শেষের পাতা

প্রবাসীর স্ত্রীকে প্রকাশ্যে লাঠিপেটার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে

১৯ মে ২০১৯, রবিবার, ১০:১৫ পূর্বাহ্ন

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় প্রকাশ্যে এক ওমান প্রবাসীর স্ত্রী (৩৫) তিন সন্তানের জননীকে অর্ধনগ্ন করে লাঠিপেটা ও নির্যাতনের ভিডিও এখন সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। ওই ভিডিও দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয় জনতা। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জড়িত ব্যক্তির কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। তবে কুলাউড়া থানা পুলিশ  অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে গতকাল গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। জানা যায়, উপজেলার বরমচাল ইউনিয়ন এলাকায় প্রবাসীর স্ত্রীকে লাঠিপেটাকারী ওই ব্যক্তি একই ইউনিয়নের উজানপাড়া গ্রামের মৃত সরল খানের পুত্র মোলাইম খান। স্থানীয় বাসিন্দা ও থানায় দায়েরকৃত মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার ওই প্রবাসীর স্ত্রী তিন কন্যার জননী।

বড় মেয়ের কিছুদিন আগে বিয়ে দেয়া হয়। বাড়িতে ওই নারী তার দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। মোলায়েম খান এবং ওই প্রবাসীর বাড়ি পাশাপাশি গ্রামে। গত সোমবার দুপুরে প্রবাসীর স্ত্রী স্থানীয় ফুলেরতল বাজার থেকে মোবাইল ব্যাংকিকের ‘বিকাশ’ এজেন্ট থেকে নগদ টাকা উত্তোলন করে বাড়িতে আসেন। এসময় ওই নারীর পিছু ধরে মোলাইম খাঁ ওই প্রবাসীর  বাড়িতে যান। এসময় প্রবাসীর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেন। এতে ব্যর্থ হলে মারধর করে ঘর থেকে বের করে আনেন। পরে ওই মহিলার দুই মেয়ের সামনে অর্ধনগ্ন করে প্রকাশ্যে বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করেন। এসময় ওই মহিলার মেজো ও ছোট মেয়ে মাকে রক্ষায় এগিয়ে আসলে তারও আঘাত পান। পরে তাদের আত্মচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে মোলাইম খান ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।

মারধরকারী অভিযুক্ত মোলাইম খান ওই  মহিলাকে নিজের বিবাহিত স্ত্রী দাবি করে স্ত্রীর আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে মারধর করেছেন বলে দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাসহ উপজেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। নির্যাতনের শিকার ওই মহিলা মোলাইম খান তার স্বামী নয় বরং তার শ্লীলতাহরণের চেষ্টাকারী উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার শ্বশুর-শাশুড়ি মারা গেছেন। ভাশুর (স্বামীর বড় ভাই) অন্যত্র থাকেন। আমার স্বামী ওমান প্রবাসী এবং আমার তিন মেয়ে। বড় মেয়ে বিয়ে দিয়েছি। আমি আমার দুই মেয়েকে নিয়ে একা বাড়িতে থাকি। তিনি বলেন, আমার চাচা শ্বশুরের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কোর্টে মামলা রয়েছে। মোলাইম খান আমার  দূরসম্পর্কের আত্মীয়। আমি মহিলা তাই চাচা শ্বশুরের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত মামলা পরিচালনার দায়িত্ব তাকে দিই। এজন্য মাঝেমধ্যে আমার বাড়িতে আসতেন। মামলা পরিচালনার জন্য ২০১৫ সালের ২৩শে  মার্চ একই তারিখের কয়েকটি সাদা (লেখাবিহীন) স্ট্যাম্প কাগজে স্বাক্ষর নিতে আসেন মোলাইম। আমি জানতে চাইলে তিনি বলেন মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজে দস্তখত দিতে হবে। আমি সরল বিশ্বাসে সেই সাদা স্ট্যাম্প কাগজে দস্তখত দেই।

কিছুদিন পর মোলাইম আমার স্বামীর কাছে মোবাইলের হোয়াটস্‌অ্যাপে স্বামীকে তালাকের হলফনামার এবং ‘কোর্টম্যারেজের’ কাগজের ছবি পাঠান। আমার স্বামী বিদেশ থেকে ওই হলফনামা কাগজের কথা আমাকে জানান। বিষয়টি আমি মোলাইমকে জিজ্ঞেস করি। পরে  ২০১৫ সালের ২৩শে  মার্চ একই তারিখের দুটি স্ট্যাম্প কাগজে সে প্রতারণার মাধ্যমে আমার দস্তখত নিয়ে (রেজিনং ৭৫৭) কাগজে ‘তালাকনামা’ এবং (রেজিনং ৭৫৮) কাগজে ‘কোর্ট ম্যারেজ’ হলফনামা দেখিয়ে আমাকে তাঁর স্ত্রী দাবি করে। তখন সে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে আমাকে বিভিন্ন সময় শ্লীলতাহানীর চেষ্টা, হয়রানি ও আমাকে মারধরও করে। পরবর্তীকালে ২০শে ডিসেম্বর ২০১৭ সালে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে কোর্ট ম্যারেজ এবং তালাকনামা বাতিলের জন্য এফিডেভিটের (রেজি নং-৪৮২৪) মাধ্যমে আদালতে আবেদন করি। এরপর থেকে প্রায়ই সে আমাকে উত্ত্যক্ত করত। ওই মহিলা বলেন, ঘটনার দিন সোমবার দুপুরের দিকে আমি ফুলতালা বাজারে যাই এবং সেখান থেকে বিকাশে ক্যাশ আউট করে বাড়িতে ফিরে আসি।

মোলাইম আমার পিছু নিয়ে বাড়িতে আসে এবং ঘরে ঢুকে আমার গলায় শ্বাসরোধ করে রাখে। পরে আমার শাড়ি জোরপূর্বক খুলে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে এবং টেনেহিচড়ে ঘরের বাহিরে নিয়ে আমাকে কাঠের লাটি দিয়ে ব্যাপক মারধর করতে থাকে। এসময় আমার মেয়েরা এগিয়ে এলে তাদের ওপর চড়াও হয় এবং মারধর করে। এসময় সে আমার গলায় থাকা এক ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার চেইনও নিয়ে যায়। পরে আমার আত্মীয়স্বজন এসে আমাকে উদ্ধার করে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। আমার সমস্ত শরীরে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন  রয়েছে। থানায় আমি মোলাইম খানকে আসামি করে অভিযোগ করেছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোলাইম খান বলেন, আমার দুই স্ত্রী আছে এবং ওই নারীও আমার স্ত্রী। আমি তাকে কোর্ট ম্যারেজ করেছি। আগের স্বামীর সঙ্গে তার তালাক হয়ে গেছে। ঘটনার দিন তার বাড়িতে গেলে প্রথমে সে আমার ওপরে হামলা চালায়। একপর্যায়ে আমি আত্মরক্ষার্থে তাকে মারধর করি।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ারদৌস হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন মহিলার ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন কোনোভাবেই কাম্য নয়। মোলাইম খান ওই নারীকে পাশবিকভাবে লাঠিপেটা ও নির্যাতন করেছেন। ধর্ষণচেষ্টা ও মারধরের ঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী বাদী হয়ে মামলার পর অভিযুক্ত মোলায়েম খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে ওই নির্যাতনের বিষয়টি শিকার করেছে। বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য বিজ্ঞ আদালতের কাছে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status