বাংলারজমিন

ঈদ সামনে রেখে চলছে লক্করঝক্কড় গাড়ি মেরামত

রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে

২৬ মে ২০১৯, রবিবার, ৯:৪২ পূর্বাহ্ন

ঈদকে সামনে রেখে মানিকগঞ্জের প্রতিটি ওয়ার্কসপে পুরোদমে চলছে লক্করঝক্কড় যানবাহন মেরামতের ধুম। বহু বছরের পুরনো এসব গাড়িগুলোর গায়ে রং-চং লাগিয়ে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে। ওয়ার্কসপ থেকে মেরামত শেষে গাড়িগুলো রাস্তায় নামানোর পর দেখে বোঝার উপায় নেই গাড়িগুলো লক্করঝক্কড় ছিল। ঈদে ফিটনেসবিহীন এই সব গাড়ি রাস্তায় নামার কারণে সড়ক দুর্ঘটনার আশংকা করছেন যাত্রীরা। আর পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়েছে।
সরজমিন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ঘেঁষা মানিকগঞ্জের উচুটিয়া এলাকাসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি মেরামতের ওয়ার্কসপে গিয়ে দেখা গেল লক্করঝক্কড় বাস মেরামতের হিড়িক পড়ে গেছে। ফিটনেসবিহীন ভাঙাচোরা গাড়িগুলো জোড়াতালি দেয়া হচ্ছে ওয়ার্কসপে। মিস্ত্রিরা পুরাতন গাড়ি মেরামতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো গাড়ির ইঞ্জিন, সড়ক দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া, ব্রেকে সমস্যা কিংবা সিটগুলো ছেঁড়া। আবার কোনো গাড়ির বডিতে রং-চং নেই। ঈদের সময় বহু বছরের পুরাতন এসব গাড়িগুলো মেরামত করে নতুন সাজে রোডে নামানোর জন্য আনা হয়েছে ওয়ার্কসপে। ২৫-২৬ রোজার মধ্যে লক্করঝক্কড় এসব গাড়িতে রং- চং মাখিয়ে নতুন সাজে রোডে নামানো হবে। দেখে বোঝার উপায় নেই গাড়িগুলো ফিটনেসবিহীন।
রাব্বি ওয়ার্কসপে গিয়ে দেখা গেল রং মিস্ত্রি উজ্জ্বল পুরনো গাড়িগুলোর বডিতে রং-চংয়ের কাজ করছেন। কাজের ফাঁকে উজ্জ্বল জানালেন, পুরাতন গাড়ি ঈদের সামনে রং করে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে। যাতে যাত্রীরা আকৃষ্ট হয়। সময় মতো ডেলিভারি দেয়ার জন্য দিন-রাত গাড়িতে রংয়ের কাজে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।
রাব্বি মটরসের পরিচালক সানোয়ার মিয়া জানালেন, এবারের ঈদে গাড়ির কাজ কম হচ্ছে। আর বর্তমানে যেসব গাড়ি আমরা মেরামত করছি সেগুলোর বেশির ভাগই রোড পারমিট নেই। ঈদের দুই চার দিন আগে রং চং শেষ করে গাড়িগুলো মানিকদের কাছে ডেলিভারি দিতে হবে।
বাসের চালক কুদ্দুস মিয়া জানালেন, ঈদের সময় প্রত্যেক যাত্রীই চায় রং-চং করা সুন্দর গাড়িতে উঠতে। তাই বাসের ভেতরের সিট ও বডিতে রংয়ের কাজ করার জন্য আনা হয়েছে। ঈদের সময় গাড়ির ফিটনেস না থাকলে পুলিশ ও সার্জেন্টরা বিরক্ত করে। তাই গাড়ি চিকচাক্য করা হচ্ছে। আর সারা বছরের চাইতে ঈদের সময় কিছু বাড়তি টাকা কামানো যায়।
পাশেই সেকেন্দর ওয়ার্কসপ। সেখানে লক্করঝক্কড় কয়েকটি গাড়ি মেরামতের কাজ চলছে বেশ জোরেশোরে। কেউ বাসে রং করছে, কেউ ইঞ্জিন খুলে বসেছে আবার কেউ সিট ও বডির কাজ করছেন। এভাবেই এখানকার কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এই ওয়ার্কসপের পুরান গাড়ি মেরামতের কারিগর আলম মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানালেন, ঈদের সময় পুরাতন গাড়ির কাজ সবচেয়ে বেশি থাকে। ইঞ্জিনে ত্রুটি, বডিতে রং-চং নেই, সিট কভার নষ্টসহ নানা সমস্যা নিয়ে মালিকরা তাদের গাড়িগুলো গ্যারেজে নিয়ে আসেন। আমরা সেগুলো মেরামত করে নতুন সাজে সাজিয়ে দিলে বোঝার উপায় নেই গাড়ি পুরাতন ছিল।
ওয়ার্কসপের মালিক সেকেন্দর আলী জানালেন, মাথায় এখন টেনশন পুরনো গাড়িগুলো মেরামত শেষে ২৫-২৬ রোজার মধ্যে কীভাবে ডেলিভারি দেয়া যায়। তাই রাত-দিন কাজ করা হচ্ছে। নতুন-পুরাতন সহ সব ধরনের গাড়ি মেরামতের কাজ আমাদের এখানে করা হচ্ছে।
এ ছাড়া বাসযাত্রীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, রং-চং মেখে গাড়িগুলো রোডে নামানোর ফলে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। আসলে এই গাড়িগুলো হচ্ছে উপরে ফিটফাট এবং ভেতরে সদরঘাট। লক্করঝক্কড় বাসের পাশাপাশি মহাসড়কে টেম্পো, সিএসজি চলাচল আবারো বেড়ে গেছে। এসব গাড়ি মহাসড়কে চলাচলে বন্ধ না হলে ঈদে দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। প্রশাসনের নজরদারি থাকলে ঈদে পুরনো ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো চলাচলে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন।
দেখা যায়, ঈদের আগের তিন-চারদিন সময় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের চাপের বিপরীতে যানবাহন সংকট হয়ে পড়ার সেই সুযোগ কাজে লাগায় একশ্রেণির পরিবহন ব্যবসায়ীরা। রাস্তায় তখন ভালো-মন্দ গাড়ির বাছ বিচার না করে মানুষজন হাতের কাছে যা পায় সেসব গাড়িতেই উঠে যাত্রা শুরু করেন। উপরে রং-চং লাগিয়ে লক্করঝক্কড় গাড়িগুলো সড়কে নামানোর সঙ্গে সঙ্গে কোথাও না কোথাও বিকল হয়ে পড়ে। ফলে রং-চং মাখা এই সব গাড়ির কারণে ঈদে ঘরমুখো মানুষজন রাস্তায় রাস্তায় ভোগান্তির শিকার হন। সেই সঙ্গে ঘটে দুর্ঘটনাও। মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি যাতে রাস্তায় চলাচল করতে না পারে সে জন্য আমরা প্রতিনিয়তই ব্যবস্থা নিচ্ছি। এখন থেকে সে ব্যাপারে আমরা জোরালো ভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যাতে ঈদের সামনে এসব গাড়ি রোডে চলতে না পারে। এছাড়া মহাসড়কে যাতে তিন চাকার গাড়িগুলো চলাচল করতে না পারে সে দিকেও আমাদের নজরদারি থাকবে। জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যৌথভাবে কাজ করে যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status