প্রথম পাতা

ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

১৬ মে ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন

ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাওয়া বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দুপুরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ  সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে গণভবনে ডেকে এ নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। পরে শোভন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের কমিটি থেকে ‘বিতর্কিত’দের বাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী এক সপ্তাহের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করে ‘বিতর্কিত’দের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে কমিটি পুর্নগঠনের দাবিতে গতকালও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন পদ বঞ্চিতরা। মানববন্ধন থেকে তারা নতুন কমিটিতে স্থান পাওয়া বিতর্কিতদের তালিকা প্রকাশের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে বিতর্কিতদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে বলেও তারা জানান।

ওদিকে মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঠাঁই না পাওয়া নেতাদের ওপর পদধারীদের হামলার ঘটনাকে ‘ছোট ও সাধারণ’ বলে মন্তব্য করায় আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের কঠোর সমালোচনা করেছেন সংগঠনটির নেত্রীরা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ সমালোচনা করা হয়। গত সোমবার সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে পদ বঞ্চিতদের সংবাদ সম্মেলনে হামলা ও নারী লাঞ্ছনার প্রতিবাদে এ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগ নেত্রীরা আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আর কত নির্যাতিত হলে তাদের মনে হতো ছাত্রলীগ নারীদের ওপর নির্যাতন হয়েছে- প্রশ্ন ওঠে আমরা মারা গেলে কি প্রমাণ হতো যে এখানে একটি বিশাল ঘটনা ঘটেছে। মানববন্ধনে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরণের প্ল্যাকার্ড বহন করে। যাতে লেখা ছিল- ‘জামাত-শিবির ছাত্রদল অনুপ্রবেশকারীদের কমিটি মানি না’; ‘আমাদের বোনদের উপর হামলা কেন বিচার চাই বিচার চাই’; ‘অবৈধ কমিটি মানি না’; ‘অছাত্রদের আদু ভাইদের কমিটি মানি না’; ‘ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কৃতদের কমিটি মানি না’; ‘বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগে অছাত্রদের স্থান নেই’; ‘চাকুরীজীবী ব্যবসায়ীদের কুটিল কমিটি মানি না’ ইত্যাদি। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন-রোকেয়া হলের সভাপতি বি এম লিপি আক্তার, শামসুন্নাহার হলের সভাপতি নিপু ইসলাম তন্বী, সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, সুফিয়া কামাল হলের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা, সাধারণ সম্পাদক সারজিয়া শারমিন সম্পা, কুয়েত মৈত্রী হলের সভাপতি ফরিদা পারভীন, সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী শায়লা, বঙ্গবন্ধু হলের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, উপস্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ আরাফাত, উপসম্পাদক খাজা খায়ের সুজন, উপ সম্পাদক তিলোত্তামা শিকদার প্রমুখ। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নিপু ইসলাম তন্বী বলেন, আর কতটুকু লাঞ্ছিত হলে তাদের মনে হতো যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নারীদের ওপর নির্যাতন হয়েছে? প্রশ্ন ওঠে-আমরা মারা গেলে কি সত্যতা প্রমাণ হতো যে এখানে একটি বিশাল ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে বলতে আজকে দুঃখ লাগছে ছাত্রলীগের নিবেদিত প্রাণ হিসেবে মধুর ক্যান্টিনের মতো জায়গায় ছাত্রলীগের কিছু ছোট ও বড় ভাই দ্বারা নির্যাতিত হই, এরপরে কোন মা-বাবা, কোন ভাই-বোন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ করার জন্য তাদের সন্তানকে পাঠাবে না। নিপু বলেন, ছাত্রলীগের নারী নেত্রীরা বারবার নির্যাতিত হচ্ছে। আর কত নির্যাতন হলে তাদের টনক নড়বে? আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় লোকদের কাছ থেকে আমরা কবে বিবৃতি পাবো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নারী নেত্রীদের ওপর সত্যিকার অর্থে বিশাল রকমের হামলা হয়েছে। সেটি একটি প্রশ্ন থেকে যায়। রোকেয়া হলের সভাপতি বি এম লিপি আক্তার বলেন, যাদের কমিটিতে রাখা হয়েছে তাদের ২২জন আগে কোনো পদ ছিলো না। অথচ তাদের পদ দেয়া হয়েছে। আমাদের ছোট পদ দেয়া হয়েছে বা আমরা পদ না পাওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না, বরং কমিটিতে মাদক মামলার আসামি, বিবাহিত, অছাত্র, ছাত্রদল, রাজাকারের সন্তানদের পদ দেয়া হয়েছে। এজন্য আমরা আন্দোলন করছি। কবি সুফিয়া কামাল হলের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একটা গঠনতন্ত্র আছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি দেয়া হয়নি। যারা পদ পেয়েছেন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পাননি। তারা বিবাহিত, ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কোনোদিন রাজনীতিতে জড়িত ছিল না, এমন অনেকেই পদ পেয়েছে। যারা কোনো মিছিল-মিটিংয়ে ছিল না তারাও আজ ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে পদ পেয়েছেন। ছাত্রলীগে আজ ফাটল ধরেছে। আমিসহ অন্য হলগুলোর ১৩ জন সভাপতি-সাধারন সম্পাদক পদই পাইনি। আমরা আশাহত হয়েছি।

যথাসময়েই তদন্ত কমিটির ফল প্রকাশ: সোমবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশের পর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের দুইটি পক্ষ। পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ মিছিলের নারী নেত্রীদের লাঞ্ছনার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে হামলা করে পদপ্রাপ্তদের একটি পক্ষ। এতে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত হন প্রায় ১৫ জনের মতো। এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সময় বেধে দেয়া হয় ৪৮ ঘণ্টার। তদন্ত কমিটির অগ্রগতির বিষয়ে কমিটির প্রধান ও নব কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটির ফল প্রকাশ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আমরা কাজ শুরু করেছি। যাদের সঙ্গে কথা বলার তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এটি গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। আশা করি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারব।

বিতর্কিতদের তালিকা প্রকাশের ঘোষণা: এদিকে ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে যারা বিতর্কিত তাদের তালিকা প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে পদবঞ্চিতরা। তারা বলছেন, ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যেসব অপরাধী, বিতর্কিত ও বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে অভিযুক্ত তাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ বিষয়ে সাবেক কমিটির প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু বলেন, আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। যারা বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে অভিযুক্ত এবং বিতর্কিত তাদের বিরুদ্ধে আমরা তালিকা তৈরি করছি। দ্রুতই তা সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেয়া হবে। এদের সংখ্যা শতাধিক বলে জানান সাইফ বাবু।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status