এক্সক্লুসিভ

উত্তেজনা চরমে

ইউরেনিয়াম উৎপাদন ৪ গুণ বাড়িয়েছে ইরান

মানবজমিন ডেস্ক

২২ মে ২০১৯, বুধবার, ৯:৩৯ পূর্বাহ্ন

স্বল্প-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন চার গুণ বাড়িয়েছে ইরান। দেশটির আধা-সরকারি ফার্স ও তাসনিম বার্তা সংস্থা ইরানের পারমাণবিক সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দির বরাতে এ খবর দিয়েছে। কামালভান্দি আরো জানান, জাতিসংঘের আণবিক পর্যবেক্ষক ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ)-কে আগেভাগেই এ ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘স্বল্প-সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদনের জন্য ৩০০ কেজির যে সীমা বেঁধে দেয়া আছে, তা অতিক্রম করতে আর বেশি সময় আমাদের লাগবে না।’ তিনি বলেন, পারমাণবিক চুক্তির সীমারেখার মধ্যেই ইরানের এই সেন্ট্রিফিউজ সমৃদ্ধিকরণ ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপ অনুমোদিত। তিনি আরো জানান, তেহরান এই চুক্তি থেকে সরবে না। এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।

আল জাজিরার জেইন বাসরাভি জানান, ‘ঘড়ির কাঁটা চালু হয়ে গেছে।’ যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যাওয়ায়, ইরানি প্রেসিডেন্ট রুহানি অবশিষ্ট স্বাক্ষরকারী দেশকে এই চুক্তি রক্ষা করতে ৬০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন। বাসরাভি বলেন, ‘এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে এটি স্পষ্ট যে, চুক্তি নিয়ে অসহযোগিতার যে হুমকি ইরান দিয়েছে, তা সত্যিকার অর্থেই দিয়েছে। এমনকি পরবর্তীতে এই চুক্তি থেকে দেশটি সরেও যেতে পারে।’

দোহা’য় ব্রুকিং ইনস্টিটিউটের ভিজিটিং ফেলো আলি ফাতুল্লাহ নেজার মনে করেন, ইরান মূলত ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে উপনীত হওয়ার আগে দরকষাকষির ক্ষেত্রে যে অবস্থানে ছিল সেখানে পৌঁছাতে চায়। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখানো যে, ইরান কোনো দুর্বল অবস্থানে নেই। তবে এটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণও। কারণ, এখন পর্যন্ত ইউরোপ থেকে যে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমর্থন ইরান পেয়েছে, তা হুমকিতে পড়বে।

এদিকে ইরানের কথিত হুমকির প্রেক্ষিতে পারস্য উপসাগরে বোমারু বিমান ও এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। এ নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরই মাঝে ইউরেনিয়াম উৎপাদন বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে ইরান। গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন নিজেদের অপ্রয়োজনীয় কূটনৈতিক কর্মীদের ইরান থেকে সরিয়ে নিয়েছে। দেশটি এক্ষেত্রে ইরাকে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর হুমকির কথা উল্লেখ করেছে। রোববার ইরাকের রাজধানী বাগদাদের গ্রিনজোনে রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। এই গ্রিনজোনে অনেক সরকারি স্থাপনা ও যুক্তরাষ্ট্র সহ বিদেশি দূতাবাসসমূহ অবস্থিত। ওই হামলার পেছনে কে দায়ী, তা স্পষ্ট নয়। এদিকে ইরাকি নেতৃবৃন্দ যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধে ইরাককে টেনে নেয়ার বিরুদ্ধে সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। ইরাকের প্রখ্যাত শিয়া মুসলিম নেতা মুকদাতা আল সদর বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ উস্কে দেয়ার বিরুদ্ধে তিনি। কারণ, সেক্ষেত্রে ইরাক হয়ে উঠবে অন্যতম যুদ্ধক্ষেত্র। তিনি বলেন, ‘আমাদের দরকার শান্তি ও নির্মাণ। যারাই ইরাককে তাদের যুদ্ধে টেনে নিয়ে যাবে ও ইরাককে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করবে, তারা ইরাকি জনগণের শত্রু।’

এদিকে ইরানের ‘হুমকি’র বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যেসব দাবি করছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে খুব সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও দুই দেশের মধ্যকার বাগাড়ম্বর ও উত্তেজনা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজাররিক সকল পক্ষকে বাগাড়ম্বর কমানোর আহ্বান জানিয়েছেন। জেনেভাতে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, মার্কিন হুমকি নিয়ে সন্দেহ থাকা উচিত নয় ইরানের। যদি আমেরিকান স্বার্থে আঘাত আসে, আমেরিকা প্রতিশোধ নেবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা চাই পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাক। কারণ বিশ্বের ওই অংশে পরিস্থিতি দুর্ঘটনাক্রমেও অন্যদিকে মোড় নিতে পারে।’ এদিকে ওমানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোমবার গোপনে তেহরান সফর করেছেন। গত সপ্তাহে ওমানের সুলতান কাবুস বিন সাঈদের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সাক্ষাতের পর ওই সফর করেন ওমানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। ওমান দীর্ঘদিন ধরে তেহরানের সঙ্গে আলোচনায় পশ্চিমের জন্য পেছনের দরজা হিসেবে কাজ করেছে। এর আগে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গোপন আলোচনা হয়েছিল ওমানের মাধ্যমে, যা থেকেই শেষ অবধি পারমাণবিক চুক্তি সই করে উভয়পক্ষ। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করে ইরান সফর করেন উভয় দেশের অভিন্ন মিত্র কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status