দেশ বিদেশ

অচল কোচ সচল করে ঈদ যাত্রার ব্যবস্থা রেলের!

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

১৮ মে ২০১৯, শনিবার, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

জরাজীর্ণ অচল কোচ সচল করে ঈদ যাত্রার ব্যবস্থা করছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর বাড়তি চাপ সামলাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা অচল ৭৩টি কোচ মেরামত করে সচল করছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল।  
রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন জানান, ঈদে যাত্রী সেবায় এবার আরো ৭৩টি কোচের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। ঈদে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় বর্তমানে সচল থাকা ৭৩০টি কোচের সঙ্গে যুক্ত হবে আরো ৭৩টি কোচ।
তিনি জানান, গত ১৪ই মে পর্যন্ত ওয়ার্কশপ থেকে পরিবহন শাখায় অচল ২৮টি কোচ সচল হওয়ার পর হস্তান্তর করা হয়। বাকি ৪৫টি কোচ আগামী ৩০শে মে’র মধ্যে হস্তান্তর করা হবে। যেগুলোর পরিবহন শাখায় হস্তান্তর করতে জিইআর শপ, রেজ শপ, হুইশ শপ, ওয়াগন শপ, পেইন্ট শপ, ওয়েল্ডিং শপ, সিএইচআর শপ, স্মিথি শপ, ফাউন্ড্রি শপে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের এক কর্মকর্তা বলেন, পাহাড়তলীর ১১টি ওয়ার্কশপে দীর্ঘদিন ধরে পড়েছিল ৭৩টি জরাজীর্ণ কোচ। যেগুলো দিয়ে এবার ঈদে যাত্রী সেবা দেয়া হবে। নতুনভাবে যুক্ত হওয়া কোচগুলোকে চলাচল উপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
ওই কর্মকর্তা জানান, ঈদে বাড়তি যাত্রী পরিবহনের জন্য বর্তমানে যে ৭৩টি কোচ মেরামত করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এসব কোচ দিয়েই ঈদ যাত্রার ঘাটতি পূরণ হবে।
তিনি আরো জানান, রেলপথে যাত্রীদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এ পথ নিরাপদ ও সাশ্রয় হওয়ায় সাধারণ মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করতে আগ্রহী। সামপ্রতিক বছরগুলোতে রেলওয়েতে নতুন ইঞ্জিন ও কোচ যুক্ত হয়েছে। ট্রেনের টিকিট কাটা আধুনিকায়ন হয়েছে। কিন্তু বাড়েনি যাত্রী সেবার মান।
মোহাম্মদ আমজাদ নামে এক যাত্রী বলেন, আন্তঃনগর ট্রেনের সাধারণ কোচে ভ্রমণ বিরক্তিকর। একে তো পুরনো কোচ, তার ওপর আসনের নিচে ছারপোকার বাসা। টয়লেটের দুর্গন্ধ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক হোসেন জানান, যে ট্রেনগুলোয় কোচের সমস্যা ছিল সেগুলো ঈদের আগেই মেরামত কাজ সমপন্ন করতে ওয়ার্কশপে কাজ চলছে। কোচগুলোর মেরামত কাজ সমপন্ন হলে ঈদের বাড়তি চাপ সামলানো সম্ভব হবে। এবার ঈদে বাড়তি চাপ সামলানোর জন্য অচল পড়ে থাকা কোচ মেরামত করার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর ঈদের আগে শুধু পূর্বাঞ্চলে ৭০ থেকে ৭৫টি কোচ বাড়তি সংযোজন করা হতো। থাকতো বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা। তবে এবারও ঈদ উপলক্ষে থাকছে ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা। কিন্তু সেই অর্থে বাড়তি যাত্রী পরিবহনে রেলের বিশেষ প্রস্তুতি নেই।
এদিকে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ২২শে মে থেকে ঈদের অগ্রিম ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হবে। কমলাপুরসহ ঢাকার ৫টি জায়গা থেকে এ টিকিট দেয়া হবে। প্রতিদিন ঢাকায় প্রায় ২৭ হাজার টিকিট দেয়া হবে, যার অর্ধেক পাওয়া যাবে মোবাইল অ্যাপস থেকে আর বাকি অর্ধেক সংগ্রহ করতে হবে কাউন্টার থেকে। শাহজালাল বিমানবন্দর কাউন্টার থেকে দেয়া হবে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগরের টিকিট।
জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে সাড়ে ৭ থেকে ৮ হাজার এবং কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হয়। কিন্তু এর বিপরীতে এ দুই স্টেশনে অগ্রিম টিকিটের তুলনায় ২ থেকে ৩ গুণ যাত্রী লাইনে দাঁড়ান। কিন্তু অনেকের ভাগ্যে টিকিট জোটে না।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের শিডিউল অনুযায়ী ট্রেনের সঙ্গে যুক্ত হবে এক জোড়া বিশেষ ট্রেন। ট্রেন দুটি চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর এবং চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রাম রুটে চলবে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে ২৫শে মে থেকে।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের পরিবহন ও বাণিজ্য দপ্তর থেকে জানা যায়, চাঁদপুর সেপশাল-১ এবং চাঁদপুর সেপশাল-২ নামে ট্রেন দুটি ২রা জুন থেকে চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর এবং চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করবে। চট্টগ্রাম থেকে দুই বিশেষ ট্রেনের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন রুটে সংযুক্ত করা হয়েছে তিন জোড়া বিশেষ ট্রেন। এসব বিশেষ ট্রেনের নাম দেয়া হয়েছে দেওয়ানগঞ্জ সেপশাল (ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা), মৈত্রী রেল দিয়ে খুলনা সেপশাল (খুলনা-ঢাকা-খুলনা), ঈশ্বরদী সেপশাল (ঢাকা-ঈশ্বরদী-ঢাকা), লালমনি ঈদ সেপশাল (লালমনিরহাট-ঢাকা-লালমনিরহাট), শোলাকিয়া সেপশাল-১ (ভৈরব-কিশোরগঞ্জ- ভৈরব), শোলাকিয়া সেপশাল-২ (ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ) রুটে চলাচল করবে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্র জানায়, আগামী ৫ই জুন ঈদের সম্ভাব্য দিন ধরে নিয়ে দশদিন আগে থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রির দিন ধার্য করা হয়েছে। এরমধ্যে ঈদের পূর্বে পাঁচদিন আপ ঈদের পরবর্তী ছয়দিন ডাউন হিসেবে ঈদের টিকিট বিক্রি হবে।
আগামী ২২শে মে ৩১শে মে’র টিকিট, ২৩শে মে ১লা জুলাইয়ের টিকিট, ২৪শে মে ২রা জুলাইয়ের টিকিট, ২৫শে মে ৩রা জুলাইয়ের টিকিট, ২৬শে মে ৪ঠা জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে। এ ছাড়া ঈদ শেষে ফিরতি অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে ২৯শে মে থেকে। ২৯শে মে বিক্রি হবে ৭ই জুলাই, ৩০শে মে বিক্রি হবে ৮ই জুলাই, ৩১শে মে বিক্রি হবে ৯ই জুলাই, ১লা জুলাই বিক্রি হবে ১০ই জুলাই এবং ৫ই জুলাই বিক্রি হবে ১১ই জুলাইয়ের ফিরতি অগ্রিম টিকিট। ঈদের পাঁচদিন আগে থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনসমূহের কোনো অফ ডে থাকবে না। ঈদ পরবর্তীতে অফ ডে কার্যকর হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status