বাংলারজমিন
সন্তানদের মুখে খাবার দিতেই পথে নেমেছি
নুরুল আমিন, চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) থেকে
২৪ মে ২০১৯, শুক্রবার, ৯:৩০ পূর্বাহ্ন
ছোট সন্তান গর্ভে আসার পরই স্ত্রী জেসমিনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় স্বামী সজল হক। বিয়ের পরের বছরই প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয় ইয়াসিন। বিবাহিত জীবনের ৯ বছরের মাঝে জেসমিন ৩ সন্তানের মা হয়ে যান। ইয়াসিনের প্রতিবন্ধিতা নিয়ে সজল হক স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এক সময়। প্রতিবন্ধী ইয়াসিনের জন্ম নেয়াটাকে সে স্ত্রীর ওপর চাপিয়ে দেয়। এক সময় বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায় সজল। বেচারি জেসমিন প্রতিবন্ধী ইয়াসিন (৮) জিহান (৪) এবং দেড় বছরের নিশু কন্যাকে নিয়ে পড়ে যান বিপাকে। প্রথমে এ বাড়ি ও বাড়ি গিয়ে ঝি এর কাজ করে ৩ সন্তানের ভরণ পোষণ চালান। এখন আর চলে না তাই প্রতিবন্ধী ইয়াসিনকে বাজারে তুলতে বাধ্য হয়েছেন। সেই হতভাগীর বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ গ্রামে। আনোয়ার নামের এক ঘটক তাকে ১৩ বছর বয়সে বিয়ে দেয় চুনারুঘাট উপজেলার গেড়ারুক গ্রামের আঃ হকের পুত্র সজল হকের সঙ্গে। বিয়ের প্রথম বছরই ওই কিশোরী মা বনে যান। জন্ম নেয় শারীরিক প্রতিবন্ধী ইয়াসিন। একে একে জন্ম নেয় জিহাদ ও নিশু। গায়ে-গতরে জেসমিন যে বেশ সুন্দরী ছিলো তা বুঝা যায় এখনো তবে দারিদ্র্যের ছাপ- গায়ে-মুখে। শরীরে ঘামাছি উঠেছে। স্বাস্থ্যেও ঘটেছে অবনতি। কাপড়-চোপড় ময়লা-দুর্গন্ধময়। জেসমিনের সঙ্গে সেদিন কথা হয় স্থানীয় আমুরোড বাজারে। প্রতিবন্ধী ইয়াসিনকে মাটিতে শুয়ে রেখেছেন। ফুটফুটে জিহান মা’য়ের পাশেই ঘোরাঘুরি করছে। আর নিশু মায়ের কোলে দিব্য আরাম করে ঘুমাচ্ছে। জেসমিন বলেন, উপায় না দেখে বাজারে হাত পাততে বাধ্য হয়েছি। অসহায় সন্তানের মুখে কয়েক মুঠো খাবার দিবো বলেই ভিক্ষার হাত আজ আপনাদের কাছে। তিনি বলেন, স্থানীয় ময়-মুরব্বি, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে নালিশ করে কোনো বিচার না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভিক্ষার হাত বাড়াই। যা পাই তা দিয়ে ৩ সন্তানের মুখে আহার দিচ্ছি। আপনি কি রোজা রেখেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আল্লাহ’র ফরজ রোজা না রাখলে গুনাহ হবে তাই রোজা রেখেছি। সেহ্রি কি দিয়ে খেয়েছেন ? ভাত, আলুর ভর্তা। পাশের একটি খাবারের দোকান দেখিয়ে বললেন, তিনি আজ ইফতার করাবেন। হতভাগী জেসমিনের সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। অবহেলা আর অনাদরে বেড়ে উঠছে ওই সন্তান ৩ জন।