বাংলারজমিন
ভূঞাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন হয় না ১৯ বছর
কামাল হোসেন, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) থেকে
২৩ মে ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:১৭ পূর্বাহ্ন
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নামেই ৫০ শয্যা। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অপারেশন থিয়েটার থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে কোনো অপারেশন হয় না। হাসপাতালের এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন নষ্ট এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। প্যাথলজি বিভাগেরও করুণ দশা। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও মহিলা, শিশু ও পুরুষ ওয়ার্ডের অধিকাংশ ফ্যানই নষ্ট। রোগীদের খাবার মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। আর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকেন প্রাইভেট ক্লিনিক নিয়ে। সরজমিন দেখা গেছে, ভুঞাপুর ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। দীর্ঘদিন ধরে ডাক্তার সংকটের কারণে প্রায় ৫ লাখ জনগোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছে সেবা চিকিৎসা সেবা থেকে। হাসপাতালটি ৪টি উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় ভুঞাপুরসহ পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল, গোপালপুর ও কালিহাতী উপজেলা থেকে রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে আসে এখানে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক, নার্স, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকটের কারণে কোনো সেবা না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। সরকারি বিধি মোতাবেক বিশেষজ্ঞসহ ২৭ জন চিকিৎসকের অনুমোদন রয়েছে। সেখানে কাগজে-কলমে ডাক্তার রয়েছেন মাত্র ৬ জন। বাকি ২১ জনের কেউ ডেপুটেশনে আবার কেউ বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা একজন, ইউনানি একজন, ডেন্টাল সার্জন একজন, গাইনি একজন, অর্থোপেডিকস একজন, শিশু বিশেষজ্ঞ একজন ও জেনারেল ফিজিশিয়ান রয়েছে একজন। এসব ডাক্তার সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিনের বেশি অফিস করেন না। স্বাস্থ্য সহকারী, টেকনিশিয়ান, ল্যাবরেটরি এসিস্ট্যান্ট ও এমএলএসএস পদে ১টি করে পদ থাকলেও কোনো জনবল নেই। অফিস সহকারী ৩ জনের মধ্যে রয়েছে মাত্র ১ জন, স্বাস্থ্য সহকারীর পদ শূন্য রয়েছে ৫টি। সিকিউরিটি গার্ড থাকার কথা ৩ জন, সেখানে রয়েছে মাত্র ১ জন। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও অপারেশন থিয়েটার থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে কোনো অপরেশন হয় না। অযত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। সম্প্রতি হাসপাতালে সেবা না পেয়ে এক নারী রাস্তার উপরেই সন্তান প্রসব করে। হাসপাতালে একটি এক্স-রে মেশিন এক যুগ ধরে অচল অবস্থায় রয়েছে। আল্ট্রসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও সনোলজিস্ট না থাকায় সেটিও বিকল। প্যাথলজিক্যাল ল্যাবে নামে মাত্র কিছু পরীক্ষা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে দুটি অ্যাম্বুলেন্সও। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেও মহিলা, শিশু ও পুরুষ ওয়ার্ডের অধিকাংশ ফ্যানই নষ্ট। এদিকে রোগীদের খাবার মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। হাসপাতাল থেকে রোগীর জন্য যে খাবার পরিবেশন করা হয় তা অত্যন্ত নিম্নমানের। হাসপাতালের দিকে নজর না দিয়ে প্রধান কর্তা ডা. আবু সামা ব্যস্ত থাকেন নিজস্ব প্রাইভেট ক্লিনিক ও অন্যান্য প্রাইভেট ক্লিনিক নিয়ে। আয়েশা বেগম নামে এক রোগীর স্বজন জানান, তিন দিন ধরে মাকে নিয়ে হাসপাতালে রয়েছি। ফ্যান নষ্ট। গরমে মায়ের সমস্যা আরো বেশি। তাই কোনো উপায় না পেয়ে বাড়ি থেকে ফ্যান নিয়ে এসেছি। আমরা মহিলা মানুষ। নার্সদের বললে ওনারা বলেন উপরে জানান। আমাদের কিছু করার নেই। হাবিবুর রহমান হবি নামে এক রোগী জানান, কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে আছি। হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেয় তা খাওয়া যায় না। শুধু পাঙ্গাশ মাছ আর আলু দেয়। আর যে রান্না তা খাওয়া যায় না। মর্জিনা বেগম নামে এক রোগীর স্বজন জানান, হাসপাতালে কোনো পরীক্ষা হয় না। এক্স-রে করে আসলাম সেবা ক্লিনিক থেকে। হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন নাকি নষ্ট। মর্জিনা, আয়েশা, হাবিবুরের মতো হাজারো রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ চিকিৎসা সেবা, রোগীদের খাবার মান ও ওষুধ সরবরাহ নিয়ে। চিকিৎসক না থাকা, এক্স-রে ও আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন নষ্ট, ফ্যান অকেজোসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সামা বলেন, বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আশা করি খুব তাড়াতাড়ি এর সমাধান হয়ে যাবে।
আশা করি খুব তাড়াতাড়ি এর সমাধান হয়ে যাবে।