বাংলারজমিন
মনুপাড়ের মানুষের নির্ঘুম রাত
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
২৬ মে ২০১৯, রবিবার, ৯:৪১ পূর্বাহ্ন
মৌলভীবাজারে গত কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিপাত এবং উপর থেকে নেমে আসা পানির কারণে মনুনদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে নদীপাড়ের মানুষের মাঝে। নির্ঘুম রাত কাটছে মনুপাড়ের আদিনাবাদ, কালাইকোনা ও এর আশপাশের মানুষের। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে গতকাল দুপুর থেকে মনু ও ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জানা যায়, গত কয়েকদিনের বৃষ্টি এবং ভারতের কৈলাশহরে ২৫০ মি. মি. বৃষ্টিপাতের কারণে উপর থেকে পানি নেমে আসায় মনু ও ধলাই নদীতে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যবারের মতো প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশের আশঙ্কা থাকায় মনুপাড়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। মনুনদীর রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের কালাইকোনা এলাকায় ও টেংরা ইউনিয়নের আদিনাবাদ এলাকার একটি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে রাত জেগে পাহাড়া দিয়েছে এবং বস্তা ফেলে কোনো মতে প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙন ঠেকিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনও ভাঙন ঠেকাতে সাহায্য করেছে। আদিনাবাদ এলাকার সম্ভাব্য ভাঙন এলাকায় এখনো পানি ছুঁই ছুঁই। গ্রামের ফারুক মিয়া (৫৯) ও মকলু মিয়া (৫০) জানান, বর্ষা আসলেই আতঙ্কের মধ্যে রাত কাটাতে হয়। সাময়িকভাবে বাঁধ মেরামত করা হয়। স্থায়ী চিন্তা করা হয় না। ব্লক না ফেলে শুধু মাটি দিয়ে স্থায়ী সমাধান হবে না। তারা জানান, এবার মানুষজন বেশি আতঙ্কিত ছিল। গতবছরও ঈদুল ফিতরের সময় মনুনদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছিল রাজনগর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে এবং মৌলভীবাজার শহরের একাংশে। তাছাড়া মনুনদী খননের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তা অল্প পরিমাণ বাস্তবায়িত হয়েছে। ফলে নদীপাড়ের মানুষের কাছে ভরাট হওয়া এই নদী বর্ষা আসলেই মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দেখা দেয়। জানা যায়, দীর্ঘদিনের পলি জমে মনুনদীর তলদেশ ভরাট হয়ে ওঠেছে। বিভিন্ন স্থান মারাত্মকভাবে চর জেগে ওঠে। এতে স্বল্পমাত্রার বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফুলে ফেঁপে ওঠে মনু। পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ উপচে বন্যা আক্রান্ত হয় তীরবর্তী এলাকার মানুষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটিএ ‘অভ্যন্তরীণ নৌ-পথের ৫৩টি রুটে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (প্রথম পর্যায়: ২৪টি নৌ-পথ)’ প্রকল্পের আওতায় সারা বছর যাতে মনুনদীতে নৌ-যান চলাচল করতে পারে সে উপযোগী নদীটি খননের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এই খনন কাজ চলতি বছরের ২৩শে মে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো হয়নি। বন্যা ও বন্যা পরবর্তী জরিপসহ নানা অজুহাতে কাজ হয়েছে ২৫% বা তার একটু কমবেশি। জানা গেছে কাজের সময় নতুন করে আবার বাড়ানো হয়েছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র সংকর চক্রবর্তী জানান, মনু-ধলাই নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ার মূল কারণ ভারতের কৈলাশহর ২৫০ মি. মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই বৃষ্টির পানি এই পথেই আসে। তিনি আরো জানান, শুক্রবার রাতে মনুনদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের দুই জায়গায় ভাঙনের আশঙ্কা থাকলেও বস্তা ফেলে ঠেকানো হয়েছে। এখন পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।