খেলা

‘এই জয় বিশ্বকাপের প্রেরণা’

স্পোর্টস রিপোর্টার

১৯ মে ২০১৯, রবিবার, ৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

রাজা রবার্ট ব্রুস ৬ বার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সপ্তমবারের প্রচেষ্টায় জিতেছিলেন। টানা ছয়টি বহুজাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনাল হারার পর কপাল খুললো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলেরও। শুক্রবার ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর মধ্য দিয়ে প্রথমবার কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতলো টাইগাররা। ট্রফি জেতার পর দলীয় অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছেন, ‘এই অনুভূতি অসাধারণ। আমাদের মাত্র শুরু হলো। আশা করি এমন ট্রফি জয়ের ধারাবাহিকতা থাকবে। আমরা ৬ বার ফাইনাল জিততে পারিনি। সপ্তমবারের এসে সফল হলাম। এই মুহূর্তে এর চেয়ে ভালো কোন অনুভূতি আর হতে পারে না। এই জয় আমাদের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে অনুুপ্রাণিত করবে। সেই অনুপ্রেরণায় বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে বিশ্বাস আমার।’ ইংল্যান্ডের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বড় রান তাড়া করতে জিততে হতে পারে বাংলাদেশকে। তবে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রতিটি ম্যাচই পরে ব্যাট করে জিতেছে মাশরাফির দল। ফাইনালে ২৪ ওভারে ২১১ রান লক্ষ্য ছিল। সেটি ৭ বলে হাতে রেখে টপকে গেছে বাংলাদেশ। মাশরাফি আত্মবিশ্বাসী বিশ্বকাপেও এভাবে জয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হবে তার সতীর্থরা। তিনি বলেন, ‘বড় রান তাড়া করার সামর্থ্য যে আমাদের আছে, এই ম্যাচ সেটাই প্রমাণ করেছে। বিশ্বকাপে আমাদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। তবে বিশ্বকাপে বড় স্কোর তাড়া করতে আত্মবিশ্বাস জোগাবে এই জয়।’
এমন একটা ট্রফির জন্য ১০ বছর অপেক্ষা করেছে বাংলাদেশ। খুব কাছে গিয়েও হয়নি বেশ কয়েকবার। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ফাইনালটার কথাই ধরুন। বাংলাদেশের ১৫২ রানের জবাবে ৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল শ্রীলঙ্কা। সেখান থেকে একটা পর্যায়ে লঙ্কানদের স্কোর দাঁড়ায় ১১৪/৮। পরের ঘটনা অনেকেরই জানা। বোলার মুত্তিয়া মুরালিধরন সেদিন হয়ে উঠলেন ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলে জিতিয়ে দিলেন লঙ্কানদের। তিন বছর পর এশিয়া কাপের ফাইনাল। এবার রান তাড়া করতে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গের কান্না। পাকিস্তানের ২৩৬ রানের জবাবে বাংলাদেশ থামলো ২৩৪ রানে। ২০১৬ ও ২০১৮ সালের এশিয়া কাপেও দৃশ্যটা পাল্টায়নি। গত বছর এশিয়া কাপের সঙ্গে ঘরের মাঠ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট ও ভারতের কাছে নিদাহাস ট্রফির শিরোপা হারায় বাংলাদেশ। ব্যর্থতার বৃত্তটা অবশেষে ভাঙতে পারলো বাংলাদেশ। তবে ভয় ছিল। সৌম্য সরকারের চমৎকার ব্যাটিংয়ের পরও দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তবে মাশরাফি আস্থা রেখেছিলেন তার সতীর্থদের উপর। তিনি বলেন, ‘উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো ছিল। তাই লক্ষ্যটা একটু বড় থাকলেও আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল, আমরা পারব।’
বাংলাদেশের নয়া ইতিহাসের রূপকার ওপেনিং ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার ও মিডল অর্ডারে নামা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। সৌম্য সরকার ৪১ বলে ৬৬ রান করে জয়ের ভিত গড়ে দেন। শেষদিকে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেন মোসাদ্দেক। মোসাদ্দেক ২০ বলে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন এই ডানহাতি। শেষ পর্যন্ত ২৪ বলে ২ চার ও ৫ ছক্কায় ৫২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন মোসাদ্দেক। ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন তিনি। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে সৌম্য-মোসাদ্দেককে প্রশংসায় ভাসান মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘চাপের মধ্যে ওরা যেভাবে রান তুলেছে, এটাই ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সৌম্য-মোসাদ্দেকের ইনিংসের তুলনা হতে পারে না।’
ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের (ডিপিএল) দল আবাহনীর অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন। চলতি মৌসুমে নার অধিনায়কত্বে ডিপিএল জিতেছে আবাহনী। ডিপিএল-এ মোসাদ্দেক পারফরম্যান্স মোটামুটি ভালোই ছিল। তবে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে যা খেললেন তা অতুলনীয়। মোসাদ্দেককে এমন বিধ্বংসী চরিত্রতে এই প্রথম দেখা গেল। ২৩ বছর বয়সী এই অফস্পিনিং অলরাউন্ডার জানিয়েছেন, ব্যাটিংয়ে যাওয়ার সময় তাকে সাহস জুগিয়েছিলেন মাশরাফি। ওয়ানডে অধিনায়ক আজ ভোর ৫টায় ঢাকায় পা রেখেছেন। তার সঙ্গে দেশে ফিরেছেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডের বাইরে থাকা চার ক্রিকেটার। মাশরাফির সঙ্গে দুবাই পর্যন্ত এসেছেন তামিম ইকবাল। সেখানে তিনি নিজ পরিবারের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। জানা গেছে, আগামী বুধবার ইংল্যান্ডে রওনা হবেন মাশরাফি। তবে দলের বাকি ১৩ সদস্য ইংল্যান্ডে পৌঁছে গেছেন গতকালই। ২৬ ও ২৮শে মে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দু’টি ওয়ার্মআপ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। আর টাইগারদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হবে ২রা জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status