতে অশোভন আচরণ করে ইউএনওকে চাপ দিচ্ছিলেন রেজা। কিন্তু বিধিবাম ইউএনও মামলা করায় দলবল নিয়ে রেজাকে এখন পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আর রেজার নানা অপকর্ম এখন বেলকুচিসহ সারা জেলায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status