শেষের পাতা

ওসি’র অপসারণ দাবিতে আন্দোলন

আতঙ্কের জনপদ ‘শাহপরাণ থানা’

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৪ মে ২০১৯, শুক্রবার, ১০:২০ পূর্বাহ্ন

চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে শাহপরাণ এলাকায়। প্রতিদিনই ঘটছে কোনো না কোনো ঘটনা। এসব ঘটনায় শাহপরাণ থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ গত বুধবার থেকে সুরমা বাইপাসের দাসপাড়া ও কল্লোগ্রামের মানুষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ওই দিন রাতে আলম নামের এক যুবলীগ কর্মীকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা। আলম সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর আগের দিন মঙ্গলবার সুরমা গেইট, শাহপরাণ, খাদিম চৌমুহনা, বাইপাস হক কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে কয়েকটি এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনার জন্য শাহপরাণ থানার ওসি আক্তার হোসেনকে দায়ী করে গতকাল মুরাদপুর এলাকায় মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা। এ সময় আয়োজিত মানববন্ধনে তারা ওসি আক্তারের নীরব ভূমিকার সমালোচনা করেন। খাদিমপাড়া ইউপি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজমল আলী নেপুর মিয়াকে মামলায় আটকের ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার মধ্যরাতে গোটা এলাকায় মহড়া দেয়া হয়েছে।

খাদিম পাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউপি আওয়ামী  লীগের সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম বিলাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন- সাজানো ঘটনায় খাদিমপাড়া ইউনিয়নের সালিশ ব্যক্তিত্ব ও ইউপি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজমল আলী নেপুর মিয়াকে গ্রেপ্তারের পর ওসি আক্তার হোসেনের উপর ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে ইউপি চেয়ারম্যান আফসারের যোগসূত্রতা আনেন নেপুর মিয়ার স্ত্রী হারুন বেগম। এ ঘটনার পর রাতে ওসি আক্তার ও চেয়ারম্যান আফসারের পক্ষে সন্ত্রাসীদের একটি পক্ষ মধ্যরাতে লাঠিসোটা নিয়ে বের হয়। শাহপরাণ গেটে অবস্থান নিয়ে তারা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বিলাল সহ আওয়ামী লীগের নেতাদের গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে তারা বাইপাস হক কমিউনিটি সেন্টারের সামনে গিয়ে আবুল হাসনাতকে গালিগালাজ করে। এ সময় স্থানীয় মুসল্লিদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে সন্ত্রাসীরা চলে আসে। খাদিম পাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বিলাল ও আবুল হাসনাত সিলেট মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার দক্ষিণের কার্যালয়ে গিয়ে সন্ত্রাসীদের মহড়ার বিষয়ে অভিযোগ জানান। এ সময় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এখন শাহপরাণ বাইপাসে মাটি কাটার টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বুধবার রাতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় সুরমা গেট বাইপাস এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরজ করছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- শাহপরাণ থানা এলাকার ওসি আক্তার হোসেনকে বড় অঙ্কের টাকা ভাগ দিয়ে দাসপাড়া চক গ্রামের যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম ও কল্লো গ্রামের যুবলীগ নেতা আলম মিয়া যৌথভাবে পাহাড় ও টিলা কেটে মাটি বিক্রি করতো। স্থানীয় বাবুল ও আনা সিন্ডিকেটকে টক্কর দিয়ে তারা একত্রে ব্যবসা করে আসছিলো। সম্প্রতি টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্ধ বাধে। এই দ্বন্দ্বের মধ্যে মাটি ব্যবসায়ী আলম তার পার্টনার সাইফুলের কাছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা পাবে। আলম এই টাকার জন্য বার বার সাইফুলকে চাপ দিচ্ছিলো। কিন্তু আলমকে টাকা দিচ্ছিলো না সাইফুল। বুধবার রাত ১১ টার দিকে আলম টাকার জন্য সাইফুলের সঙ্গে দেখা করতে বাইপাস এলাকায় যায়। এ সময় সাইফুল ও তার সহযোগিরা মিলে আলমকে আটক করে লোহার রড, কাঠের ঠুকরো দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধোর করে।

তার হাতের আঙ্গুলও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনার খবর পেয়ে আলমের পক্ষে কল্লোগ্রামের আরেক যুবলীগ নেতা দুলুর নেতৃত্বে তাৎক্ষনিক শতাধিক মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় অবস্থায় নেয়। এ সময় তারা দাসপাড়া এলাকায় এসে সাইফুলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তারা পাওয়া টাকা এক দিনের মধ্যে ফেরত দেয়ার আলটিমেটাম দিয়ে চলে আসে। এ ঘটনার পর এলাকার তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাতে এ নিয়ে সালিশ বৈঠকের কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন মুরব্বী। এদিকে- এই অবস্থায় সিলেটের শাহপরাণ থানার বহুল বিতর্কিত ওসি আক্তার হোসেনের অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন করেছে স্থানীয়রা। শাহপরান এলাকার নানা ঘটনার জন্য তারা ওসি আক্তার হোসেনকে দায়ি করে তাকে দ্রুত সিলেট মেট্রো ও রেঞ্জ পুলিশ থেকে অপসারনের দাবি জানান। গতকাল শহতলীর মুরাদপুর গ্রামবাসী ও খাদিমপাড়া ইউপির ৩ নং ওয়ার্ডের মানুষ প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন। শাহপরান বাইপাসের মুরাদপুরে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা বলেন- ওসি আক্তারের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারনে শাহপরাণ থানার অন্তর্ভুক্ত সব এলাকা অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। তার কারনেই আজ শাহপরাণ এলাকায় অশান্তি বিরাজ করছে। বক্তব্য রাখেন- বিশিষ্ট রাজনিতিবিদ সাইফুল রহমান খোকন, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিব আলী, প্রবীন মুরব্বী সিরাজ মিয়া, গিয়াস মিয়া, সুনাই মিয়া, ফগাই মিয়া, মখলিছ মিয়া, খলিল মিয়া, ওয়াহিদ আলী, তাহির আলী, সাইদ মিয়া, মুশাহিদ মিয়া , কটাই মিয়া, মখই মিয়া, ফুজুর মিয়া, সুমন মিয়া, ইরফান আহমদ, রিপন আহমদ, রায়হান আহমদ, জাহেদ আহমদ, ইমরান আহমদ, আবুল হোসেন, মতিন মিয়া, টিপু মিয়া, নূর ইসলাম, মামুন মিয়া, সোহেল আহমদ, হাবিব আহমদ, সাজু মিয়া , রেজয়ান আহমদ, লিমন আহমদ, আলী আহমদ, কয়েছ আহমদ, উস্তার মিয়া, লাল মিয়া, আদিল মিয়া, শাহিন আহমদ, আব্দুল আলিম, গনেস মিয়া প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status