বিনোদন

জন্মবার্ষিকীতে স্মরণ

চলচ্চিত্রে নজরুল

স্টাফ রিপোর্টার

২৫ মে ২০১৯, শনিবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি। তার গল্প ও উপন্যাস নিয়ে যেমন বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, তেমনি তিনি নিজেও সম্পৃক্ত ছিলেন চলচ্চিত্রের সঙ্গে। অসংখ্য চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছে তার গান। ত্রিশ ও চল্লিশ দশকের শুরুতে নজরুল নিজের গাওয়া ও সুরারোপিত গানের জন্য বিপুল খ্যাতির অধিকারী ছিলেন। সে সময় চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা, যে শিল্পীরা সিনেমায় গাইবেন তাদের গান শেখানো এবং যে শিল্পী অভিনয় করবেন তাদের শুদ্ধ উচ্চারণ শেখানোর দায়িত্ব পালন করেছেন নজরুল। শুধু তাই নয়, তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছেন। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের নাম ‘ধূপছায়া’। এতে দেবতা বিষ্ণুর চরিত্রে অভিনয়ও করেন তিনি। ত্রিশের দশকে নজরুল পার্শি মালিকানাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাডান থিয়েটার্সের ‘সুর ভাণ্ডারী’ পদে নিযুক্ত হন। এই পদটি ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৩১ সালে প্রথম বাংলা সবাক চলচ্চিত্র ‘জামাই ষষ্ঠী’তে সুর ভাণ্ডারীর কাজ করেন নজরুল। ম্যাডান থিয়েটার্স কোম্পানির আরো যেসব চলচ্চিত্রের সঙ্গে নজরুল সম্পৃক্ত ছিলেন সেগুলো হল, ‘জ্যোৎস্নার রাত’ (১৯৩১), ‘প্রহ্লাদ’ (১৯৩১), ‘ঋষির প্রেম’ (১৯৩১), ‘বিষ্ণুমায়া’ (১৯৩২), ‘চিরকুমারী’ (১৯৩২), ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ (১৯৩২), ‘কলঙ্ক ভঞ্জন’ (১৯৩২), ‘রাধাকৃষ্ণ’ (১৯৩৩) এবং ‘জয়দেব’ (১৯৩৩)। এরপর তিনি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা ও গান লেখার কাজে জড়ান। ১৯৩৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পাতালপুরী’ চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেন নজরুল। তিনি এবং পরিচালক শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় ছিলেন এ ছবির গীতিকার। ‘পাতালপুরী’ সিনেমাটি কয়লাখনির প্রমিক ও সেই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবনসংগ্রাম নিয়ে নির্মিত হয়েছিল। এ ছবির জন্য ‘ঝুমুর’ সুরে গান রচনা করেন নজরুল। ১৯৩৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘গৃহদাহ’ চলচ্চিত্রের সুরকার ছিলেন তিনি। ১৯৩৭ সালে মুক্তি পায় রহস্য কাহিনীভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘গ্রহেরফের’। এ ছবির সংগীত পরিচালক ও সুরকার ছিলেন নজরুল। ১৯৩৭ সালের সেরা চলচ্চিত্র ‘বিদ্যাপতি’র মূল গল্প ছিল নজরুলের। যদিও চিত্রনাট্য, সংলাপ ও পরিচালনায় ছিলেন দেবকী বসু। ছবিটির সুরকার ছিলেন নজরুল ও রাইচাঁদ বড়াল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৩৮ সালে নির্মিত হয় চলচ্চিত্র ‘গোরা’। চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক ছিলেন নজরুল। বিশ্বভারতী আপত্তি করে, ছবিটিতে সঠিকভাবে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া হচ্ছে না। নজরুল তখন সোজা চলে যান কবিগুরুর কাছে। রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে সমর্থন করেন এবং বিশ্বভারতীর সমালোচনা করে বলেন, আমার গান কীভাবে গাইতে হবে সেটা কি তোমার চেয়ে ওরা ভালো বুঝবে? ১৯৩৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাপুড়ে’ ছবির কাহিনীকার ও সুরকার ছিলেন নজরুল। পরিচালক দেবকী বসু। বেদে জীবন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য নজরুল কিছুদিন বেদে দলের সঙ্গে ছিলেন। এছাড়া ‘রজতজয়ন্তী’ (১৯৩৯), ‘নন্দিনী’ (১৯৪১), ‘অভিনয়’ (১৯৪১), ‘দিকশূল’ (১৯৪১) চলচ্চিত্রের গান লিখেছিলেন নজরুল। গানগুলো সে সময় লোকের মুখে মুখে ফিরত। কবি নজরুলের জীবনীভিত্তিক কয়েকটি তথ্যচিত্রও নির্মিত হয়েছে। নজরুল অসুস্থ হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থায়নে ১৯৫৬-৫৭ সালে নির্মিত হয় ‘বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম’। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের প্রযোজনায় নির্মিত হয় ‘বিদ্রোহী কবি’। ১৯৭২ সালে ভারত সরকারের প্রযোজনায় নির্মিত হয় ‘কাজী নজরুল ইসলাম’। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৮০-৮১ সালে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের প্রযোজনায় নির্মিত হয় ‘কবি নজরুল’। বিবিসি টিভি চ্যানেল ফোর থেকে নির্মিত হয় ‘কাজী নজরুল ইসলাম’। কানাডার চলচ্চিত্র পরিচালক ফিলিপ স্পারেল নির্মাণ করেন তথ্যচিত্র ‘নজরুল’। নজরুলের ‘মেহেরনেগার’ গল্প অবলম্বনে ২০০৬ সালে ঢাকায় যৌথভাবে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন মুশফিকুর রহমান গুলজার ও মৌসুমী। চলচ্চিত্রে প্রধান দুই চরিত্র কাশ্মীরের তরুণী মেহের নেগারের চরিত্রে মৌসুমী এবং আফগান যুবক ইউসুফের ভূমিকায় ফেরদৌস অভিনয় করেন। প্রযোজনা করে ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। একই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের আরেক চলচ্চিত্র নির্মিত হয় নজরুলের গল্প ‘রাক্ষুসী’ অবলম্বনে। পরিচালক মতিন রহমান। ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন রোজিনা, পূর্ণিমা ও ফেরদৌস। এর আগে নজরুলের গল্প ‘জিনের বাদশাহ’ অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেন বাপ্পারাজ। তার ‘লিচু চোর’ এবং ‘খুকি ও কাঠবিড়ালী’ কবিতা অবলম্বনে শিশুদের জন্য দুটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে। অসাম্প্রদায়িক বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ কাজী নজরুল ইসলামের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন নিয়ে এখনও নির্মিত হতে পারে শিল্পসার্থক আরো অনেক চলচ্চিত্র।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status