দেশ বিদেশ

বিএনপি নেতৃবৃন্দকে অলি

হয় নেতৃত্ব দেন, নইলে আমাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হোন

স্টাফ রিপোর্টার

১৬ মে ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:২০ পূর্বাহ্ন

বিএনপির নেতৃত্বের ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করে দুঃশাসন হটাতে প্রয়োজনে নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম। তিনি বলেছেন, বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে জেলে থেকে আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া সম্ভব না। তারেক রহমানের পক্ষে লন্ডন থেকে সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকা সম্ভব নয়। সুতরাং আমাদেরকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে এবং আমি সেই দায়িত্ব নেয়ার জন্য প্রস্তুত। বিএনপি নেতাদের অনুরোধ করবো। হয় আপনারা নেতৃত্ব দেন, না হলে আমাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হোন। আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে, বসে থাকলে হবে না। ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি’র দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এলডিপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। অলি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিতে পারিনি, এবার স্বৈরাশাসকের হাতে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। বিএনপির যারা আছেন আপনাদের মধ্যে কথা বলেন। কারা কারা আসবেন আমাদের সঙ্গে আসেন। এলডিপিকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই। আপনারা নতুনভাবে এটার নামকরণ করেন। আমার নেতৃত্বে আসতে হবে এটাও না। আপনাদের মধ্যে যদি কেউ নেতৃত্ব দিতে পারে তার নেতৃত্বেও আমরা কাজ করতে প্রস্তুত। জাতির কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, জাতির সঙ্গে যে বেইমানি করেনি, যার অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং যে কারো সঙ্গে আপস করবে না, দুর্নীতির কাছে মাথানত করবে না- তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে আমার কোনো আপত্তি নেই। অলি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একজায়গায় একত্রিত হোন। আমাদের হাতকে শক্তিশালী করুন। না হলে আপনাদের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদেরকে বলেন, আমরা সেটা করতে রাজি আছি। তিনি বলেন, বিএনপি সংসদে গেছে এবং এই সরকারকে বৈধতা দিয়েছে- এইটাই হলো বাস্তবতা। পেছনের দিকে তাকানোর সুযোগ নেই। আর মধ্যবর্তী নির্বাচন মানে এটা নয় যে, আড়াই বছর পর নির্বাচন দেয়া হবে। এটা কালও হতে পারে, পরশুও হতে পারে। এ ছাড়া খালেদা জিয়াকে মুক্ত যদি নাও করতে পারি তবু আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আন্দোলন হলে, তারপরই খালেদা জিয়া মুক্ত হতে পারবেন। এখন যদি না হয়, অন্যভাবে আমাদের করতে হবে। কিন্তু তার জন্য ঐক্য প্রয়োজন। অলি বলেন, জাতির এখন দুর্দিন চলছে। দেশে গণতন্ত্র নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রের জন্য ১৬ বছর জেলে ছিলেন। তিনিও এই গণতন্ত্র কখনো চাননি, যেখানে বিরোধী দলগুলোকে কোন কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হয় না। সরকারের ইচ্ছায় সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয়। যেখানে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারগারে রাখা হয়। লাখো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। তিনি বলেন, দেশের প্রায় ৭৬ শতাংশ নারী নির্যাতনের সঙ্গে সরকারের সোনার ছেলেরা জড়িয়ে রয়েছে। এটাও উন্নয়ন। তাদের উন্নয়ন জনগণের জন্য নয়। তারা মনুষ্যত্ববিহীনভাবে দেশ পরিচালনা করছে। ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে তারা প্রমাণ করেছে তাদের মধ্যে কোন দেশপ্রেম নেই, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা নেই, বিবেকবোধও নেই। তারা দিনের আলোতে নির্বাচন করে না, দিনের আলোকে ভয় পায়। রাতের বেলা অন্ধকারে স্বচ্ছন্দবোধ করে, যারা নিশাচর। তাই বিএনপিসহ সবাইকে মশাল হাতে নিয়ে বের হতে হবে নিশাচরদের তালাশে। এ সময় তিনি আগামী ৩-৬ মাসের মধ্যে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামবে বলেও মন্তব্য করেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়াকে বের করে আনতে হলে যে সামগ্রিক আন্দোলন প্রয়োজন সেই আন্দোলনের মূল ভূমিকা বিএনপিকেই রাখতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দলের অন্যতম শরিক দল হচ্ছে জামায়াত ইসলামী। তারা যদি সত্যিকার অর্থে খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় তাহলে তাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের জন্য জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে। পূর্বসুরীদের ভুলের জন্য তাদের ক্ষমা চাওয়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। কারণ তাদেরও এদেশে রাজনীতি করার অধিকার আছে। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক বলেন, এই মুহূর্তে ২০দলীয় জোটের কার্যকারিতা অনেক নিচের স্তরে আছে। এটাকে কার্যকর করা হবে কিনা জানি না। কবে হবে বা হবে না তার জন্য বসে থাকলে চলবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমাদের প্রত্যেক দলের কর্মসূচি থাকা দরকার। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, মানুষ আশায় আছে, তাকিয়ে আছে। কবে বের হবেন বলুন। ঠিক করেন, কবে বেরুবেন। ওই দরকষাকষি বাদ দেন, ওইগুলো পরে কইরেন। জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া মোহাম্মদ গোলাম পরওয়ার বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মুক্তির আন্দোলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে সঙ্গে ছিল এবং আগামীতেও থাকবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আর ২০ দলের সবাইকে কৌশলের বিষয়ে স্পষ্ট হতে হবে। জনগণের সঙ্গে রাজনীতি করে বলে তাদের মনোভাবও বুঝতে হবে। আলোচনা সভায় নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বিএনপির অবস্থানের সমালোচনা করেন। সেই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে যা করণীয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। সভায় জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরোয়ার, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি ও আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ বক্তব্য দেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status